BGBS

শিল্প সম্মেলনে গ্যালারি ভরাতে ভরসা শাসক দলের কর্মীরা

রাজ্য

 বিনিয়োগ নয়, সাড়ে চার হাজার আসনের মিলেনিয়াম কনভেনশন সেন্টারকে কানায় কানায় ভর্তি করাই চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের আসন্ন শিল্প সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকদের। 
এক বছর আগে হওয়া শিল্প সম্মেলন থেকে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, ১৩৭টি শিল্পচুক্তি, ৪০ লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন শুনে ফোন রেখে দিচ্ছেন শিল্প দপ্তরের আধিকারিকরা। উত্তর জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. অমিত মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছেন। রাজনৈতিক দলের বড় সমাবেশের মতোই আধিকারিকরা এখন হলভর্তির জন্য ব্যস্ত। 
মুশকিল আসান করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার ওপর। শিল্পপতি, ব্যবসায়ীতে পূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে শেষ পর্যন্ত ‘ডেডিকেটেড তৃণমূল নেতাকর্মী’দের আনা হবে মিলেনিয়াম কনভেনশন সেন্টারে। সরকারি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কাছে বিলি করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র। ফলে সরকারি আধিকারিক, কর্মচারী, দলীয় কর্মীদের এনে ভর্তি করে দেওয়া হবে কনভেনশন সেন্টার। শিল্প সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাওয়া এক মাঝারি উদ্যোগপতির কথায়,‘‘এবার চূড়ান্ত আগোছালো অবস্থা। এমন শুনতে পাচ্ছি, এর আগে শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা না শুনে খেতে যাওয়ার হুড়োহুড়ির ছবি সমাজ মাধ্যমে চলে আসার পর এবার তাই সরকার কড়া। এমন লোকেদের আনা হবে তারা যেন শেষ পর্যন্ত বসে থাকে।’’
মঙ্গলবার নিউটাউনের মিলেনিয়াম কনভেনশন সেন্টারেই শুরু হতে চলেছে রাজ্যের সপ্তম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট। শিল্প সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টা আগে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠক সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা ও তার কর্ণধারদের জন্য ১১০০ আমন্ত্রণ পত্র ইতিমধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার বাইরে বিদেশি অতিথিদের জন্য সাড়ে ৪০০ আমন্ত্রণপত্র রাখা আছে। প্রদর্শনীর আয়োজকদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০০-র মতো আমন্ত্রণপত্র বিলি করার পরও পড়ে থাকছে প্রায় আড়াই হাজারের ওপর আসন। 
শিল্প সম্মেলনে শিল্প প্রতিনিধিদের এই নগণ্য উপস্থিতি নিয়ে এদিনের বৈঠকেই বেশ কয়েকজন শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলায়, সরকারি শীর্ষ আধিকারিকরা তাঁদের অপরাগতার কথা জানিয়ে দেন। তাহলে কি দর্শকশূন্য থাকবে কনভেনশন সেন্টার? 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্প সংস্থার কর্ণধার জানিয়েছেন,‘‘ আধিকারিকরা আমাদের জানিয়েছেন, দুটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হাতে এবারের শিল্প সম্মেলনের ভার তুলে দেওয়া হয়েছে। তারাই সবটা দেখছে। এ ব্যাপারে আমাদের বিশেষ কিছুই করার নেই।’’ তবে নবান্নের আধিকারিক থেকে রাজ্যের শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি, সকলেই বলছেন, অতীতের থেকে এবারের বিজিবিএস সবকিছুতেই কেমন একটা নিষ্প্রভ। রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে কারা আসছেন তা নিয়ে কোনও মহল থেকে প্রকাশ্যে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। যতটুকু খবর তাতে মঙ্গলবার সকালে কলকাতায় এসে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন হিরন্দনানি গ্রুপের কর্ণধার নিরঞ্জন হিরন্দনানি, গৌতম আদানির পুত্র করণ আদানি সহ বেশ কয়েকজন শিল্পপতি। আম্বানি গোষ্ঠীর তরফে মুকেশ আম্বানি আসতে পারেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের একদল প্রতিনিধি স্পেন সফরে গিয়েছিলেন। স্পেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ আফ্রিকা ও দুবাই থেকে শিল্প সম্মেলনে আসছেন প্রতিনিধিরা। বাইপাস লাগোয়া তিনটি পাঁচতারা হোটেলে বিদেশি প্রতিনিধিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবারের বিজিবিএস’এ সময়েরও যথেষ্ট পরিমাণ কাটছাঁট করা হয়েছে। এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল ৩টায়। এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হবে উদ্বোধন পর্ব। বুধবার শিল্প সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানের কেন্দ্র আবার ভিন্ন। নিউ টাউন ছেড়ে আলিপুরের ধনধান্য স্টেডিয়ামে বিকাল ৪টায় শুরু হবে সমাপ্তি অনুষ্ঠান। সেখানেও সময় বেঁধে রাখা হয়েছে মাত্র ১ ঘণ্টার।
কোভিড পর্ব মিটিয়ে গত ২০২২ সালে এরাজ্যে শিল্প সম্মেলন থেকে কত বিনিয়োগ আসার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি?
২০২২সালের বিজিবিএস আয়োজন করে রাজ্যে ৩লক্ষ ৪২হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিপুল বিনিয়োগ ঘোষণা করে তিনি বলেছিলেন,‘‘এটা সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। ১৩৭টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর আগের পাঁচটা বিজিবিএস টপকে গেছে এবারের বিনিয়োগ।’’ 
সেই ১৩৭টি সমঝোতা চুক্তির মধ্যে কতগুলি বাস্তবায়িত হয়েছে তা জানা যায়নি। প্রস্তাবিত বিনিয়োগের কত রাজ্যে এসেছে তার হিসাব দেওয়ার দায় নেই। তারও আগে ২০১৫ সাল থেকে পাঁচটি শিল্প সম্মেলন আয়োজন করে এইভাবেই লাফিয়ে বেড়েছে বিনিয়োগের অঙ্ক। 
গত বছর ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করার ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ছিল, ‘‘শুধু এবারের বিজিবিএস থেকে নতুন করে ৪০লক্ষ নতুন কাজ তৈরি হবে। বাংলার বেকাররা কাজ পাবে। বাংলা যা শুরু করল, আগামী ১০ বছরের মধ্যে কেউ বাংলাকে ছুঁতে পারবে না।’’
৪০ লক্ষ কর্মসংস্থান নয়, রাজ্যে কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা এখন সরকারি হিসাবেই ৪০ লক্ষ। তাদের নথিভুক্ত করার জন্য এখন ভিনরাজ্যে গিয়ে শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারই।
 

Comments :0

Login to leave a comment