India's Economy

কেন্দ্রের আর্থিক চিত্রের পূর্বাভাসেও অধোগতি তীব্র

জাতীয়

Indias Economy

অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, এবছর ফের ধুঁকছে অর্থনীতি। কমেছে শিল্প উৎপাদনের হার, কমেছে আয়, বাড়ছে বেকারি। সম্প্রতি কেন্দ্রের পরিসংখ্যান দপ্তরের প্রকাশিত তথ্য এই বেহাল চিত্র ধরা পড়েছে। দপ্তর প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে জাতীয় আয় ও বৃদ্ধি নিয়ে আনুমানিক পূর্বাভাসে জানাচ্ছে, ২০২২-২৩সালে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি (জিডিপি)-র হার দাঁড়াবে ৭শতাংশ।

২০২১-২২সালে যেখানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৭শতাংশ। এক বছরে কমছে ১.৭ শতাংশ। বর্তমান আর্থিক বছরে মূলত শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার তলানিতে চলে যাওয়াতে জিডিপি বৃদ্ধির হার দ্রুত কমে চলেছে। এদিকে আর্থিক উন্নত দেশ সহ বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ দেশে চলছে তীব্র মন্দা। তার প্রভাব পড়ছে ভারতের অর্থনীতিতে। এর ফলে দেশের রপ্তানির কমে যাওয়ায় বহু রপ্তানি নির্ভর শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। মহামারীর দুই বছরে স্তব্ধ হয়ে যায় দেশের অর্থনীতি। তা কাটিয়ে সবে শিল্পে উৎপাদনে গতি পেয়েছিল। কিন্ত সেই গতি ধরে রাখা যায়নি। উৎপাদনের বৃদ্ধি হার ফের নিম্নমুখী।
এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা চলতি আর্থিক বছরের পূর্বাভাসে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হারে অধোগতির কথা জানিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তার পূর্বাভাসে জিডিপি বৃদ্ধি হার জানিয়েছে ৬.৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) তার পূর্বাভাসে বৃদ্ধি হার ৭.৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৮ শতাংশ করেছে।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক তা কমিয়ে ৬.৯ শতাংশ করেছে। এডিবি পূর্বাভাসের হার হলো ৭শতাংশ। স্টেট ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসের হার হলো ৬.৮ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বছর জুড়ে চড়া মূল্যবৃদ্ধি, শিল্পে উৎপাদন হ্রাস তার পাশাপাশি দেদার ছাঁটাইয়ে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় আর্থিক বৃদ্ধির হার কমেছে। এদিকে পরিসংখ্যান দপ্তর প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ২০১১-১২সাল ভিত্তি বর্ষের হিসাবে চলতি আর্থিক বছরে মোট মূল্যযুক্তের (জিভিএ) হার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কম বা তা গত বছরের তুলনায় হ্রাস পাবে। যেমন ২০২২-২৩ সালে কৃষিতে এই হার হবে ৩.৫ শতাংশ। গতবছর থেকে তা বাড়বে মাত্র ০.৫ শতাংশ। খনি ও তার সহায়ক শিল্পে এই হার বিপুল কমেছে। চলতি বছরে এই হার হবে ২.৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ১১.৫ শতাংশ।

উৎপাদন শিল্পেও হার কমেছে। তা চলতি বছরে হবে ১.৯ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৯.৯ শতাংশ। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জল সরবরাহ সংক্রান্ত পরিষেবায় এই হার হবে ৯শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৭শতাংশ। নির্মাণ শিল্পে এই হার হবে ৯.১ শতাংশ যা গত বছর ছিল ১১.৫ শতাংশ। হোটেল পরিবহণ এবং যোগাযোগ পরিষেবায় এই বৃদ্ধি হার হবে ১৩.৭ শতাংশ যা ছিল ১১.১ শতাংশ। মোট জিভিএ বৃদ্ধি হার এবছর হবে ৬.১ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৮.১ শতাংশ। 
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জিভিএ বৃদ্ধি হার উল্লেখ করে বলছেন, চলতি বছরে যেমন বৃদ্ধি হার কমছে আগামী বছরেও হার দ্রুত বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই। কৃষি শিল্প উভয় ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হার খুবই কম। কৃষিতে বছরের থেকে জিভিএ বৃদ্ধি হার হলো মাত্র ০.৫ শতাংশ। উৎপাদন শিল্পে এই হার মাত্র ১.৬ শতাংশ যেখানে গতবছর ছিল ৯.১ শতাংশ।


 

কর্পোরেট শিল্প সংস্থাকে উৎপাদন বাড়াতে ভরতুকি হিসাবে কেন্দ্র দফায় দফায় কর্পোরেট কর ছাড় দিলেও উৎপাদন বাড়েনি। তার সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে মন্দা। রপ্তানি বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উলটে ‌রপ্তানি আরও দ্রুত কমবে। বিশ্বের বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানি কমলে দেশে শিল্প উৎপাদনও কমবে। 
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মত, রপ্তানি কমে যাওয়া ছাড়াও দেশে মানুষের আয় কমে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দেশের শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমে তলানিতে চলে যায়। এতে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে। এতে শিল্পে কাজ হারিয়ে বেকারি চড়া হারে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (এনএসও) সমীক্ষায় জানিয়েছে, শুধু অক্টোবর মাসে শিল্পে বৃদ্ধির হারে রেকর্ড হারে অধোগতি ঘটেছে। তা হলো (-) ৪শতাংশ। যেখানে গত বছর অক্টোবরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৪.২শতাংশ। একটি মাসের শিল্পের উৎপাদনে বড় রকমের অধোগতিতে স্পষ্ট সহজে শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়। এই তথ্য উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শিল্পে বৃদ্ধি হার কমে আসায় অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটের আগেই অর্থনীতির সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারকে চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগে বৃদ্ধিতে যে জোর দেওয়া উচিত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে সরকারের এতে কোনও উদ্যোগ আজও চোখে পড়েনি।

এদিকে মোদী সরকারের আমলে কর্পোরেটকে নানা আর্থিক তোফা দিলেও তাদের দেশে বিনিয়োগ সে হারে বাড়েনি। ফলে শিল্পে যে বিকাশ আশা করা হয়েছিল তা এবছর দেখা যায়নি। এবছর মোট কর আদায় হয়েছে ২৭.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা। এতে কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে ৭.২লক্ষ কোটি টাকা। যা মোট করের ২৬ শতাংশ। এদিকে ২০১৩-১৪ সালে কেন্দ্রে মোট কর আদায় হয়েছিল ১১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। এতে কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে ৩.৯ লক্ষ কোটি টাকা। যা মোট করের ৩৪ শতাংশ। ফলে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, কর্পোরেট থেকে কর আদায়ের পরিমাণ ৮শতাংশ হারে কমেছে। কর্পোরেটকে তা ছাড় দেওয়া হয়েছে। কর্পোরেটের দফায় দফায় কর ছাড়ের নামে তোফা মিললেও তাদের এতে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়েনি। পরিণামে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়ে তাতে কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে রেকর্ড হারে বেড়েছে বেকারি।
 

Comments :0

Login to leave a comment