Dengue Death

শিলিগুড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু

রাজ্য জেলা

ডেঙ্গু আক্রান্তের ৯ বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল উত্তরবঙ্গ থেকে। চলতি বছরে শহরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শিশুর প্রথম মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ওই শিশু জ্বর ছিল। সেই জ্বরের প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে চলায় তাকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার হিলকার্ট রোডের একটি নার্সিংহোমে জায়না খাতুন নামে ওই শিশুটির মৃত্যু হয়। 
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ৭নম্বর ওয়ার্ডের স্বামীনগর এলাকার বাসিন্দা। বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলো শিশুটি। ডেঙ্গি এনএস ১ পরীক্ষায় শিশুটির রক্তের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিলো। শিশুটির শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটায় শনিবার তাকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। তার প্লেটলেট ক্রমশই কমতে শুরু করে। দশ হাজারের নীচে নেমে যায়। এরপরে প্লেটলেট দেওয়া হলেও, রবিবার নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই শিশুটির মৃত্যু হয়। 
শিলিগুড়ি পৌর এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনায় শহর জুড়ে চাপা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। শহর জুড়ে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এরই মাঝে প্রথম মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডেঙ্গু আক্রন্তের সঠিক তথ্যও প্রকাশ্যে আনছে না কর্পোরেশন। সঠিক তথ্য জানতে না পারায় সাধারণ মানুষ সজাগ হতে পারছে না। মৃত্যুর তালিকা যাতে দীর্ঘ না হয় সেই লক্ষ্যে কর্পোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি উঠেছে। শিলিগুড়ি ৭নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গোটা এলাকা মুখ ঢেকে রয়েছে আবর্জনার স্তূপে। জায়গায় জায়গায় বর্ষায় বৃষ্টির জম জমে রয়েছে। নিকাশী ব্যবস্থা, এলাকা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার কোন বালাই নেই। শুধু শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকাতেই নয়, শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সূত্রের খবর, রবিবার পর্যন্ত ৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। 

জঞ্জালের স্তুপে ভরে রয়েছে মৃতার বাড়ির সামনে বিবেকানন্দ রোড ও হাইড্রেন। ছবি- রাজু ভট্টাচার্য।


কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাতে ডেঙ্গু সহ মশা বাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন বেসরকারি তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাস থেকে ধরলে জুনের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। বর্ষার সূচনা লগ্ন থেকে এখনও প্রর্যন্ত এই সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায় গোটা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে দেড় হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। 
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পরিস্কার জমা জলে ডেঙ্গু মশা যেহেতু ডিম পাড়ে সেহেতু অল্প স্বল্প বৃষ্টিপাত এই মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক। বিভিন্ন নালা নর্দমার ভাঙা অংশ, নির্মিয়মান বা পরিত্যক্ত বাড়ির আশেপাশের কোনো পাত্র, বাঁশ, শোলা বা ডাবের খোলা, টায়ার- এগুলিতে মশা ডিম পেড়ে রাখে। তোড়ে বৃষ্টি হলে ডিম বা মশার লার্ভা বেরিয়ে চলে যায়। কিন্তু অল্প স্বল্প বৃষ্টিতে তা হয় না। তাদের পরামর্শ বর্ষার শুরু হতেই রাতে মশারি টাঙিয়ে শোয়া এবং বাড়িতে জল না জমতে দেওয়া। 
এদিন মৃত শিশুর বাবা মহম্মদ লাল বলেন, ‘‘জ্বরে ভুগছিলো। পরীক্ষা করার পর জানতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই কর্পোরেশন সমস্ত এলাকাগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুক। যাতে অন্য কাউকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ দিতে না হয়।’’ 
যদিও পৌরসভার দাবি এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০জনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও ডেঙ্গু নিয়ে তথ্য গোপনীয়তার অভিযোগ উঠেছে।

Comments :0

Login to leave a comment