কিবু ভিকুনা
বিশ্বকাপ শেষ। আর বাকি একটা ম্যাচ। সেই ম্যাচটাই চূড়ান্ত। এই ম্যাচের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে যাবে কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ ট্রফি। খেতাব দখলের লড়াইয়ে নামবে দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা বনাম কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স। অতীতে দু’দলই দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার যে দল জিতবে তাঁরা পাবে তৃতীয় বিশ্বকাপের জয়ের স্বাদ। ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা দু’দলই দুরন্ত ফুটবল খেলেছে। ভারসাম্য-বৈচিত্রের দিক থেকে দু’দলের মধ্যে খুব ফারাক নেই। সেই অর্থে এই ম্যাচ সমানে সমানে হবে। আমার মতে, ফাইনালে খাতায় কলমে এগিয়ে শুরু করবে ফ্রান্স। তবে রবিবার শেষ হাসি হাসবে আর্জেন্টিনাই। মেসির আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জিতবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। চলতি বিশ্বকাপে মেসি জাদুতে বুঁদ হয়েছে সারা বিশ্ব। ফাইনালেও মেসি ফের একবার জাদু দেখাবেন বলে আমার ধারণা।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই প্রেসনেল কিমপেম্বে, পল পোগবা, এনগোলো কান্তে, ক্রিস্টোফার এনকুঙ্কু, সর্বোপরি ব্যালন ডি’ওর জয়ী করিম বেঞ্জেমারা চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন। খেলতে পারেননি বিশ্বকাপ। তাও, বিশ্বকাপের ফাইনাল অবধি পৌঁছে গিয়েছে ফ্রান্স। শুধুমাত্র ফ্রান্সের রিজার্ভ বেঞ্চ এতটা শক্তিশালী বলে। কোচ দিদিয়ের দেশঁকে চিন্তাই করতে হয়নি, দল কীভাবে সাজাবেন। কোন ছকে খেলাবেন। সেমিফাইনালেও কিন্তু খেলতে পারেননি রাবিও, উপামেকামোর মতো ডিফেন্ডার ছিল না। তবুও অসুবিধায় পড়েনি ফ্রান্স। ম্যাচ বের করে নিয়েছে। আক্রমণভাগ, মাঝমাঠ, ডিফেন্স তিন বিভাগেই অদ্ভুত ব্যালান্স রয়েছে দলে।
ফ্রান্সের আক্রমণভাগ বিশ্বকাপের সেরা। আমার চোখে, গ্রিজম্যানের খেলা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। গ্রিজম্যানের জন্য এমবাপে, ডেম্বলে, জিরুরা চাপহীনভাবে খেলতে পারছে। ফ্রান্সে বিপক্ষের ভুলের সুযোগ নিয়ে প্রতি আক্রমণে গিয়ে গোল তুলে নিচ্ছে। এই সময়টায় দ্রুত ট্রানজিশন করছে দেশঁর দল। বিপক্ষ বুঝতে পারছে না। মরক্কো, ইংল্যান্ড ম্যাচের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে ফ্রান্সের আক্রমণের ধরন। দুই প্রান্তকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করছে। গ্রিজম্যান,ডেম্বেলের সেন্টার আর্জেন্টিনার বক্সে বিপদ তৈরি করতে পারে। তেমনই মাঝমাঠে তরুণ ফুটবলার অরিলিয়ঁ চুয়োমিনি খুব ভালো ফুটবল খেলেছেন। এনগোলো কান্তের অভাব বুঝতে দেননি তিনি। ডিফেন্সে অভিজ্ঞ রাফায়েল ভারানে থাকায় সুবিধে হচ্ছে বাকিদের। আক্রমণভাগের মতো রক্ষণও শক্তিশালী। থিও হার্নান্ডেজ খুব ভালো ওভারল্যাপে উঠছে। কৌন্ডেও সমানভাবে নিজের ভূমিকা পালন করছেন। আমি কিন্তু ফ্রান্সের দুর্বলতা সেভাবে চিহ্নিত করতে পারছি না। কিন্তু মরক্কোর বিরুদ্ধে অনেকসময় বল লুজ করে বা মনঃসংযোগের অভাব সমস্যায় পড়তে হয়েছিল ফ্রান্সকে। যে জন্য মরক্কো বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেছিল। ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে এ ধরনের ভুল করা চলবে না।
আর্জেন্টিনার শক্তি নিয়ে আর কী বলবো? যে দলে মেসির মতো ফুটবলার আছে, তাদের আর কী প্রয়োজন! মেসিই তো সর্বেসর্বা। এই বিশ্বকাপে মেসি আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলটা খেলছেন। সেরা ছন্দে রয়েছেন। একক দক্ষতায় ম্যাচের রং পালটে দিয়েছেন বারবার। মেসির খেলা ভীষণ উপভোগ করেছি আমি। তেমনই তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করছেন বাকিরা। স্কালোনি দলটা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হারের পর দলটাকে ভেঙে পড়তে দেননি, ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন। এনজো ফার্নান্ডেজ, ম্যাক অ্যালিস্টারের মতো তরুণ ফুটবলারদের সুযোগ দিয়েছেন। দলের ফুটবলাররা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছে। ডিফেন্সে নিকোলাস ওটামেন্ডি, ক্রিশ্চিয়ান রোমোরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজের মতো ডিফেন্ডাররা রয়েছেন। যার ফলে সুবিধা হচ্ছে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের। মাঝমাঠে রড্রিগো ডি পলের ভূমিকাও অপরিহার্য।
ফুটবল খেলার স্টাইলের দিক থেকে, আমার মতে, কাতার বিশ্বকাপ সেরা নয়। কারণ, এবার অনেক দল খুব বেশি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে। অনেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছে, তবে আমি আরও আক্রমণাত্মক ফুটবল আশা করেছিলাম। যেমন স্পেন কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ভীষণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছিল। জার্মানিও। যদিও বেশি দূর যেতে পারেনি।
Comments :0