ADANI HINDENBURG REPORT

জাতীয়তাবাদের মোড়কে প্রতারণা আড়াল করা যায় না

জাতীয়

Adani hindenburg report lic bengali news

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক বিনিয়োগ ও শেয়ার লেনদেন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে রবিবার আদানি গোষ্ঠী ওই রিপোর্টকে ‘ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। হিন্ডেনবার্গের তরফে পালটা প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদের নাম করে প্রতারণা আড়াল করা যায় না।

আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্টে হিন্ডেনবার্গ অভিযোগ করেছে, বিদেশে শিখণ্ডী সংস্থা খাড়া করে বেআইনি অর্থ লেনদেন করছে আদানিরা। এইরকম অসংখ্য শিখণ্ডী সংস্থা খোলা হয়েছে মরিশাস, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। এই কায়দায় তারা নিজেদের শেয়ারের দাম কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়েছে। বাস্তবে গুরুতর আর্থিক ঝুঁকির মুখে আদানিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আদানি গোষ্ঠীর তরফ থেকে রবিবার রাতে ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি উত্তর দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসাবে চালিয়ে দেবার চেষ্টাও করে। আদানিদের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত আক্রমণই শুধু নয়,ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ। ভারতের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, সততা, উৎকর্ষতার ওপরে এবং ভারতের বিকাশ ও আকাঙ্ক্ষার ওপরে আক্রমণ।

 
হিন্ডেনবার্গ নিজেদের রিপোর্টের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, প্রতারণাকে জাতীয়তাবাদী পতাকায় মুড়ে আড়াল করা যাবে না। প্রতারণা প্রতারণাই। আমরা মনে করি ভারত সজীব গণতন্ত্র এবং আকর্ষণীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে এক মহাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। আদানি গোষ্ঠী ভারতের এই ভবিষ্যৎকে পিছনে টেনে ধরছে। আদানি গোষ্ঠী ভারতের পতাকা জড়িয়ে পরিকল্পিত ভাবে দেশকে লুট করছে।

হিন্ডেনবার্গ বলেছে, আদানিদের ৪১৩ পৃষ্ঠার উত্তরের বড়জোর ৩০ পাতা আমাদের রিপোর্ট সম্পর্কে। বাকি পাতায় অত্যন্ত সাধারণ বিবরণ এমনকি আদানিদের অপ্রাসঙ্গিক কর্পোটেট উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। আমাদের উত্থাপিত ৬২ টি প্রশ্নের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি।

 
বিদেশে শিখণ্ডী সংস্থার লেনদেন ছাড়াও আদানিদের বিরুদ্ধে দেশের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে তাদের সংস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অস্বাভাবিক শেয়ার কেনা নিয়ে। জীবনবিমা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক আদানিদের শেয়ার কিনেছে, মূল্য বাড়াতে সাহায্য করেছে। পরিণতিতে গত কয়েকদিন ধরে আদানিদের শেয়ারে ধস নামায় বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। সোমবারও শেয়ারে ধসের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে সোমবার পর্যন্ত আদানিদের সংস্থাগুলির মিলিত লোকসানের পরিমাণ ৫.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা। এদিন আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারের মূল্য কমেছে ২০ শতাংশ, আদানি গ্রিন এনার্জির ১৯.৯৯ শতাংশ, আদানি ট্রান্সমিশনের ১৪.৯১ শতাংশ, আদানি পাওয়ারের ৫ শতাংশ, আদানি উইলমারের ৫ শতাংশ, এনডিটিভি’র ৪.৯৯ শতাংশ।

এদিকে, গত কয়েকদিনে জীবন বিমার লগ্নী নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সোমবার এলআইসি জানিয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিতে তাদের মোট ইকুইটি ও ঋণের পরিমাণ ৩৬,৪৭৪ কোটি টাকা। ২০২২-এর ৩১ ডিসেম্বর ছিল ৩৫,৯১৭ কোটি টাকা। এলআইসি-র হাতে থাকা আদানিদের শেয়ারের মোট বাজার মূল্য ৫৬,১৪২ কোটি টাকা। এলআইসি-র মোট বিনিয়োগের ১ শতাংশেরও কম বিনিয়োগ করা হয়েছে আদানিদের সংস্থায়। ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে এলআইসি-র মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪১.৬৬ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু আদানিদের কোন কোম্পানিতে এলআইসি’র শেয়ার ও বিনিয়োগ কত, তা জানানো হয়নি। আদানিদের সদ্য শুরু হওয়া এফপিও-তেও ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এলআইসি।


 

Comments :0

Login to leave a comment