দ্বিতীয় দফায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যে ভোটদানের হার ৭১.৮৪ শতাংশ।
৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২১টি রাজ্যের ১০২টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় ১৩ রাজ্যের ৮৯ আসনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ৩ কেন্দ্র দার্জিলিঙ, রায়গঞ্জ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভোট নেওয়া হয়েছে এই দফায়।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যের তিন কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭১.৮৪ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এদিন বিকেল পাঁচটা প্রর্যন্ত বালুরঘাটে ভোট পড়েছে ৭২.৩০ শতাংশ। দার্জিলিঙে ৭১.৪১ শতাংশ। রায়গঞ্জে ভোট পড়েছে ৭১.৮৭ শতাংশ।
তিন কেন্দ্রেই তৃণমূল এবং বিজেপি’র চোখে চোখ রেখে লড়ে গিয়েছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা। কংগ্রেস কর্মীরাও সক্রিয় থেকেছেন সারাদিন।
দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রের সারি দিয়ে ভোট দেয় জনতা। প্রখর রোদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুক্রবার সকাল সকাল ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভোটাররা। শিলিগুড়ি পৌর এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ডই মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্র, উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া বিধানসভার কয়েকটি বুথে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া কোন বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। দার্জিলিঙ পার্বত্য অঞ্চলেও এদিন নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। দার্জিলিঙ, কার্শিয়াঙ ও কালিম্পঙেও সুষ্ঠভাবে ভোট প্রক্রিয়া চলেছে।
পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন বুথ পরিদর্শন করেছেন দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ড. মুনীশ তামাঙ। নির্বাচন শেষে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
এদিন শিলিগুড়িতে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন ভোটের লাইনে দাঁড়ানো মানুষকে প্রভাবিত করার অভিযোগে শিলিগুড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সমাজকল্যান বাল্মীকি বিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূল ও বিজেপি বচসায় জড়িয়ে পড়ে। যদিও পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শিলিগুড়ির গার্লস স্কুলের ১৭৪ নম্বর বুথে ভিপিপ্যাড খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভোটদানে বিঘ্ন ঘটে। সাময়িক ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। শিলিগুড়ির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের টিকিয়াপাড়া ময়দান সংলগ্ন বুথে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে দলীয় স্লোগানকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। শিলিগুড়ি ৭নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে অশান্তি হয়। একেবারে শেষ বেলায় শিলিগুড়ি এসএফ রোড সংলগ্ন হিন্দি হাই স্কুলেও তৃণমূল ও বিজেপি বিবাদে জড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
নকশালবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লক এলাকার বিভিন্ন চা বলয়ে সকাল থেকেই ভোটের লাইনে ভিড় জমান বাগিচা শ্রমিকেরা। ভুয়ো ভোটারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয় নকশালবাড়ির ২৫/৭৭ নম্বর বুথে। বাগডোগরার বাসিন্দা আসমা খাতুন শুক্রবার নকশালবাড়ির দক্ষিণ তোতারাম জোত ভইসাহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি জানতে পারেন তাঁর ভোট অন্য কেউ দিয়েছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় নকশালবাড়ি থানার পুলিশ ও সেক্টর অফিসার। সেক্টর অফিসার পরে টেন্ডার ভোটের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভুয়ো কার্ড বানিয়ে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে বাগডোগরাতে। বাগডোগরার কেদারনাথ প্রাইমারি স্কুলে ২৫/৩৯নম্বর বুথে পুষ্পা শর্মা নামে এক মহিলা ভোট দেবার ভোট দিতে বুথে প্রবেশ করতেই জানতে পারেন তাঁর ভোট হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই মহিলা। মাটিগাড়ার ১৬৪ নম্বর বুথে ভিভিপ্যাট খারাপের জন্য কিছুসময় ভোটগ্রহণ বন্ধ থেকেছে। ফাঁসিদেওয়ার নিকরগছ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৭/১৬৩ নম্বর বুথে ইভিএম মেশিন খারাপ হয়ে যায়। দেড় ঘন্টা বন্ধ থাকার পরে ভোটগ্রহণ স্বাভাবিক হয়। দার্জিলিঙে এদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৭১. ৪১ শতাংশ ভোট পড়ে।
রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে দুই একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রচন্ড রোদ ও তাপপ্রবাহকে উপর উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ভিড় জমান। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার ১৭ লক্ষ ৯০ হাজার ২৪৫ জন। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ৭৩০টি বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে ২৩৬টি। অতি-স্পর্শকাতর বুথ ২১০টি থাকলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বহুদিন পর আমরা রক্তক্ষরণহীন ভোট দেখলাম। দু একটি জায়গায় অশান্তি হলেও নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। রায়গঞ্জে আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী’’।
এদিন নাতির মটরসাইকেলে করে ছেলের কোলে চেপে ভোট দিতে গেলেন ১০৯ বছরের বৃদ্ধা খাদোসরী সিংহ। ভোট দেন চোপড়া ব্লকের আমবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ নম্বর বুথে। বেশ ক'দিন অপেক্ষা করার পরেও কেউ ভোট নিতে কেউ আসেনি। তাই এদিন সকালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বুথে গিয়ে নিজের গণতান্ত্রীক অধিকার প্রয়োগ করলেন। বৃদ্ধার ছেলে হেমন্ত সিংহ আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘বাড়িতে ভোটের ব্যাপারে কেও বলতে আসেনি সেকারণে বুথে আনতে বাধ্য হলাম’’।‘
রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট কংগ্রেস প্রার্থী আলী ইমরান রামজ ওরফে ভিক্টর শুক্রবার সকালে চাকুলিয়া থানার বিনারদহ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট দেন। তিনি বলেন, ‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২৭ দিনে শাসক দল ৫৬ জন নিরীহ মানুষকে খুন করেছে। সুতরাং খুন করা শাসকদলের রক্তে বিরাজমান। এবারের নির্বাচনে শিক্ষিত কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা সুষ্ঠুভাবে ভোট পালন করেছেন। তাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করবো সম্পন্ন হয়েছে। জয়ের ব্যাপারে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
এদিন চোপড়ার বেশ কিছু বুথ দখলের অভিযোগ জানানো হলেও দুপুর পর্যন্ত দেখা মেলেনি জওয়ানদের। এদিন থেকে তৃণমূলের বিধায়কের কব্জায় ছিল চোপড়ার বেশ কিছু বুথ। অভিযোগের পর অভিযোগ জানানোর পরেও বুথ দখলের জন্য জড়ো হয়েছে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বেলা ২টো নাগাদ চোপড়া বিধানসভার ১৭৬-১৭৭ নম্বর বুথে হঠাৎ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা দৌড়ে এসে লাঠি চার্জ শুরু করে। ছন্নছাড়া হয়ে যান সাধারণ ভোটাররা। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা অবশেষে এলাকা থেকে দৌড়ে পালায়। দাসপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৬ ও ৯৬ ক বুথ দখল করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। ওই দুই বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, ‘ইসলামপুর ব্লকের আগডিমটি খুন্তি অঞ্চলে ৫৭ এবং ৫৮ নম্বর বুথ দখল নিয়েছিল তৃণমূল। অভিযোগ জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। অথচ বুথের চারপাশে তৃণমূলের ব্লক সভাপতির আশ্রিত দুষ্কৃতীর দল তাদের ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে’’। এদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৭১. ৯৪ শতাংশ ভোট পড়ে।
শুক্রবার ভয় ভীতির আবহ থেকে মুক্ত হলো না বালুরঘাট লোক সভার অন্তর্গত বিভিন্ন বুথ। ভোটের আগের দিন রাত থেকেই বিভিন্ন ব্লকের বুথে বামফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্টদের বুথে না যাওয়ার ফরমান জারি করে শাসক দল ও কিছু এলাকার বিজেপি কর্মীরাও। খবর যায় বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের কাছে। তবে ভোটের দিন সকালেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপির চোখে চোখ রেখে বামফ্রন্ট প্রার্থীর হয়ে বিভিন্ন বুথে এজেন্টের ফর্ম পূরণ করে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার রাতেই হরিরামপুর, গঙ্গারামপুর, কুমারগঞ্জ, প্রানসাগর, তপন সহ আরো কয়েকটি ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে বামফ্রন্ট এজেন্ট যাহাতে বুথে পৌঁছাতে না পারে তার জন্য ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে শাসক দল। এমনকি বুথের বাইরে নির্দিষ্ট এলাকাতে বামফ্রন্ট প্রার্থীর কর্মীরা যাতে বসতে না পারেন তার জন্যও বাধা সৃষ্টি করে। তবে ধৈর্য্য ও সাহস দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ বুথেই কর্মীরা সাহায্য করেছে আগত ভোটারদের ক্রমিক নম্বর সহ তথ্য জানাতে। এদিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৭২.৩০ শতাংশ ভোট পড়ে।
lok sabha elections 2024
তিন কেন্দ্রেই চোখে চোখ রেখে লড়ে গেলেন বামফ্রন্ট কর্মীরা
×
Comments :0