Abhishek Banerjee Supreme Court

গ্রেপ্তারের শঙ্কা অভিষেকের, ফের ছুটলেন সুপ্রিম কোর্টে

রাজ্য

Abhishek Banerjee Supreme Court


মাত্র একবারের ‘নির্যাস শূন্য’ জেরার পরেই এবার রাজ্যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় ভুগছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো, সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও তৃণমূলের শীর্ষনেতার এই ভয়ের কথা জানানো হয়েছে!
  নিয়োগ দুর্নীতির প্রথম জেরার পরেই কার্যত গ্রেপ্তারির আতঙ্কে অভিষেক ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ, আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সোমবার অভিষেক ব্যানার্জির তরফে সেই কথাই জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে।
  নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে গত ২০ তারিখেই প্রথম সিবিআই জেরার মুখে পড়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। সাড়ে নয় ঘণ্টার জেরা শেষে বাইরে বেরিয়ে প্রবল ‘আত্মবিশ্বাসী’র ঢঙে সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন—‘এই জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস শূন্য। যারা ডেকেছে তাঁদের সময় নষ্ট, আমারও সময় নষ্ট। ৯০ শতাংশ প্রশ্নই বোগাস।’ শুধু তাই নয় নিজাম প্যালেসে রীতিমত মাইক হাতে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন ‘বারেবারে বলছি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে, তথ্য পেলে সেটা জানান। বারেবারে ডাকতে হবে না। বলবেন, হাঁটতে হাঁটতে নিজেই ফাঁসির মঞ্চে চলে যাবো। কয়লা, গোরু, নারদকাণ্ডের পরে এসএসসিকাণ্ডেও একই কথা বলছি।’

  যদিও প্রথমবারের সেই ‘সময় নষ্ট’ জেরার পরেই এবার সিবিআইয়ের তরফে যাতে কোনও ‘কড়া পদক্ষেপ’ না নেওয়া হয় তার জন্য আবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি। এর আগে জেরা ঠেকাতে আদালতে গিয়েছিলেন, এখন জেরার পরে গ্রেপ্তারি ঠেকাতে রক্ষাকবচের আবেদন!
 ‘নিজেই হেঁটে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলব’, ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়ব’— এমন সব অপরিণত, হালকা চালের কথা সাংবাদিক বৈঠকে বললেও নিজেরা জেরা আটকাতে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট ছুটেছেন সব জায়গায়, বিপুল টাকায় বড় বড় আইনজীবীদের মাঠে নামাতে হয়েছে।

 এবার নিয়োগকাণ্ডের প্রথম জেরার পরেই ফের রক্ষাকবচের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। যদিও রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুর হয়নি, শুক্রবার শুনানি হবে। ফলে শুক্রবার পর্যন্ত ফের তলব এবং তলব শেষে গ্রেপ্তারিতে আইনি কোনও বাধা থাকছে না, আগেও ছিল না। তাহলেও এই তিনদিনের মধ্যেই ফের কি তলবের পথে হাঁটবে সিবিআই? সিবিআইয়ের একটি সূত্রের দাবি, সুপ্রিম কোর্টে মামলার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
 গত শনিবার সকালে সিবিআই জেরায় হাজিরা দিতে যাওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের করেন অভিষেক ব্যানার্জি। মূলত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে রায় বহাল রেখেছেন অমৃতা সিনহা সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক। কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেককে সিবিআই বা ইডি জেরা করতে পারে বলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছিলেন তা বহাল রাখার পাশপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহা আদালতে সময় নষ্ট করার অভিযোগে একই সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জি ও কুন্তল ঘোষকে ২৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছিলেন। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেও আলাদা ভাবে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে অভিষেক ব্যানার্জির তরফে।

  সোমবার সেই মামলার শুনানিতেই অভিষেক ব্যানার্জির তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এদিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সঞ্জয় কারোলের বেঞ্চের সামনে সওয়ালে বলেন, সিবিআই কোনও রকম সময় না দিয়েই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করছে। এর আগেরবার অভিষেককে যখন ডাকা হয়েছিল তখন তিনি দার্জিলিঙে ছিলেন। তড়িঘড়ি চলে আসতে বাধ্য হন। এরপরও গত ২০ তারিখে ফের ডাকা হয়। তখন তিনি দলীয় কর্মসূচির জন্য কলকাতার বাইর ছিলেন, বাঁকুড়ায় ছিলেন। বার-বার তলব করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরার নামে হেনস্তা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানান তিনি। এরপরেই ইডি-সিবিআই যাতে কোনও কঠোর পদক্ষেপ তাঁর বিরুদ্ধে না নেয় সেই আরজি জানিয়ে অভিষেক ব্যানার্জির জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্ষাকবচের আবেদন জানানো হয়। 
  এই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিষেক ব্যানার্জির তরফে অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির কাছে বলেন, অভিষেক ব্যানার্জি আশঙ্কা করছেন, পরের বার তাঁকে তলব করে ডাকা হলে গ্রেপ্তার করা হবে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সাড়ে নয় ঘণ্টা জেরার পরে সিবিআইয়ের যাবতীয় জেরা প্রক্রিয়াকে ‘বোগাস’, ‘অশ্বডিম্ব প্রসব হয়েছে’—এমন সব মন্তব্য করার পরে দ্বিতীয় বারের তলবেই গ্রেপ্তারি আশঙ্কায় ভুগছেন কেন অভিষেক ব্যানার্জি? তবে কি সাড়ে নয় ঘণ্টার প্রথম জেরাতেই বিপদের আঁচ পেয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি?
    তবে এদিন অভিষেক মনু সিংভি দাবি করছিলেন, এর আগে যখন তলব করা হয়েছিল তখন তিনি দার্জিলিঙে ছিলেন। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই ১৭ এপ্রিল তলবের নোটিস পাঠালেও সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ থাকায় পরে সেই নোটিস প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সিবিআই। তলব করা হয়নি। নিয়োগকাণ্ডে সিবিআই’র আগে কখনই তলব করেনি তাঁকে। কয়লা পাচারকাণ্ডে ইডি একবার কলকাতায় দুবার দিল্লিতে তাঁকে জেরা করেছিলেন। শেষ জেরা হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর, কলকাতায়। তখন তিনি দার্জিলিঙে ছিলেন না। ফলে দার্জিলিঙে থাকা অবস্থায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সিবিআই নিয়োগকাণ্ডে তলব করেছিল, এমন কোনও তথ্য মেলেনি।

    এদিন শীর্ষ আদালতে অভিষেক ব্যানার্জির এই রক্ষাকবচের আরজি জানিয়ে দ্রুত শুনানির আবেদনও করা হয়। তবে আদালতের তরফে সিবিআই বা ইডি এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না এমন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ফলে রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুর হয়নি। দ্রুত শুনানির আবেদনও খারিজ হয়েছে। আগামী শুক্রবার এই মামলা শোনা হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সঞ্জয় কারোল।
কয়লা পাচার থেকে নিয়োগ দুর্নীতি— বারংবার তদন্তে তাঁর নাম এলেই তিনি নিজেই হাঁটতে হাঁটতে ফাঁসিতে ঝুলে যাবেন বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘বাইট’ দিলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে তলব ঠেকাতের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।


  কুন্তল ঘোষের চিঠি মামলায় জেরা এড়াতেও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ঐ বেঞ্চ থেকে মামলা সরে যায়। তখন কার্যত বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে শাসক তৃণমূল, সরাসরি আক্রমণ করা হয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। পরবর্তীতে দেখা যায় হাকিম বদলালেও হুকুম বদলায়নি। মামলা বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে স্থানান্তর হওয়ার পরে তিন দফায় শুনানি শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল থাকে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ফের ডিভিসন বেঞ্চে যান অভিষেক ব্যানার্জি, যদিও দ্রুত শুনানির আবেদন নাকচ হয়ে যায়। জেরায় বসতেই হয় তাঁকে। তারপরেই এবার বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন অভিষেক।


 

Comments :0

Login to leave a comment