Mekhligunj

শহীদের গ্রাম লড়ে যাচ্ছে জয়ের ধারা ধরে রাখতে

রাজ্য জেলা

জয়ন্ত সাহা: মেখলিগঞ্জ
 

টানা জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে এবারেও মাটি কামড়ে ভোটের লড়াই জিততে প্রস্তুত শহীদের গ্রাম হরিরবাড়ি।
২০১৮ সালে গোটা জেলায় তৃণমূলের ভোটলুটের খেলা চললেও জামালদহের হরিরবাড়িতে এসে থেমে গিয়েছিল সেই খেলা। জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আতাবুল ইসলামকে জেতাতে জানকবুল লড়াইয়ের অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন কমরেড রমজান মিয়া। হার মেনে নিতে পারেননি সেবারের তৃণমূল প্রার্থী রথীন ডাকুয়া। ভোটের ফল প্রকাশের দিনকয়েক পরেই রমজান মাসের সময়েই অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল রমজান মিয়াদের ওপর। দিনটা ছিল ২০১৮ সালের ৩ জুন। সেদিনের হামলায় আতাবুল প্রাণে বেঁচে গেলেও রমজান মিয়া আর আতাবুলের বাবা সফিরুদ্দিন মিয়া গুরুতর জখম হন। হাসপাতাল যাওয়ার পথেই প্রাণ হারান রমজান মিঁয়া। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ফেরেন আতাবুলের বাবা।
রমজান মিয়াকে খুন করে তৃণমূলীরা উলটে দুটো জামিন অযোগ্য ধারায় মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছিল শহীদ রমজানের পরিবারের সদস্য ও এলাকার পার্টিকর্মীদের। একটি মামলায় ৪৬ জন, অন্য মামলায় ২৩ জন এখনও আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।
এবারে হরিরবাড়ির ওই বুথেই সিপিআই(এম)’র প্রার্থী হয়েছেন শহীদ কমরেড রমজান মিয়ার বড় ছেলের স্ত্রী নুরবানু বিবি। বৃহস্পতিবার মেখলিগঞ্জের আদালতে মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিয়ে এসেই শুক্রবার নুরবানু বিবিকে নিয়ে প্রচারে বেরন পার্টিকর্মীরা। নুরবানু বিবির বিরুদ্ধে তৃণমূল দাঁড় করিয়েছে রমজান মিয়ার খুনের মূল আসামি মতি মিয়ার ছেলের স্ত্রী পুষ্পা পারভিন ছেত্রীকে। তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী সিরুল মিয়াও খুনের অন্যতম আসামি।
এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়, শুধু খুনির পরিবারই নয়, এলাকায় বাংলাদেশের গোরু পাচারের সাথেও জড়িয়ে আছে ওই পরিবারের নাম। বিজেপি প্রার্থী আলোরানি বর্মণ লড়ছেন দলের প্রতীক চিহ্ন টিকিয়ে রাখতে।
প্রচারে বেরিয়ে নুরবানু বিবি বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরের খুনিদের শাস্তি আদালত দেবে, আমাদের সে ভরসা আছে। আমরা সবাইকে বলছি, খুনির পরিবারের প্রার্থী যেন ভোট না পায়। হরিরবাড়িতে চিরকাল লাল ঝান্ডাকেই আপনারা জিতিয়েছেন, এবারেও সেটাই করুন।’’
রমজান মিয়ার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, লাল ঝান্ডা নিয়েই আমাদের লড়াই চলবে। হরিরবাড়ি লাল ঝান্ডার জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পাঁচ বছর আগে লড়েছিলেন রমজান মিয়া। এখন সেই ঝান্ডা তাঁর ছেলের স্ত্রী নুরবানু বিবির কাঁধে।
হরিরবাড়িতে গত পঞ্চায়েত ভোটে জেতা আতাবুল ইসলাম এবার পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিআই(এম) দলের প্রতীকে লড়ছেন। আতাবুলের বাবা সফিরুদ্দিন মিয়া আটের দশকে পরপর দু’বার লাল ঝান্ডার হয়ে ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছিলেন।
সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিপিন শীল এই গোটা এলাকা চেনেন হাতের তালুর মতো। নুরবানু বিবিকে নিয়ে প্রচারের পর পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী আতাবুল ইসলামকে নিয়ে প্রচারে বের হয়ে পড়লেন। কখনও এবাড়ি-ওবাড়ি ঢুকছেন, আবার জমির আলে বসে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার সারছেন। প্রচারের ফাঁকেই জানালেন, জামালদহ জমির আন্দোলনের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ২০১৬ সাল অবধি এসব এলাকায় তৃণমূল হুল ফোটাতে পারেনি। পঞ্চায়েত থেকে বিধায়ক সবই ছিল বামফ্রন্টের। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ওরা সব লুট করে নিল। একমাত্র হরিরবাড়ি সেই লুট ঠেকিয়ে দিলেও অন্য এলাকা হার মেনেছিল। এবারে ২০ আসনের জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতই শুধু নয়, গোটা মেখলিগঞ্জ ব্লক সন্ত্রাসের চোখে চোখ রেখে পঞ্চায়েতের ভোটে লড়াই করছে। বামফ্রন্ট, কংগ্রেসকে সাথে নিয়েই মেখলিগঞ্জ ব্লকে আমাদের লড়াই চলছে।
পঞ্চায়েত সমিতির সিপিআই(এম) প্রার্থী আতাবুল ইসলামের সম্পর্কে পিসেমশাই শহীদ রমজান মিয়া। তিনি বলেন, ‘‘ভোট প্রচারে গিয়ে ভোট নিয়ে যত কথা হচ্ছে তার চাইতে বেশি উঠে আসছে পিসেমশাইয়ের কথা। আদালতের বিচারে খুনিরা কবে শাস্তি পাবে জানি না। তবে রমজান মিয়ার খুনিদের শাস্তি দিতে মেখলিগঞ্জের মানুষ আবার বামফ্রন্টকেই বেছে নেবে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment