৬০ ঘন্টার ওপর বাবা আটকে সুড়ঙ্গে। অপেক্ষায় ক্লান্ত পুরো পরিবার। মঙ্গলবার বাবা গব্বর সিং নেগির সঙ্গে কথা বলতে পারলেন পুত্র আকাশ।
যে পাইপ দিয়ে আটকে থাকা শ্রমিকদের অক্সিজেন পাঠানো হচ্ছে সেটির মাধ্যমেই কথা হয় পিতাপুত্রের। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে চারধাম প্রকল্পের নির্মীয়মান সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন মোট ৪০ শ্রমিক।
কথা কী হলো বাবার সঙ্গে?
আকাশ বলেছেন, ‘‘বাবা সুপারভাইসরের কাজ করেন। বাবা জানিয়েছেন মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন আটকে থাকা সবার। আর বলেছেন চিন্তা না করতে। জানিয়েছেন যে আটকে থাকলেও কেউ আহত নন। ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের বলছেন বাবা এবং তাঁর সহকর্মীদের বের করতে আর কয়েকঘন্টা লাগবে।’’
গব্বর সিং নেগি উত্তরাখণ্ডের কোটদ্বারের বাসিন্দা। সুড়ঙ্গে যেখানে উদ্ধারের কাজ চলছে, সেখানে রয়েছে তাঁর ভাই মহারাজও। তিনি বলছেন, নির্মাণ শিল্পে গত ২২ বছর ধরে জড়িত দাদা।
চারধাম প্রকল্পেই কাজ চলছিল উত্তরকাশীর এই এলাকায়। সিল্কিওয়ারা এবং দন্দলগাঁওকে জুড়ে দেওয়ার জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়া চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমে ৪.৫ কিলোমিটার হবে।
রবিবার ভোটে এই সুড়ঙ্গেই ধস নামে। মুখের ২০০ মিটার দূরত্বে বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা। কংক্রিটের চাঙড়, পাথর আর কাদামাটিতে বুজে রয়েছে রাস্তা। প্রশ্ন উঠেছে, হিমালয়ের বুকে ভারী পরিকাঠামো আর কত বিপদ ডেকে আনবে?
উত্তরকাশীতে চারধাম প্রকল্পের সুড়ঙ্গে ধসের পর ফের উঠছে এই প্রশ্ন। ধসে আটকে রয়েছেন বাংলার তিন শ্রমিকও।
চারধাম প্রকল্পে উত্তরাখণ্ডে পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের আকর্ষণের চারটি কেন্দ্রকে হাইওয়ে দিয়ে জুড়ে দেওয়া হবে। কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী। তার জন্য পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গও করতে হবে।
কিন্তু হিমালয়ের বুকের এই অঞ্চলে ভারি পরিকাঠামো তৈরি নিয়ে আপত্তি উঠেছে বারবারই। বিভিন্ন এলাকায় ধস নেমেছে, বাড়ি বাড়ি ভাঙন ধরেছে। যোশীমঠে পরপর বাড়িতে ফাটল ধরেছিল। তার পিছনেও হিসেব না রেখে এমন পরিকাঠামোর কাজকেই দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গত আগস্টে সুপ্রিম কোর্টও প্রশ্ন তুলেছে আর কত বনাঞ্চল ধ্বংস করে পরিকাঠামোর কাজ চলবে। বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগের প্রস্তাবও দেয় শীর্ষ আদালত। তবে কাজ এগোয়নি।
একদল সমীক্ষক বলছেন, কেবল এই চারধাম জাতীয় সড়কের জন্য ধ্বংস হবে ৮২৫ বর্গ কিলোমটার আয়তনে ছড়িয়ে থাকা অরণ্য। গাছ যত কমছে, মাটি ধরে রাখার ক্ষমতাও কমছে ভূপ্রকৃতিতে। দ্রুত নামছে ধস।
Comments :0