যুদ্ধের পরে নতুন করে গাজা ভূখণ্ডে দখলদারি চালাতে হবে ইজরায়েলকে। গাজায় ঢুকে বসতি স্থাপন করতে দিতে হবে ইজরায়েলী দখলদারদের। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও বাড়াতে হবে দখলদারির হার। সোমবার এই দাবিকে সামনে রেখে একটি সম্মেলনের ডাক দেয় ইজরায়েলের উগ্র-দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী নাহালা। আল জাজিরা জানিয়েছে, সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু’র মন্ত্রীসভার ১২ সদস্য।
ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইজরায়েলের উপর চাপ বাড়ছে গাজায় অভিযান স্থগিত করার জন্য। একইসঙ্গে যুদ্ধ পরবর্তী গাজায় যাতে ইজরায়েল দখলদারি চালাতে না পারে, সেটাও সুনিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। তারই মধ্যে সোমবার অবরুদ্ধ জেরুজালেমে এই সম্মেলন হয়। এবং সেখানে শাসকদল লাইকুডের ১২জন শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।
প্রসঙ্গত, গাজা ভূখণ্ডকে ৩৮ বছর ধরে দখল করে রেখেছিল ইজরায়েলী বাহিনী। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইজরায়েলী সেনা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরে আসে। একইসঙ্গে ভূখণ্ডের মধ্যে থাকা ইজরায়েলী দখলদারদের বসতিগুলিও ভেঙে দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে ইজরায়েলের উগ্র দক্ষিণপন্থীরা দাবি করছেন, ইজরায়েলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার একমাত্র পথ দখলদারির রাস্তা আরও চওড়া করা।
আল জাজিরা জানাচ্ছে, পূর্ব জেরুজালেমের সভা থেকে গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে প্যালেস্তিনীয়দের পুরোপুরি বিতাড়িত করারও দাবি উঠে এসেছে। ইজরায়েলের উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলির দীর্ঘদিনের দাবি, শান্তি ফেরানোর একমাত্র পথ হচ্ছে সমস্ত প্যালেস্তিনীয়দের শরনার্থী হিসেবে গ্রহণ করুক সিরিয়া, জর্ডন, মিশরের মত প্রতিবেশি দেশগুলি।
যদিও ইজরায়েলের এই বর্ণবাদী প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক স্তরে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ স্পষ্ট করেছে, এই জাতীয় কোনও পদক্ষেপ মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই প্রশ্নে তেল আভিভ’কে সমর্থন করতে পারেনি তাঁদের সবথেকে বড় সমর্থক আমেরিকাও।
আল জাজিরা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইজরায়েলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজায় দখলদারি চালানো যাবেনা। নেতানিয়াহু সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানালেও, তাঁর বক্তব্য, গাজার সুরক্ষা ব্যবস্থা ইজরায়েলের হাতে থাকবে।
৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে ২৬ হাজারের বেশি প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা এবং শিশু। ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘর্ষের প্রভাব আমেরিকার নির্বাচনী ময়দানেও পড়েছে। নিজের জয় নিশ্চিত করার জন্য আরব অভিবাসীদের ভোট প্রয়োজন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের। ইতিমধ্যেই এই অংশ সহ বহু মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে আমেরিকা সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়া জুড়ে পথে নেমেছেন।
পরিস্থিতি সামলাতে আমেরিকা বার্তা দিয়েছে, ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘাত মেটাতে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। যদিও নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন, তিনি স্বাধীন প্যালেস্তাইন বাস্তবায়িত হতে দেবেন না।
এই টানাপোড়েনের মাঝেই পূর্ব জেরুজালেমের সভায় যোগ দিলেন নেতানিয়াহু মন্ত্রীসভার ১২জন সদস্য।
Comments :0