বামফ্রন্ট প্রস্তুত ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কোনও প্রস্তুতিই ছিল না।
সর্বদলীয় বৈঠক ছাড়াই, মমতা ব্যানার্জির ইচ্ছা মতো নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা বৃহস্পতিবারই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছেন। তাঁর ঘোষণা অনুসারে শুক্রবার থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্যের অনেক জায়গাতেই প্রশাসনের সেই প্রস্তুতি দেখা যায়নি।
কোথাও বামফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে না পেরে ফিরে এসেছেন। কোথাও অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে। তারই মধ্যে রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় তৃণমূল তাদের চরিত্র অনুযায়ী বামফ্রন্ট প্রার্থী, কর্মীদের হুমকি দিয়েছে। মারধর করেছে।
আবার কিছু জায়গায় সেই আক্রমণ প্রতিহত করেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা।
এদিনই অধিকাংশ জেলায় বামফ্রন্ট জেলা পরিষদ স্তরে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলন করেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। এদিন রাজ্য বামফ্রন্টের তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখে অব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে দাবি করা হয়েছে মনোনয়ন জমার জন্য অতিরিক্ত সময় দিতে হব।
রানিবাঁধে দেখা যায় অপ্রস্তুত কমিশনের হাল। এদিন সকালে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে মিছিল করে রানিবাঁধে মনোনয়নপত্র তুলতে যাওয়া হয়। সকাল ১১টায় ব্লক অফিসে পৌঁছানোর পর দেখা গেল সেখানে লোকজন নেই। সকাল সাড়ে দশটা থেকেই মনোনয়নপত্র দেওয়ার কথা।
কিন্তু একজন কর্মী, আধিকারিককে পাওয়া গেল না। আবার বেশ কিছুক্ষণ পর কয়েকজন এলে সেখানে আবার ডিসিআর নেই। ডিসিআর না কাটলে মনোনয়নপত্র দেওয়া যাবে না। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। প্রায় সাড়ে বারোটার পর ডিসিআর কেটে ফরম দেওয়া শুরু হয়। যথেষ্ট মনোনয়ন পত্রও ছিল না। পরে তা আনা হয়।
এদিন রানিবাঁধে রাজাকাটা, রানিবাঁধ, অম্বিকানগর, রুদঢ়া, হলুদকানালী গ্রামপঞ্চায়েতের জন্য সিপিআই(এম)’র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তোলেন। কয়েকজন পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীও মনোনয়নপত্র তোলেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটেৃর ২টি ব্লক, হাড়োয়া, পুরুলিয়ার বরাবাজার, মানবাজার, বলরামপুর, রঘুনাথপুর, পূর্ব মেদিনীপুরের ২৫টি ব্লকে, কোচবিহারে প্রতিটি ব্লকে এক ছবি। বিসিআর ছিল না কোথাও।
বাঁকুড়ার মেজিয়াতেও মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কোনও ডিসিআরই এখানে আসেনি। বিডিও সহ বাকি আধিকারিকরা জানান, তাঁরা অসহায়, বাঁকুড়া থেকে ডিসিআর আসেনি। তখন বলা হয় এটা যেন রেজুলেশনে লেখা হয়। শনিবার ডিসিআর কাটার পর সেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে।
সিপিআই(এম) সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই দাবি জানানোর পর ডিসিআর ছাড়াই সমস্ত প্রার্থীদের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেওয়া হয়।
বীরভূমের অনেকগুলি জায়গায় ধরা পড়েছে এই চিত্রই।
যদিও শুক্রবার সকালে সাংবাদিক সন্মেলনে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় দাবি করেছিলেন, ‘‘নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব এদিন থেকে শুরু হয়েছে। প্রশাসন মনোনয়ন পর্ব সুষ্ঠু ও শান্তিপূ্র্ণ করার জন্য পরিকল্পনা করে প্রস্তুত আছে।’’ পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত জেলা পুলিশ সুপারেরও দাবি, ‘‘নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’’
কিন্তু বাস্তব ছবি ভিন্ন। যেমন নলহাটি ২নং ব্লকের সিপিআই(এম)’র দুই প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে দেখেন ন্যূনতম কোনও ব্যবস্থাই সেখানে ছিল না। ভদ্রপুর-২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের মোস্তাফাডাঙ্গা পাড়া এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের দুই প্রার্থী মেহেন্নেগার বিবি ও সুমিতা কোনাই মাল এদিনই মনোনয়ন দাখিলের জেদ নেন। ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন।
দশটায় ব্লক অফিসে ঢুকে প্রার্থীরা বের হয় প্রায় তিনটে নাগাদ। ব্লক অফিসের সামনে এরপর হয় মিষ্টিমুখ। রামপুরহাট ২নং ব্লকে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মীদের মুখে শুনতে হয়েছে তাঁদের নাকি প্রশিক্ষণ এখনও হয়নি। এদিন সন্ধ্যায় হবে, তারপর মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। ইলামবাজার ব্লকে সিপিআই(এম)’র তরফ থেকে নানাশোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে মনোনয়ন দাখিল করতে গেলে প্রস্ততির অভাবে সেখানেও ফিরে আসতে হয়েছে।
শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর, মগরাহাট ২, বজবজ ২, ডায়মন্ডহারবার ১সহ বিভিন্ন ব্লকে মনোনয়ন সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকায় মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া যায়নি। সাগর ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সিপিআই(এম) সাগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিধান দাশকে মনোনয়নপত্র দিতে অস্বীকার করেছেন। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেছে অথচ এই ব্লকে নতুন বিডিও হিসাবে এখনো কেউ দায়িত্ব নেননি বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ঘটেছে অশান্তির ঘটনাও। সিপিআই(এম) প্রার্থীদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এই ঘটনাটি ঘটেছে মথুরাপুর ১ ব্লক দপ্তরে।
অভিযোগ,শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআই(এম) প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে মথুরাপুর ১ ব্লক দপ্তরের কাছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয় হামলা চালায়। তাঁদের কাছ থেকে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়।
এই ঘটনায় মথুরাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ক্যানিং ১, ভাঙড় ২ ব্লকেও সশস্ত্র তৃণমূল দুষ্কৃতীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বিরোধীদের উপর আক্রমণ করে। এই ঘটনায় সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী জেলা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
Comments :0