Gyanvapi tyahkhana

আদালতের রায়ের পর দিনই খুলে দেওয়া হলো জ্ঞানবাপীর তহখানা

জাতীয়

৩০ বছর বন্ধ থাকার পর আদালতের অনুমতিতে খুললো জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘ব্যাসজী কে তহখানা’। বুধবার বারাণসী জেলা আদালতের বিচারপতি এ কে বিশ্বেস ম্যাজিস্ট্রেটকে এক নির্দেশে জানিয়েছেন, একজন পুরোহিত ওই তহখানা বা ভূগর্ভস্থ স্থানে পুজো দেবেন। পুরোহিত কে হবেন সেটা স্থির করবে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট এবং আবেদনকারীরা। জ্ঞানবাপী মসজিদের দক্ষিণ দিকের এই তহখানায় থাকা মূর্তি পুজোর ব্যবস্থা সাত দিনের মধ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এখানে একটি পরিবারের পক্ষ থেকে পুজো দেওয়া হতো। বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পরে উদ্ভূত ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে তৎকালীন মুলায়াম সিং সরকার কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদকে ব্যারিকেড করে পৃথক করে। সেই সময় থেকে পুজো বন্ধ থাকে।

এদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় খোলা হয় ওই ঘর। তবে বুধবার রাতে থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলতে থাকে। রাষ্ট্রিয় হিন্দু দলের মতো উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলো রাতেই মসজিদের বাইরে ভীড় জমাতে থাকে। এদিন বেলা তিনটের সময় শুরু হয় পুজো।

বৃহৎ আকারের সর্বভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলি এবং সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে মূল প্রচার ছিল হিন্দু-মুসলিম বিভেদ এবং মোদীর গুণগান করা। অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির পরেই কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদেও হিন্দুদের পুজোর অনুমতির ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো এমনই প্রচার করা হয়েছে সোশাল মিডিয়াতেও। তবে জ্ঞানবাপী নিয়ে সাম্প্রতিক এএসআই সমীক্ষা, তার কথিত রিপোর্ট যা হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করছে, চলতি বিতর্কের মধ্যে এই অনুমোদন নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যেভাবে বাবরি মসজিদের দখল নেওয়া হয়েছিল, ধীরে ধীরে সেই দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জ্ঞানবাপী মসজিদকেও। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকরী সভাপতি অলোক কুমার এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, জ্ঞানবাপী নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই রায় এসে যাবে। জ্ঞানবাপীও আমাদের হবে। মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেছেন, আজকের বারাণসী আদালতের রায় জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে মাইল ফলক হিসাবে চিহ্নিত হবে। হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন বলেছেন, এই নির্দেশ ঐতিহাসিক। ১৯৮৬ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদে তালা খোলার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি কৃষ্ণমোহন পাণ্ডে, এই নির্দেশও ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের নন্দী অর্থাৎ ষাঁড়ের মূর্তিটি যেদিকে, সেই দিকেই ওই তহখানা বা ভূগর্ভস্থ ঘর। জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানা অর্থাৎ নমাজ পাঠের আগে যেখানে হাত-মুখ ধোয়া হয়, সেটা আর এই ষাঁড়ের মাঝে রয়েছে ওই তহখানা। উচ্চতায় ৭ ফুট এবং ৯০০ বর্গফুট এলাকার ওই তহখানা। আবেদনকারী শৈলেন্দ্র পাঠক ব্যাসের আইনজীবী সুভাষ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ব্যাস পরিবার ২০০ বছর ধরে ওই তহখানায় পুজো করতেন। আচার্য বেদব্যাস পীঠ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বা মহন্ত শৈলেন্দ্র পাঠক ব্যাস ওই তহখানায় পুজোর অনুমতি চেয়েছিলেন। আইনজীবী সুভাষ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, মুলায়াম সিং সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে ব্যাসজীকে তহখানায় প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ব্যারিকেড করে, ফলে পুজোও বন্ধ হয়ে যায়। তহখানার ভেতরে হনুমান, গণেশ, শিব এবং অন্য দেবতার মূর্তি আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সময়ে হি্দুত্ববাদীদের মূল স্লোগান ছিল, ইয়ে তো কেবল ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়। কাশী-মথুরাতেও উত্তেজনা এবং অপ্রীতিকর সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সেই সময়ে সারা দেশেই বিভিন্ন সরকার নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ করে। তখনই ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মধ্যে।

বারাণসীর শিবপুরে আচার্য বেদব্যাস পীঠের বর্তমান মহন্ত শৈলেন্দ্র পাঠক ব্যাস হলেন পণ্ডিত সোমনাথ ব্যাসের মেয়ের ঘরের দিকে উত্তরসূরি। সোমনাথ ব্যাসের পরিবারকেই জ্ঞানবাপীর মধ্যে ওই তহখানায় পুজোর অধিকার দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই ওই তহখানার নাম ছিল ব্যাসজী কি গদ্দি। ১৮০৯ সালে ব্যাস পরিবারকে ওই তহখানায় পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হয়। জ্ঞানবাপী মসজিদে চারটি তেহখানা বা ভূগর্ভস্থ ঘর আছে। তার মধ্যে দক্ষিণের এই তেহখানা ব্যাসজী কি তেহখানানামে পরিচিত। ভূগর্ভস্থ ঘর থাকাতেই হিন্দুত্ববাদীদের জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে মন্দিরের দাবিটি জনমানসে তুলে ধরতে সুবিধে হয়। সোমনাথ ব্যাস ওই দক্ষিণের তহখানার পুরোহিত ছিলেন। তিনি জ্ঞানবাপী এলাকাতেই বসবাস করতেন। ব্যাস পরিবারের আইনজীবী মদন মোহনের দাবি, তারপর থেকে সোমনাথ ব্যাসের পরিবারের কয়েক প্রজন্ম তহখানার ভিতরে পুজা অর্চনা করছেন। আদালতে তাদেরই পুজোর অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল ব্যাস পরিবার। কিন্তু আদালত এক জন পুরোহিতকেই নিয়োগ করতে বলেছেন, যিনি ওই তহখানায় গিয়ে পুজো দেবেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment