দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি
প্রতিদিন পাতা মিলছে না, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করে পাতা তোলা বন্ধ রাখছে ছোট চা বাগানগুলি। উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যের মোট চা পাতা উৎপাদনের ৬০ শতাংশের কাছাকাছি পাতা আসে ছোট চা বাগান থেকে। আবহাওয়ার সঙ্কট সেই ছোট চা বাগান থেকেই পাতা কেড়ে নিচ্ছে। ছোট বাগানে পাতা তোলা সপ্তাহে দু’-তিন দিন বন্ধ থাকায় আয় কমছে শ্রমিকদেরও। যদিও তাঁদের আশা, কয়েক পশলা বৃষ্টি হলেই পাতার পরিমাণ ফের বাড়বে।
২১ মে ‘আন্তর্জাতিক চা দিবস’। জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন দিনটি পালন করে। একটি লোগো প্রকাশিত করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সঙ্কটের কথা বলছে ছোট আয়তনের চা চাষে যুক্ত অংশ। নিজেদেরকে চাতক পাখির সঙ্গে তুলনা করলেন জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘করোনা কালের চেয়েও এবারের অবস্থা কঠিন, একদিকে জল নেই, আমরা চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে প্রার্থনা করছি জল দাও জল দাও বলে। একদিকে চা বাগানের ক্ষেত্রে যে তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ডিগ্রি, এবং রাতে বৃষ্টি দিনে রোদ এই দু’টির বড় অভাব দেখা দিয়েছে। যে কারণে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে আমাদের।’’
মূলত, বৃষ্টির অভাবেই উত্তরের চা বাগিচায় পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ছোট-বড় সব বাগানেই পাতার সঙ্কট দেখা গিয়েছে। চা পর্ষদের তরফেএখনও তথ্য প্রকাশ করা না হলেও এপ্রিল এবং মে মাসে অর্ধেকের বেশি উৎপাদন কমেছে বড় বাগানের। সাধারণত বড় বাগানে একাধিক ডিভিশন থাকে। সব মিলিয়ে পাতার উৎপাদন কমলেও বাগান সচল রয়েছে। সমস্যায় ছোট বাগানগুলি। এক-একটি বাগান গড়পড়তা পাঁচ বিঘা বা তার কম এলাকা জুড়ে রয়েছে। সেখানে পাতা মেলাই দায় হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে সপ্তাহে দু’-তিন দিন উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ছোট বাগানগুলিকে। ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের (সিস্টা) সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “পাতা তোলা সপ্তাহে কয়েক দিন বন্ধ করা ছাড়া, উপায় নেই। পাতাই পাওয়া যাচ্ছে না। এক দিন পাতা তোলা হলে, পরের দিন গাছে আর পাতা মিলছে না। সে কারণে এক-দু’দিন বন্ধ রেখে বাকি দিনগুলোয় তোলা হচ্ছে।”
উত্তরবঙ্গে যে ‘সিটিসি’ চা পাতা তৈরি হয় তার বেশিরভাগটাই আসে ছোট বাগান থেকে। উত্তরবঙ্গের ‘সিটিসি’ চায়ের ভাল চাহিদা রয়েছে গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রে। পাতার সঙ্কটের জন্য এ বারে সেই রপ্তানি কতটা হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। দেশের চা পাতা প্রস্তুতকারী নামী দু’টি সংস্থা উত্তরবঙ্গের ছোট বাগানের চা পাতা চুক্তির মাধ্যমে কেনে। সেই সংস্থাগুলিকে পাতা সরবরাহ কতটা করা যাবে তা নিয়ে সংশয়ে ‘বটলিফ’ কারখানাগুলি। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কাও। খোলা বাজারে চায়ের সরবরাহে টান পড়লে দাম বাড়বেই বলে আশঙ্কা। সেই সঙ্গে রোগ-পোকার আক্রমণে পাতার গুণমান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
Comments :0