LATIN WORLD REACTION

আর্জেন্টিনার জয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসছে লাতিন বিশ্ব

খেলা আন্তর্জাতিক

FIFA QATAR 2022 WORLD CUP FOOTBALL মেসিদের জয়ে লাতিন বিশ্ব জুড়ে উচ্ছ্বাস

একটি জয় যেন মিলিয়ে দিল একটি গোটা মহাদেশকে। রবিবার রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের পেনাল্টি শুটআউট শেষে  তৃতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ পাড়ি দিয়েছে বুয়েনস আরেসে। এবং এই জয়কে সরাসরি ভাবে না হলেও ঘুরিয়ে বিকল্প ভাষ্যের জয় হিসেবেই দেখছে লাতিন বিশ্ব। 

ফ্রান্স, পশ্চিমী দুনিয়ার অন্যতম অগ্রণী শক্তি। ইউরোপ সহ বিশ্বের একটা বড় অংশে মার্কিন ‘দাদাগিরি’র দোসর। ন্যাটোর অন্যতম উদ্যোক্তা। বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই দেশের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। যাঁদের সমাজ, শৈলী, রাজনীতি- অনেকটাই বামদিক ঘেষা। দলের হৃদপিন্ড মেসি এবং লাতিন বিশ্বের অবিসংবাদিত মুক্তির নায়ক চে গোয়েভারার জন্ম একই শহরে- রোজারিওতে। ফুটবল কৌশলেও দুই শক্তির খেলার ধরণ দুই রকম। আর্জেন্টিনা, লাতিন ঐতিহ্য অনুযায়ী ‘ফ্রি ফ্লোইং ফুটবল’ বা স্রোত কিংবা লয়ের মতো ফুটবল খেলে। জীবনের সহজিয়া ছন্দের মতোই।  অপরদিকে পশ্চিমী ভারী শিল্পের অনুকরণ যেন ফ্রান্সের ‘স্টাইলে’ প্রতীয়মান। যেই ধারায় নান্দনিকতা না থাকলেও ৯০ মিনিট শেষে গোল আছে, ৩ পয়েন্ট আছে। অনেকটা স্প্রেড শিটে লাভ ক্ষতির হিসেবের মতোই। শুষ্ক কাষ্ঠং হলেও কামিনী কাঞ্চনে পরিপূর্ণ। 

এই প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে আর্জেন্টিনার জয়ে লাতিন বিশ্বে বাঁধভাঙা খুশির হিল্লোল সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। এবং হয়েছেও তাই। দলের জয়ে স্বভাবতই খুশি আর্জেন্টিনার  বামঘেঁষা রাষ্ট্রপতি আলবের্তো ফার্নান্দেজ। নিজের ‘অফিশিয়াল’ টুইটার হ্যান্ডেল তাঁর বক্তব্যের নির্যাস, ‘‘ঐক্যবদ্ধতাই শক্তি। তা আবারও প্রমাণ করলেন আর্জেন্তিনীয়রা! আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’’। এই জয়ের পরে ফার্নান্দেজকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। টুইট করে সেই ফোনবার্তার কথা জানাতে ভোলেননি ফার্নান্দেজ। 

এর পাশাপাশি আর্জেন্টিনার জয়ে টুইট করেছেন ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি গুইলের্মো লাসো, চিলির রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল বরিস ফন্ট, বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, ভারতের নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রাজিলের লুলা। সবকটি টুইটই নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে রিটুইট করেছেন আলবের্তো ফার্নান্দেজ। এবং সবক্ষেত্রেই ঘুরে ফিরে আসছে একটিই বার্তা- ‘‘নতুন বিশ্বে স্বাগত আর্জেন্টিনা। সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে, নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই জয় গোটা লাতিন বিশ্বের জয়।’’

শুভেচ্ছা বার্তা ভেসে এসেছে কিউবা থেকেও। কিউবার রাষ্ট্রপতি মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল এবং সেদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তরফে মেসিদের প্রাণখোলা প্রশংসা করা হয়েছে। কিউবানরা জানাচ্ছেন, তাঁরা আর্জেন্টিনার এই জয় নিজেদের জয় বলেই মনে করেন। মেসিদের জয় আরও একবার বিশ্বের এই পিছিয়ে থাকা প্রান্তকে সামনের সারিতে নিয়ে এল। মেসিদের জয়ে শুভেচ্ছা বার্তা ভেসে এসেছে মেক্সিকো এবং পানামা থেকেও। 

প্রসঙ্গত, কিউবা বিপ্লবের প্রাণ পুরুষ ফিদেল কাস্ত্রোর অন্যতম প্রিয়পাত্র ছিলেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী দিয়েগো মারাদোনা। মারাদোনা স্বয়ং ছিলেন চে’র ভাবশিষ্য। চে’গুয়েভারার মতাদর্শ অনুসরণ করেই চলতেন মারাদোনা। জীবিত থাকাকালীন ফিদেল নিজেও মেসির খেলা দেখা প্রকাশ্যে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। 

ফার্নান্দেজের রিটুইট করা তালিকায় থাকা রাষ্ট্র নেতাদের প্রায় প্রত্যেকেই হয় বামপন্থী, নইলে পশ্চিমী দুনিয়ার বিকল্প ‘গ্লেবাল অর্ডার’ গড়ে তুলতে আগ্রহী। অপরদিকে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাঁক্র ছাড়া কোনও পশ্চিমী রাষ্ট্র প্রধান এখনও আর্জেন্টিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উঠতে পারেননি। এই শুভেচ্ছা না জানিয়ে উঠতে পারা কি নিছকই কাকতালীয়? 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment