Manipur school library

মণিপুরের স্কুল গড়ছে, এ রাজ্যে বন্ধ হচ্ছে লাইব্রেরি

জাতীয়

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট রাজ্য মণিপুর। সেখানকার চুরাচন্দ্রপুর জেলার অন্তর্গত প্রত্যন্ত একটি গ্রাম মলনমের স্কুল গান্ধী মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট হাই স্কুল। মণিপুর শিক্ষা দপ্তরকে অনেক চিঠি লিখে লাইব্রেরি খোলার ব্যবস্থা করে স্কুল পরিচালন কমিটি। 
২০২২’র ডিসেম্বরে সরকার ঘর দিলেও বই কেনার খরচ দেয়নি। কিন্তু লাইব্রেরি তো বাঁচাতে হবে! সেই কারণে বই চেয়ে ভিডিও করলেন প্রধান শিক্ষক হাউজেল কৈথানলিয়ান। সেই বার্তা ছড়িয়ে দিলেন নিজের পরিচিত মহলে। পরে সেই ভিডিও টুইটারে শেয়ার করেন আরেক ব্যক্তি। তারপরে অবশ্য, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বই দান করেছে স্কুলের লাইব্রেরিতে। ব্যক্তিগত ভাবেও বেশ কয়েকজন বই দান করেছেন ওই স্কুলে।[ad} 
প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় এই স্কুলে। লাইব্রেরিতে নিয়মিত যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষকের দাবি, মাত্র ৯০০টির মতো বই পাওয়া গেছে। ফলে প্রয়োজন আরও বইয়ের। 
প্রধান শিক্ষক কৈথানলিয়ান জানান, ‘‘বিদ্যালয়ের নিয়মিত পঠন পাঠনের সঙ্গে পাঠাগারের সহায়তা নেওয়াও অত্যন্ত প্রয়োজন। এই ডিজিটাল যুগে মোবাইলে অনেক কিছু পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু তা লাইব্রেরির থেকে বেশি নয়। বই ঘাঁটলে, ছবি দেখলে শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়ে, সমাজ চেতনা বাড়ে, এমনকি জানার আগ্রহ থেকে ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভবিষ্যতে নতুন কিছু করারও আগ্রহ জাগে। সেই কারণে আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধু পড়ার বই নয়, গল্পের বই, ছবির বই এমনকি কমিক স্ট্রিপও রাখব লাইব্রেরিতে। যাতে শিশুরা বই পড়ার স্বাদটা খুঁজে পায় লাইব্রেরিতে।’’ 
মণিপুরের এই ছোট্ট একটি উদাহরণের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান চিত্রটি তুলনা করলে ভয়ঙ্কর ছবি সামনে আসছে। প্রথমত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে জেরবার পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দপ্তর। বন্ধ করে দিতে চলেছে প্রায় ৮ হাজার সরকারি স্কুলও। সরকারের অজুহাত, স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই। তেমনি বন্ধ হয়ে গেছে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সরকারি গ্রন্থাগারগুলি। 


এর মধ্যেই রাজ্যে প্রায় ১,২০০টি লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেছে। এই নিয়ে বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের কর্ম সচিব ডক্টর জয়দীপ চন্দ জানান, ‘‘এক সময় পশ্চিমবঙ্গের গ্রন্থাগার ব্যবস্থা ছিল ভারতের মধ্যে সেরা। গ্রন্থাগার নির্ভর লেখাপড়ায় যথেষ্ট জোর দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১০’র পর থেকে ক্রমেই নিম্নমুখী হয়েছে লাইব্রেরি ব্যবস্থা। নতুন করে নিয়োগ হয়নি। সাড়ে ৫ হাজার পদের মধ্যে খালি ৪ হাজার ২০০ পদ।’’ 
যার অর্থ ৮০ শতাংশের কাছাকাছি পদই ফাঁকা। চন্দ আরও বলেন, ‘‘২০২১’র লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটকে সামনে রেখে ৭৩৮টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনও নিয়োগই হয়নি।’’ তিনি জানান, ‘‘সরকারের দাবি লাইব্রেরিতে পাঠকরা আসেন না। তাই লাইব্রেরীতে নিয়োগ করা হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে লাইব্রেরি খুললে পাঠকরা আসেন। লাইব্রেরি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে পাঠকরা আসবেন না, এটাই স্বাভাবিক।’’ 


চন্দ জানাচ্ছেন যে সরকারি স্কুল এবং কলেজগুলির লাইব্রেরিতেও নিয়োগ করছে না সরকার। ফলে কর্মীর অভাবে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন না বহু পড়ুয়া। কর্মী নিয়োগ নেই। লাইব্রেরী বন্ধ। সেই অজুহাতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বই কেনার টাকাও দিচ্ছে না সরকার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়মিত দরকার হয় লাইব্রেরি। সুতরাং লাইব্রেরীতে পাঠক আসে না, সরকারের এই যুক্তি খাটে না। 
লাইব্রেরির প্রসঙ্গে মণিপুরের শিক্ষক হাউজেল কৈথানলিয়ানকে সমর্থন করে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তো স্কুলই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুব স্বাভাবিক মুখ্যমন্ত্রী লাইব্রেরি নিয়ে মোটেই চিন্তিত থাকবেন না। বই পড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা একজন প্রকৃত মানের শিক্ষক বুঝবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কী হচ্ছে তা তো সবারই জানা। সেখানে লাইব্রেরির শূন্যপদে নিয়োগ করছে না রাজ্য সরকার। বই পড়লে তো ছেলে মেয়েরা চাকরি চাইবেন, সেটা তো চান না মুখ্যমন্ত্রী।’’ 
বিশ্বাস আরও বলেন, ‘‘রাজ্যে ৮ হাজার সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে জাতীয় শিক্ষা নীতি এনেছে তা রাজ্যে গোপনে প্রয়োগ করতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি। ছাত্র নেই এই অজুহাতে স্কুলগুলো বেসরকারি হাতে তুলে দেবে। খুব স্বাভাবিক এই ভাবে স্কুলের গ্রন্থাগারও নষ্ট হয়ে যাবে।’ ময়ুখ বিশ্বাসের ক্ষোভ, ছাত্র-ছাত্রীদের এভাবেই বই বিমুখ করে তুলতে চাইছে তৃণমূল।

 

A High School in rural Manipur needs your support with books for their library! They have the infrastructure but no books and students here are very keen to read books. Here is a short message from the Head Master. Please DM me if you would like to support! pic.twitter.com/wWOP11Fjxr

— Prateek Kanwal (@prateekkanwal) December 16, 2022 ">

 

Comments :0

Login to leave a comment