কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘট ভাঙতে বিজেপি ও তৃণমূলের চেয়ে সক্রিয় ছিল রাজ্য পুলিশ। রীতিমতো রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেল সর্বত্র। ধূপগুড়ি বানার হাটে সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল অফিস গেটে লাগানো পতাকা খুলে নিয়ে যায় পুলিশ। মিছিলের সাথে সাথে ঘুরে ভয় দেখানোর কাজও করে। ব্যাঙ্ক অফিস সব খানেই পুলিশ জোর করে কর্মীদের ঢুকিয়ে দেয়। সকালে ধূপগুড়ি শহরের চৌপথীতে তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি ইভান দাস জোর করে রাস্তা খুলে দিয়ে গাড়ি চালাবার চেষ্টা করলে তীব্র বাঁধার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পুলিশ এসে শাসক দলের যুব নেতাকে উদ্ধার করে ১০ জন ধর্মঘটীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এদিন সকাল থেকে ধর্মঘটকে সমর্থন করে পথে ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা জয়ন্ত মজুমদার, জেলা কমিটির সদস্য নূরআলম সহ শ্রমিক কৃষক খেত মজুর শিক্ষক সংগঠিনের নেতৃত্বদের গ্রেফতার করে। ধূপগুড়ি হাসপাতাল এলাকায় ফালাকাটা রোডে শতাধিক আশা কর্মী মহিলারা পথ অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেয়। বানারহাট থানার পুলিশ একই আচরণ করে ধর্মঘট সমর্থক চা শ্রমিকদের সাথে। বানারহাটের গ্যান্দ্রাপাড়া চা বাগানের গেট বন্ধ ছিল। চা শ্রমিকরা ধর্মঘটকে সমর্থন করে কাজে যোগ দেননি।
কোচবিহার জেলায় সর্বাত্মক চেহারা নেয় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা সাধারণ ধর্মঘট। এই ধর্মঘটের সফলতা মেনে নিতে না পেরে কোচবিহার ও দিনহাটা শহরে গ্রেপ্তার করা হয় বামপন্থী নেতা কর্মী সমর্থকদের। বুধবার সকালে কোচবিহার শহরের কাছারির মোড় এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল চলাকালীন পুলিশ অযাচিত ভাবে গ্রেপ্তার করে সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় সহ উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতা মহানন্দ সাহা, শ্রমিক নেতা সুবোধ চক্রবর্তী, শিপ্রা গুপ্ত চৌধুরী, অরুণ করঞ্জাই, মহিলা নেত্রী মধুছন্দা সেনগুপ্ত, গণ আন্দোলনের নেতা বিদ্যুৎ কুমার দে, টিঙ্কু গোস্বামী, ছাত্রনেতা অঙ্কন করঞ্জাই, টিঙ্কু গোস্বামী, ফারদিন হোসেনকে।
দিনহাটা শহরে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল বের করা হলে এই মিছিলে আক্রমণ চালায় তৃণমূল দুষ্কৃতীরা। পুলিশ তৃণমূল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে গ্রেপ্তার করে সিআইটিইউ কোচবিহার জেলা সভাপতি প্রবীর পাল, গণ আন্দোলনের নেতা শুভ্রালোক দাস, জয় চৌধুরী, সমীর চৌধুরী, দীপক পাল, পাপ্পু রহমান, বিকাশ মন্ডল, আব্দুল রউফ, অমিত মিত্র, মনি মোদক, আয়ূব আলিকে। এদিন গোটা জেলায় ৮৯জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়।
এদিন সকাল থেকেই কোচবিহার শহরের পাশাপাশি তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ সর্বত্র ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করেন ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। প্রত্যেক জায়গাতেই অতি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় পুলিশ প্রশাসনকে। অথচ ধর্মঘটের বিরোধিতার নামে কোচবিহার শহর, তুফানগঞ্জ শহর, মাথাভাঙ্গা শহর, দিনহাটা শহর, মেখলিগঞ্জ শহর সর্বত্র তৃণমূল দুস্কৃতীরা দাপাদাপি করলেও নিরুত্তাপ ছিল পুলিশ। জেলা জুড়ে এই ধর্মঘট ব্যর্থ করতে পুলিশ এবং তৃণমূল যৌথ ভাবে রাস্তায় নামলেও গোটা কোচবিহার জেলায় সর্বাত্মক রূপ নেয় এই ধর্মঘট। বেসরকারি পরিবহণ ছিল পুরোপুরি স্তব্ধ। কুচবিহার জেলা জুড়ে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো বন্ধ রাখেন তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক এবং বীমা দপ্তর সহ আদালত ছিল পুরোপুরি ভাবে বন্ধ। তবে অন্যান্য সরকারি দপ্তর প্রশাসক উদ্যোগ নিয়ে খুলে দিলেও সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। জোর করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও পড়ুয়াদের দেখা যায়নি কোন বিদ্যালয়ে।
ইসলামপুরেও বুধবার সকাল থেকে বনধর সমর্থনেপথে নামেম ধর্মঘটীরা। চোপড়ার দাসপাড়া এলাকার চা বাগান গুলিতে বনধে ব্যাপক সাড়া পড়ে। তবে জেলার চা বলয়ে শ্রমিকরা বন্ধকে সমর্থন করল শাসকদলের হুমকির মুখে পড়ে বাগানে কাজের যোগ দেন গুটিকয়েক চা শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল ধর্মঘটের দিনে কাজে যোগ না দিলে চাকরি কেড়ে নেওয়া হবে। সেই ভয়ে কিছু শ্রমিক বাধ্য হয়ে চা বাগানে কাজ করেছেন। সিআইটিইউ অনুমোদিত উত্তর দিনাজপুর চা বাগিচা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কার্তিক শীল বলেন,‘‘ শ্রমিকরা আমাদের সব জানিয়েছেন। আসলে চোপড়ায় সন্ত্রাসের আবহে সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা বাগানের সাথে যোগ দিলে তাদের রুটি রুজি হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তাদের আমরা জোর করিনি। শ্রমিকরা সব উপলব্ধি করতে পারছেন।’’
Comments :0