Lalbazar

ডেকে পাঠানো হলো ১০০ জনকে: তীব্র প্রতিবাদ সেলিমের

রাজ্য

দুষ্কৃতীদের ধরতে নয়, প্রতিবাদের গলা চেপে ধরতে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ।

গত ১৪ আগস্ট রাতে পুলিশ হাসপাতাল চত্বর থেকে আগে সরে গিয়ে বহিরাগতদের হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে সাহায্য করেছে। আর তা নিয়ে নানা খবর ও ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় কলকাতা পুলিশ এখন উঠে পড়ে লেগেছে তা সামলাতে। সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত সেই সব খবরকে ‘ভুয়ো খবর’ বলে চিহ্নিত করে ১০০ জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে।

বুধবার, স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে রাজ্যের সর্বত্র ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’ আহ্বানে আর জি কর হাসপাতালের বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন বাম-যুব সংগঠনের কর্মীরা। তাঁরা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ট্রেনি চিকিৎসকের নৃশংস খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করার দাবি তুলেছেন। সেই সময়েই তৃণমূলের পাঠানো দুষ্কৃতীরা হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে। সেই দুষ্কৃতীদের সবাইকে এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। কিন্তু যারা খুনী-ধর্ষকের গ্রেপ্তার চেয়েছে, সেই সংগঠনগুলির ৭ জন নেতাকে কলকাতা পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁরা হলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, ভারতের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সহ সম্পাদিকা দীপু দাস, এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, এসএফআই’র কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি বর্ণনা মুখার্জি, সম্পাদক দীধিতী রায়, ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি বিকাশ ঝা, সম্পাদক পৌলবী মজুমদার। আরও একজনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিন্তু তাঁকে নোটিস দেওয়া হয়নি।

এদিন এই প্রসঙ্গে শনিবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, মহিলা সমিতিকে ধমকাচ্ছেন। পুলিশ তাই ওদের ডেকে পাঠাচ্ছে। মোর লয়াল দ্যান দ্য কুইন। হামলা তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা করেছে। পুলিশ তাদের ধরছে না কেন? ভিতরে যারা হামলা করল, তাদের না ধরে বাইরে প্রতিবাদ করছিল, তাদের ডাকছে কেন ?’’ বর্ধমানে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, ‘‘রাজ্যে এখন জঙ্গলরাজ চলছে। আর জি করের ঘটনায় বিচার আদায় করতেই সারা রাজ্যের মহিলারা স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন রাতে রাস্তায় নামেন। সেই দাবির পাশে ছিল এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিও। রাজ্যের মানুষ চাইছেন খুনী, ধর্ষকদের শাস্তি হোক। কিন্তু পুলিশ নির্যাতিতার দেহ লুকিয়ে রেখে, সিসিটিভি ফুটেজ লোপাট করে, গুন্ডা দিয়ে তথ্যপ্রমাণ ভাঙচুর করেছে। পুলিশ হাসপাতাল রক্ষা করতে পারে না লুকিয়ে বাঁচতে চায়। সেই পুলিশ আমাদের ডেকেছে। আমরা আইনজীবীদের কাছে পরামর্শ নিয়ে তারপর যাবো।’’  

আর জি করের ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় ‘ভুয়ো তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে কলকাতার দুই প্রবীণ চিকিৎসককেও তলব করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এঁদের মধ্যে এক চিকিৎসক দাবি করেছিলেন যে, ঘটনাস্থল থেকে না কি ১৫০ গ্রাম সিমেন পাওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সে কথার উল্লেখ রয়েছে। ওই চিকিৎসক এই তথ্য কোথা থেকে পেলেন, তা জানতে চাওয়া হবে। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, কোনও ভুয়ো পোস্ট দেখলেই নোটিস পাঠাবে লালবাজার। 

এদিকে বুধবার রাতে হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে ঘটনায় ধৃতর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩০। এদিন যে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অন্যতম তৌফিক পরিচিত তৃণমূল কর্মী। 

তবে লালবাজার প্রতিবাদ দমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নবান্নের নির্দেশে। এদিনও তারা কয়েকজন প্রতিবাদী চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার সকালে ৮ জন ‘ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার’কে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে ভুয়ো খবর প্রকাশ করতে বারণ করা হয়েছিল। 

এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য, ‘‘আমার গলার স্বর, ছবি ব্যবহার করে এআই দিয়ে ভিডিও তৈরি করা হচ্ছে। সেসব সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনার এখন নিজেদের ত্রুটি ঢাকার চেষ্টা শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত, আগেই পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ভুয়ো খবরের জেরেই আর জি করে বহিরাগতরা হামলা করেছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment