Gefneral Strike

ধর্মঘটের প্রভাব রাজ্যের সর্বত্র

রাজ্য জেলা

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির কারণে জীবন যন্ত্রণায় জর্জরিত দেশের শ্রমজীবী মানুষ ক্ষোভ উগরে দিয়ে শামিল হলেন ধর্মঘটে। রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চল সহ অসংগঠিত ক্ষেত্র, কিষাণ ও খেতমজুররা কাজে যোগদান থেকে বিরত থেকে ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন। বুধবার ভোররাত থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের শ্রমজীবী জনতা পথে নেমে পিকেটিং করে। মুহুমুর্হু শ্লোগানে ছড়িয়ে দেওয়া হয় শ্রমজীবীদের দাবিগুলি। এদিন ৬০ নং জাতীয় সড়কের রানিগঞ্জ বাজারের প্রাণকেন্দ্র নেতাজি মূর্তির সামনে ধর্মঘটী জনতার শান্তিপূর্ণ পিকেটিং তুলে দিতে তৎপর ছিল মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। বিজেপি সরকারের নয়া শ্রমকোড বাতিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, ১০০ দিনের কাজ চালু, নূন্যতম মজুরি, কর্মসংস্থান, রুটিরুজির দাবি ও কর্পোরেট সংস্থার দালাল মোদী সরকারের থেকে দেশ বাঁচানোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে ধেয়ে আসে এরাজ্যের পুলিশ। রানিগঞ্জের পিকেটিং এ শামিল গৌরিব ধল্ল, রামশংকর দাস, রাজু কেওড়া ও সুকান্ত চ্যা টার্জিকে আটক করে। তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তোলেন শ্রমিকনতা সুপ্রিয় রায়,রুনু দত্ত প্রমূখ। সাধারণ মানুষও এদিন প্রশ্ন তোলেন, বিজেপি'র বিরুদ্ধে শ্লোগান তুললে তৃণমূলের কেন এত গাত্রদাহ? ধর্মঘট ভাঙার জন্য এদিন পুলিশ অতিসক্রিয় ছিল। দোকান খোলানো থেকে বাস চালানোর জন্য পরিবহন কর্মীদের উপর চাপ দেয় পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ পরে আটক চারজনকেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। এদিন সকালেই রাস্তায় নথিপত্রবিহীন বালির গাড়ি আটকে দেয় সংগ্রামী জনতা। বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে সেই পারমিটবিহীন বালি গাড়িটিকে নিরাপদে যেতে সাহায্য করে এবং ধাক্কা দিয়ে আটককারীদের সরিয়ে দেয়।

তারবাংলা মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিল শেষে নেতাজি মূর্তির সামনে পথ অবরোধ হয়। সিহারশোল রাজবাড়ি মোড়ে ও লালঝাণ্ডা নিয়ে পিকেটিং, মিছিল ও পথ অবরোধ করে। সেখানেও পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। জেকেনগরে দীর্ঘক্ষণ পিকেটিং করে মেহনতি মানুষেরা। বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ ছিল। কিছু দোকান তৃণমূলীরা খোলার চাপ দিলেও দেখা মেলে নি ক্রেতার। সবজি বাজারে কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে না আসায় বাজার বন্ধের রূপ নেয়। খেতমজুররা কাজে যান নি। রানিগঞ্জের একটি ব্যাঙ্ক বাদে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের নেতা বিমল গোস্বামী, সুব্রত চেল বলেন, তৃণমূলের নেতারা ব্যাঙ্কগুলি খোলার জন্য ম্যানেজারকে চাপ দিলেও ব্যাঙ্ককর্মীরা ধর্মঘটের পক্ষে অনড় থাকেন। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী ছিল নগন্যই। সরকারী অফিসগুলি কার্যত কোনও কাজই হয়নি ।  মঙ্গলপুর শিল্পতালুকের ১০ টি লৌহ-ইস্পাত কারখানায়  স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘটের দাবি করছেন সিআইটিইউ শ্রমিক ইউনিয়নগুলি। মঙ্গলপুর শিল্পতালুকের কারখানায় ৭০ শতাংশ ধর্মঘট সফল হয়। বেসরকারি মালিকের হাত থেকে কয়লাখনি বাঁচানোর জোরালো দাবি তুলে কয়লাশ্রমিকরা খাদান এলাকায় পিকেটিং করে। সারা জেলার শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে। 

পূর্ব বর্ধমান জেলায় সার্বিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। ব্যাঙ্ক, বীমা, ডাক পরিষেবায় ধর্মঘটের প্রভাব ছিল সর্বাত্মক। জেলায় ৪২ জায়গায় মানুষ রাস্তা অবরোধে সামিল হন। মশাগ্রাম ও সমুদ্রগড়ে ট্রেন রুখে দিয়েছেন প্রতিবাদী মানুষ। ধর্মঘটের প্রভাব পড়ে জাতীয় সড়ক এন এইচ-২ ও এন এইচ ২ বি’তেও। লাল ঝান্ডার এমন প্রতিবাদ, আন্দোলনে  পুলিশকেও বেগ পেতে হয়েছে বহু জায়গাতে। তবে জেলায় ধর্মঘট ভাঙ্গতে বেশ কিছু জায়গাতে পুলিশের অতিসক্রয়তা  চোখে পড়েছে। কিন্তু বৃষ্টির মধ্যে মানুষের ক্ষোভ, যন্ত্রনা প্রকাশ পেয়েছে ধর্মঘটের মধ্য দিয়েই।  

এদিন পুলিশের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে ট্রেন অবরোধ হয় সমুদ্রগড়, মশাগ্রামে। গলসীতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন প্রতিবাদী মানুষ। ওড়গ্রামে অবরোধ হয় বর্ধমান-বোলপুর রোডও। এছাড়াও বর্ধমান-আরামবাগ রোড, বর্ধমান-কাটোয়া রোড, বর্ধমান-কালনা রোড, কাটোয়া- বহরমপুর রোড, জিটি রোড, এস টি কে কে রোড একাধিক জায়গাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পূর্ব বর্ধমানে এদিন সব ফেৃরিঘাট বন্ধ ছিল। কালনা, কাটোয়াতে  ফেরিঘাট বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীদের অভাবে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটের দাবী নিজেদের দাবী মনে করে  সমর্থন দিয়েছেন, ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। কালনা, কাটোয়া’র বাজার ৮০ শতাংশ বন্ধ ছিল, কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস চলেনি।  তৃণমূলকে এদিন রাস্তায় না দেখা গেলেও পুলিশ কোথাও জোর করে ব্যাঙ্ক খোলার চেষ্টা করেছে তবে কর্মীদের লড়াকু মেজাজে পারেনি। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সমুহের ডাকা সাধারণ ধৰ্মঘটে সারা জেলার আদালত গুলিতে বন্ধের পক্ষে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। কালনা ও কাটোয়া বার এসোসিয়েশন তাঁদের বারের সিদ্ধান্ত করে কাজ না করার কথা বিচারকদের জানিয়ে দেওয়ায় কোনো কাজ হয়নি পাশাপাশি বর্ধমান আদালতেও বার বন্ধ ছিল। 

দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম, মেচেদা, কাঁকটিয়া, তমলুকের মানিকতলা, নিমতৌড়ি, নন্দকুমার বাজার, সুতাহাটা, হলদিয়া বন্দর, হলদিয়া রানীচক, নন্দীগ্রাম, চন্ডিপুর, হেঁড়িয়া, কাঁথি, রামনগর, এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুর, ময়নাতে পিকেটিং, মিছিল হয়। এদিন হলদিয়ায় রেল অবরোধ চলাকালীন হঠাৎই পুলিশি আক্রমণ হয় শ্রমিক কর্মচারীদের উপর। গ্রেপ্তার করা হয় কয়েকজনকে। অন্যদিকে কাঁথিতে অবরোধ চলার সময় পুলিশ বেপরোয়া আক্রমণ করে মহিলাদের উপর। গ্রেপ্তার করা হয় খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা হিমাংশু দাস সহ কয়েকজনকে। কাঁথির বিভিন্ন ব্যাঙ্ক জোর করে খুলে দেয় পুলিশ। চন্ডিপুরে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল চলাকালীন বাধা দেয় পুলিশ। ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের সাথে। নন্দকুমারে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিডিও,  বিএলআরও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলে। পুলিশ অবরোধ তুলতে এলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং মিছিল হয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় দীঘা, হলদিয়া, তমলুক রুটে বেসরকারি বাস কম ছিল। তবে ময়না শ্রীরামপুর রুটে বাস ট্রেকার চলেনি। জেলার পাঁচটি বাস পরিবহণ সংস্থা ধর্মঘটকে সমর্থন করায় সার্বিকভাবে বেসরকারি বাস একেবারেই কম চলেছে এদিন। একাধিক রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল এদিন।  হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক কর্মচারীদের উপস্থিতি তিরিশ শতাংশের কম ছিল। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্যত শ্রমিক শূন্য ছিল। জেলার ব্যাঙ্ক, বীমা অফিসগুলি বন্ধ দেখা গেছে। তবে কাঁথি সহ কিছু জায়গায় পুলিশ জোর করে ব্যাঙ্ক খুললেও কর্মচারীদের অনুপস্থিতির ফলে পরিষেবা ব্যাহত হয়। হলদিয়া, তমলুক, কাঁথি, এগরা মহকুমার বীমা অফিস বন্ধ ছিল। সরকারি দপ্তর গুলিতেও কর্মচারীদের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম লক্ষ করা গেছে।

হাওড়া জেলার সর্বত্র বুধবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে বামপন্থী কর্মী ও সমর্থকেরা। ধর্মঘটকে বানচাল করতে সক্রিয় হতে দেখা যায় পুলিশ প্রশাসনকে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা রাস্তায়, বাজারে, জনবহুল স্থানে, বিভিন্ন রেল স্টেশনের সামনে মিছিল ও পথসভা করে। ধর্মঘট সমর্থন কারীরা দোকান, বাজার, গাড়ির চালকদের অনুরোধ করেন ধর্মঘটে অংশ নিতে। প্রচারে বাধা দিতে দেখা যায় পুলিশ প্র শাসনকে। এর বিরুদ্ধে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করতে দেখা যায় পুলিশ কে। জোর করে অবরোধ তুলে দিয়ে কর্মীদের টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ। ২৯ জন ধর্মঘট সমর্থনকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলনের চাপে পড়ে বুধবার দুপুরে সকলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। 

হাওড়া জেলার চালু থাকা ১২ টি জুট মিলের মধ্যে ৬ টি জুট মিলে ১০০ শতাংশ কাজ বন্ধ ছিল। বাকি জুটমিলে অন্যান্য দিনের থেকে অর্ধেক মিল শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। জেলার সর্বত্র এল আই সি, ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিস বন্ধ ছিল। অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলেও কয়েকটি ব্যাঙ্ক খোলা ছিল। জেলার ছোট কলকারখানায় ধর্মঘটের প্রভাব ছিল বেশি। এ জে কাস্ট, বি আই সি, ভারত রোল কারখানা ছিল বন্ধ। সরকারী ব্রিজ এন্ড রুফ কারখানায় ৭০ শতাংশ কাজ বন্ধ, এইচ ডি সি, পেপসিকো, অম্বুজা সিমেন্ট কারখানায় কাজ  অর্ধেক ছিল বন্ধ। জেলার ছয়টি শিল্প তালুকের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বন্ধ। স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়নি বহু শিল্প তালুকে। বুধবার সকাল থেকেই বাস, মিনিবাস, অটো, টোটো, অন্যান্য দিনের মতো চলাচল করেছে কম। রাস্তায় পরিবহনের অন্যান্য দিনের থেকে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা ছিল কম। পুলিশের অতি সক্রিয়তার কারণে বাস, মিনিবাস চালাতে বাধ্য হয়েছেন মালিকপক্ষ।

ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার সকালে ডোমজুড় , বালি হল্ট, বালি, উত্তর হাওড়ার বাঁধা ঘাট মোড়, হাওড়া ময়দান, ইছাপুর মোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ের জানা গেট,, সাঁকরাইল চূনাভাটি মোড , পাঁচলা রানিহাটি মোড়ে অবরোধ চলাকালীন সময়ে অতর্কিতে পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে অবরোধকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।  পুলিশ জোর করে অবরোধ তুলে দিতে এলে ধর্মঘট কারীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। ডোমজুড়ের ধর্মঘট সমর্থন কারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ধর্মঘট ভাঙতে পুলিশের সাথে অতি সক্রিয় দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের। 

ধর্মঘটের সমর্থনে উলুবেড়িয়ায় মিছিল ও গরুহাটায় অবরোধ হয়। উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে রেল অবরোধ করে ধর্মঘটীরা। নীমদিঘী মোড়ে ১৬নং জাতীয় সড়ক অবরোধ। ধর্মঘটের সমর্থনকারীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় জিআরপি।

ধর্মঘটে মুর্শিদাবাদ জুড়ে রাস্তায় থাকলেন বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক, কৃষক সংগঠন ও গণআন্দোলনের নেতাকর্মীরা।  ফারাক্কা ব্যারেজ ও অর্জুনপুর বাজার বন্ধ ছিল। আম্বুজা সিমেন্ট কারখানার কর্মচারী থেকে ঠিকাশ্রমিকরা ধর্মঘটে অংশ নেন। সকালে কারখানার গেটে পিকেটিং হয়। এনটিপিসির ঠিকাশ্রমিকদের বড় অংশ ধর্মঘটে অংশ নেন। ফরাক্কায় প্রায় ২৫ মিনিট ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বুধবার বহরমপুরে ধর্মঘটের সমর্থনে কেন্দ্রীয় মিছিল হয়। জেলা প্রশাসনিক ভবনের রাস্তা, রানীবাগান হয়ে টেক্সটাইল মোড়ে মিছিল শেষ হয়। মাঝে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। এদিন জলঙ্গী,  ডোমকল, হরিহরপাড়া, কান্দী, ভগবানগোলা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল, পথ অবরোধ হয়। সকালে লালগোলা স্টেশনে ধনধান্য এক্সপ্রেস আটকে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। সাড়া দিলেন জেলার বিভিন্ন চটকল, কারখানার শ্রমিক ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। বজবজ, বিড়লাপুর, মহেশতলা, সোনারপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় শিল্প, কল কারখানায় ধর্মঘটে ভালো প্রভাব পড়েছে। বিড়লাপুর চটকলের ৪৬০০ শ্রমিক এদিন কাজে যোগ দেন নি। চিবিয়ট, ক্যালোডনিয়ান জুটমিল, বিষ্ণুপুরের সেঞ্চুরি কারখানায়, সোনারপুরের ডাবর, শালিমার কারখানায় ধর্মঘট পালিত হয়েছে। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। জেলায় বেসরকারি বাস, অন্যান্য পরিবহন ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বন্ধ ছিল। সুন্দরবন অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ ফেরিঘাট বন্ধ ছিল। মৎস্যজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে কাজে যাননি। এদিন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে ব্যাঙ্ক, বীমা, ডাকঘরে। জেলার ধামুয়া, হোটর, সংগ্রামপুর স্টেশনে রেল অবরোধ করেন ধর্মঘট সমর্থকরা। 

২০১১ সালের পর এই প্রথম তৃণমূলের মস্তানবাহিনী বাঁকুড়ায় বুধবার প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ল। এদিন বাঁকুড়া জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে ধর্মঘট ভাঙ্গতে এসেছিল তৃণমূলের বাহিনী। দফায় তারা হুমকি দেয়। কিন্তু ধর্মঘটী শ্রমিক, কর্মচারীদের মেজাজের কাছে দাঁড়াতে পারেনি রাজ্যের শাসকদলের দলের লোকজন। দফায় দফায় তারা হামলা চালাবার চেষ্টা করে। যতবার ধর্মঘট ভাঙ্গার হুমকি দিয়েছে ততবার লালঝান্ডার মানুষজনের গলার আওয়াজ বেশি হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তারা। পরে ফের জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে থেকে ৫০ মিটার দুরে মাইক নিয়ে হুমকি দিতে থাকে। সেই হুমকিও উপেক্ষা করে ধর্মঘটীরা। তাদের সামনে দিয়েই মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়। বাঁকুড়া শহরের বহু মানুষ এদিন এই দৃশ্য দেখেন। অন্যদিকে এদিন সকালেই বাঁকুড়া রেলস্টেশনে গুডসের মুটিয়া শ্রমিকরা গুডসের সামনে পথ অবরোধে নামেন। তাঁদের অবরোধের ফলে বাইরে থেকে আসা বাস আটকে যায়। এদিন রেকে মাল এলেও কোন মুটিয়া শ্রমিক কাজ করেননি। রেলওয়ে গুডস শুনশান ছিল। নতুনগঞ্জে মুটিয়া শ্রমিকরাও মিছিল করেন। বুধবার বাঁকুড়া আদালত, রেজিস্ট্রেশন অফিসে কাজ হয়নি। জেলা প্রশাসনিক ভবনেও কর্মচারীর সংখ্যা কম ছিল। বাঁকুড়া শহরের বেশিরভাগ ব্যাঙ্কই বন্ধ ছিল। কর্মচারীরা কাজ করতে আসার পর ধর্মঘটীদের অনুরোধে তাঁরা কাজে যোগ দেননি। 

বাঁকুড়া গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসও বের হয়নি। বাইরের তিনটি বাস বাঁকুড়ায় আসার পর তাদের আর বের হতে দেওয়া হয়নি। জেলার বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর কারখানাগুলিতেও হাজিরা অনেক কম ছিল।  খুচরো দোকানপাট কিছু খোলা ছিল বিভিন্ন জায়গায়। বিষ্ণুপুর, খাতড়া সহ জেলার প্রায় সমস্ত সরকারি অফিসেই হাজিরা কম ছিল। প্রতিটি জায়গাতেই ধর্মঘটীরা মিছিল, অবস্থান করেন। 

স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট হলো জলপাইগুড়িতে। সকাল থেকেই দোকান বাজার ছিল বন্ধ। অন্যান্য বন্ধে কিছু কিছু শপিং মল খোলা থাকলেও এবারের বন্ধে শহরের সমস্ত শপিং মল ছিল বন্ধ। বুধবার সকাল সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে পুলিশি তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ধর্মঘটি নিজের দেখলেই সকাল থেকে আটক করা শুরু করে পুলিশ সকালে নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট এর পুলিশ সকালের বাসগুলিকে একে একে বের করা শুরু করে সেই সময় বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত ছাত্র যুব নেতৃত্বকে পুলিশ জোর করে টানতে টানতে পুলিশের ভ্যানে তুলে আটক করে সকালে নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট বিপদ থেকে আটক করা হয় গত লোকসভা নির্বাচনে  সিপিআই(এম)  তরফে লড়াই করা বামফ্রন্টের প্রার্থী বর্তমান জলপাইগুড়ি শহরের সদর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক দেবরাজ বর্মন ডি ওয়াই এফ আই জেলা সম্পাদক বেদব্রত ঘোষ, ছাত্রনেতা অর্ণব সরকার পাপাই মোহাম্মদ সিআইপি নেতৃত্ব নীলাঞ্জন নিয়োগী সহ ১৫ জন বন সমর্থনকারীকে।

সাধারণ ধর্মঘটের উপর অত্যাচার চালালো মমতা ব্যানার্জীর পুলিশ। রক্তাক্ত হলো চার জন, গ্রেপ্তার ১৭ জন বাম নেতা কর্মী। গণতন্ত্রর কন্ঠরোধ করতে তৃণমূল সরকার বাংলায় পুলিশ রাজ কায়েম করার ঘটনাকে ধিক্কার  জানিয়ে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক বিজয় পাল বলেন, জেলা জুড়ে গরীব ক্ষেতমজুর, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ সহ বেকার যুবক সহ বঞ্চিত সরকারী কর্মচারী এই পুলিশি গুন্ডাগিরিকে প্রতিহত করে রাস্তায় থেকে ধর্মঘটকে সর্বাত্মক চেহেরা দেওয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই লড়াই নতুন ভাবে বীজ রোপন করলো। পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ লেলিয়ে জেলার ঘাটাল, দাসপুর, মেদিনীপুর শহর, খড়্গপুর শহরে পুলিশি সন্ত্রাস চলেছে।’’

সাত সকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই জেলার ২২টি ব্লক জুড়েই শতাধিক স্থানে রাস্তা দখল করেন ধর্মঘটী মানুষ। মেদিনীপুর শহরে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রীশূন্য সরকারী বাসে পুলিশ যাত্রী হয়ে গাড়ী চালায়। সেই পুলিশ কর্মীদের অনেকের বুকে সিসি ক্যামেরা। প্রতিবাদের মুখে পড়ে সিআইটিইউ জেলা সম্পাদক গোপাল প্রামানিক, সুকুমার আচার্য সহ আট জনকে গ্রেপ্তার করে তুলে নিয়ে যায়। জেলার দাসপুরের চাঁইপাঠ, খড়্গপুর শহর মিলিয়ে  জেলায় মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দাসপুরের গৌরা ও ঘাটালের ঘড়িমোড়ে ধর্মঘটীদের উপর লাঠি চার্জ করে পুলিশ। চার জন রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ চলে। জেলার ১৬ নম্বর  জাতীয় সড়কের নারায়নগড়, দাঁতনের মনোহরপুর, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সতকুই, চন্দ্রকোনারোড, এবং ৬ নম্বর  জাতীয় সড়কের  লজমাপুর, ডেবরা ও আষাঢ়ীতে  অবরোধ বিক্ষোভ চলে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি সহ প্রতিরোধ করেই।

মেদিনীপুর কলেজের মর্নিং ও ডে সেকশানে কোনো পড়ুয়া সহ শিক্ষক আজ আসেন নি। এস এফ আই এর পিকেটিং সরিয়ে পুলিশ বেলা ১ টায় গেট  খুলে দেখেন জনমানব শূন্য। মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় সাধারণ মানুষ অপেক্ষা পুলিশ ও র‍্যাফ বাহিনীর লোক সংখ্যা বেশী ছিলো। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে  এস এঔ আই আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ সহ পথ অবরোধ করায় চার কিমি পথে তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ হয় যানবাহন। মেদিনীপুর শহরে কেরানীতলার চার মাথার মোড়ে চলে ফুট টেনিস খেলা।

জেলার বহু গ্রামপঞ্চায়েত দপ্তরে  তালা লাগিয়ে  জবকার্ড হোল্ডার সহ ক্ষেতমজুর মানুষ ধর্মঘটে সামিল হোন। দাসপুরের মাজুরিয়া অঞ্চল দপ্তরের  সামনে প্রতিরোধ করেই বিক্ষোভ সহকারে গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তর অচল করে গ্রামের মানুষ। জেলা জুড়ে ৫৮ টি রাজ্য সড়ক অবরোধ করে ধর্মঘটীরা।

ব্যাঙ্ক বীমা ডাকঘর এমন কেন্দ্রীয় সরকারের বহু বিভাগে ধর্মঘট সর্বাত্মক হয় জেলায়। শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটে বহু শ্রমিক সামিল হয়। তৃণমূল কংগ্রেস ও পুলিশের  হুমকির কারনে অনেকেই বাধ্য হয় কাজে আসতে। মেদিনীপুর শহর সহ জেলা জুড়ে পুলিশই দোকানদার সহ মলগুলিতে দোকান খুলে রাখার নির্দেশ দেয় এমনো অভিযোগ তোলেন দোকান কর্মচারীরা।

Comments :0

Login to leave a comment