Sitaram Yeachury

মোদী বললেন মুজাহিদিন, নেতাজীর আইএনএ মনে করালেন ইয়েচুরি

জাতীয়

বেঙ্গালুরুতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, নেতিবাচকতা দিয়ে এগনো যায় না। বিরোধীরা শুধু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে। মঙ্গলবার সেই তিনিই বিজেপি’র সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরোধী দলগুলির যৌথ মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’কে আক্রমণ করতে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে তুলনা টানলেন। এই বক্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠে গেছে, নেতিবাচকতার রাজনীতি কে করছেন, বিরোধীরা না প্রধানমন্ত্রী?
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এদিন সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন যে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করেছে বিদেশিরা। এখন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্টের মতো নাম রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ উপরে একটা চেহারা দেখানো হলেও, ভেতরটা আসলে ভিন্ন। ‘ইন্ডিয়া’ বলতে মোদী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, নিষিদ্ধ উগ্রপন্থী সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এর কথাই মনে পড়লো কেন, সেই প্রশ্ন তুলে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা।
সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন মোদীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টুইট করে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামে এত ঘৃণা কেন? মোদীর সম্ভবত জানা নেই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি তৈরি করেছিলেন ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারতকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি নর্থ-ইস্টে ‘অ্যা ক্ট ইস্ট’ নীতি কার্যকরী করতে পারছে না। আপনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেখছেন! এই ‘ইন্ডিয়া’ই ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পরাস্ত করেছিল। এই ইন্ডিয়ায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে হারিয়েছে। আপনি মণিপুরে যে বর্বরতা এবং ভয়াবহ হিংসা চলছে তা নিয়ে কবে বয়ান দেবেন? মণিপুরের মানুষের ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে কবে শান্তি ফেরাবেন? বিরোধীরা দেশকে দিশা দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজেই দিশাহীন। উল্লেখ্য, রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান এদিনের বৈঠকে মোদী বলেছেন, আমি এইরকম দিশাহীন বিরোধীদের কখনও দেখিনি। 
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের দিশাহীন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বললেও, বিরোধীদের যৌথ মঞ্চ তৈরি হওয়ার পর থেকেই বিজেপি নেতারাই দিশাহীন, বেলাগাম এবং এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শুরুর দিন থেকে যা বলছেন, তাতে এই প্রথমবার বিজেপি-কে আতঙ্কিত মনে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে এদিন সেই কথাই বলা হয়েছে। লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি বলেছে, চোখ দেখলেই বোঝা যায় আপনার মস্তিষ্কে কী চলছে। এটা অতি লজ্জার যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ‘ইন্ডিয়া’ বলতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন আর পিএপআই’র কথা মনে পড়েছে। ইসরো, ইন্ডিয়ান আর্মি, ইন্ডিয়ান নেভি’র কথা মনে পড়েনি। দলের সাংসদ মনোজ ঝা তীক্ষ্ণ শ্লেষের সঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা তাঁর খুবই ক্ষতি করছে। একটি ভালো অভিধান এবং ইতিহাসের জ্ঞানার্জনের জন্য ভালো বই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রয়োজন। শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেছেন, এটা খুবই দুঃখের যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশ ‘ইন্ডিয়া’কে উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করছেন। আপ প্রধান, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামে এত ঘৃণা কেন প্রধানমন্ত্রীর। 
প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে মণিপুর থেকে নজর ঘোরানোর জন্যেই বিরোধীদের  যৌথ মঞ্চের প্রতি আক্রমণ করা হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই কারণেই বিরোধীরাও মণিপুর প্রশ্নেই অনড় থেকেছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সামনে আসার পরে টুইট করে লিখেছেন, আপনি যে নামেই আমাদের ডাকুন, আমরা ‘ইন্ডিয়া’। আমরা মণিপুরের ক্ষত প্রশমন করতে, প্রত্যেক মহিলা এবং শিশুর চোখের জল মোছাতে সহায়তা করব। আমরা সেখানের সমস্ত মানুষের মধ্যে শান্তি এবং ভালোবাসা ফিরিয়ে আনব। মণিপুরে ভারতের ধারণার  পুনর্নির্মাণ করব আমরা। খাড়গে এদিন রাজ্যসভাতেও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, আমরা মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কথা বলছেন!  টুইটে খাড়গে বলেছেন, ইংরেজদের দাসেরা তো বিজেপি’র পূর্বপুরুষরা ছিলেন। এলোমেলো কথা বলা বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা বন্ধ করুন, বলেছেন খাড়গে।
 

Comments :0

Login to leave a comment