SFI JADAVPUR UNIVERSITY

নজর ঘোরাতে মরিয়া মমতা, যাদবপুরে মদত তৃণমূলেরই, পালটা এসএফআই

রাজ্য

SFI TMCP JADAVPUR UNIVERSITY STUDENTS POLITICS BENGALI NEWS SWAPNADIP STUDENTS DEATH

যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপের রহস্য মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ৫দিন। অভিযোগ, ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে ৩জন গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের ধারায় মামলা দায়ের হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ডাব্লিউটিআই বা ‘উই দ্যা ইনডিপেন্ডেন্ট’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। একই ভাবে নাম জড়িয়েছে ফাকাল্টি অফ আর্টস স্টুডেন্টস বা ফ্যাস নামের একটি সংগঠনেরও। ফ্যাসের সঙ্গেও তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। উঠছে চরম প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ। 

কিন্তু দোষী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে একটিও শব্দ খরচ না করে সিপিআই(এম)কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিলেন মমতা ব্যানার্জি। 

বেহালার ম্যান্টনের দলীয় মঞ্চ থেকে সোমবার বিকেলে সরাসরি ‘মার্কসবাদী সিপিএম’কে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

তিনি বলেছেন, ‘‘যারা ছেলেটাকে উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল তারা কারা? এরা মার্কসবাদী। এদের কাছে তৃণমূল এক নম্বর শত্রু। এদের কোনও আবেগ বিবেক নেই। এরা কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে ঘর করে, আবার কখনও বিজেপির সঙ্গে ঘর করে।’’ 

মর্মান্তিক ঘটনায় প্রমাণ ছাড়াই রাজনীতির কৌশলে ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করেছে এসএফআই। সংগঠনের নেতারা বলেছেন দায়ী সংগঠনের সঙ্গে তৃণমূলের স্পষ্ট যোগ রয়েছে। তৃণমূলই এদের আড়াল করে।

মমতা ব্যানার্জির আরও এগিয়ে ঘটনার সঙ্গে ‘সিপিএম’-কে যুক্ত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সবাইকে দোষ দিই না। কয়েকটা সিপিএম আছে যারা মনে করে গ্রামবাংলা থেকে কোনও ছেলে এলে তার ওপর অত্যাচার করা তাদের অধিকার। জামাকাপড় খুলে নিচ্ছে।’’

এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন, ‘‘যাদবপুরকে এরা আতঙ্কপুর বানিয়ে ছেড়েছে। সব জায়গায় গেলেও আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করে না। নিজেদের রেড ফোর্ট বানিয়ে রেখেছে।’’

মমতা ব্যানার্জির এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উঠে আসছে একাধিক মত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া, প্রাক্তন পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষকদের একটা অংশ বলছেন, ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বপ্নদীপ হত্যাকান্ডে নাম জড়ানো প্রতিটি সংগঠন ঐতিহাসিক ভাবে এসএপআই’র বিরোধী। সংগঠিত বামপন্থী আন্দোলনেরও বিরোধী। বিভিন্ন ঘটনায় তা দেখাও গিয়েছে।  

প্রসঙ্গত, সোমবার সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে র‌্যাগিং ইস্যুতে সাধারণ সভা বা জিবি ডাকা হয়। সেখানে ডব্লিউটিআই কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন এসএফআই কর্মী শুভম। তাঁর অপরাধ? তিনি জিবিতে বলেছিলেন, স্বপ্নদীপের হত্যার জন্য ডাব্লিউটিআই সরাসরি দায়ী। সাধারণ পড়ুয়ারাও একই কথা বলেন। জিবি ভেস্তে দিতে উপর আক্রমণ চালানো হয়। বর্তমানে কেপিসি হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন সায়েন্স ফ্যাকাল্টির এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক শুভম। 

এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক প্রতীক উর রহমানের কথায়, ‘‘যাদবপুর কিংবা প্রেসিডেন্সির মত শিক্ষায় এগিয়ে থাকা ক্যাম্পাসগুলি টিএমসিপি এবং এবিভিপিকে বর্জন করেছে। তাই এরা ডব্লিউটিআই কিংবা আইসি’র মত সংগঠনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসগুলিতে দাপিয়ে বেড়ায়। এরা নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করলেও তৃণমূল এবং কিছু ক্ষেত্রে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলে এরা।’’ 

রহমান আরও বলেছেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নো ভোট টু বিজেপি নামের একটি প্রচার শুরু হয়। সেই প্রচারের পিছনেও এই সংগঠনগুলির একটা অংশের মাথা ছিল। আসলে যাদবপুর কিংবা প্রেসিডেন্সির এই অংশের পড়ুয়াদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের কাজের রাজনৈতিক ভ্যালিডেশন বা সহমতের বলয় গড়ে তোলে তৃণমূল। আর তার বদলে এদের ক্যাম্পাস কিংবা হস্টেলে দাপিয়ে বেড়ানো, আধিপত্য কায়েমের সুযোগ করে দেয় তৃণমূল। আর সেই আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি জন্ম দেয় র‌্যাগিং সংস্কৃতির। স্বপ্নদীপ তার বলি হয়েছে।’’ 

এসএফআই’র সরাসরি দাবি, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পিছনে কাজ করেছে প্রশাসনিক গাফিলতি এবং স্থবিরতা। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কেউ এর দায় এড়াতে পারবে না। মমতা ব্যানার্জি এটা বোঝেন। আর বোঝেন বলেই সিপিআই(এম), এসএফআই এবং সার্বিক ভাবে সংগঠিত বাম রাজনীতির বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

ছাত্র মহলের বক্তব্য, মেন হস্টেলে দিনের পর দিন বহিরাগতরা, পাস করে যাওয়া ছাত্ররা থাকছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রশ্রয় ছাড়া কীভাবে সেটা সম্ভব? 

এসএফআই’র অভিযোগ, এই বহিরাগত ‘দাদাদের’ অত্যাচারের দাপটে এসএফআই সমর্থকদের হস্টেল ছাড়া হতে হয়। ডব্লিউটিআই কিংবা ফ্যাসের নেতারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এমন বোঝাপড়া তৈরি করেছেন, যে এই সংগঠনগুলির অনুসারী না হলে মেন হস্টেলে ঘর পাওয়া যায়না। আর পেলেও সেখানে কয়েক সপ্তাহের বেশি টেকা যায়না। 

এসএফআই’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাঞ্জন দে’র প্রশ্ন, ‘‘মেন হস্টেলে কেন বহিরাগত দাদারা দখলদারি চালিয়ে যাবে? কারা তাঁরা? ডব্লিউটিআই, ফ্যাস, ডিএসএফ’র মত এই সংগঠনগুলির নেতারা কোন তৃণমূল কিংবা বিজেপি নেতার সঙ্গে যোগসাজোশ করে মেন হস্টেল দখল করে রেখেছিল তারও তদন্ত প্রয়োজন। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পরে কর্তৃপক্ষের মনে হল মেন হস্টেল থেকে বহিরাগতদের বের করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর কীভাবে তাঁরা এভাবে টিকে থাকলেন?’’ 

ছাত্রদের প্রশ্ন, ছাত্র খুনের বিচার চাই মার্কা স্লোগান তুলে মিছিল করলেও তৃণমূল কেন বলতে পারছে না এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ফ্যাস, ডাব্লিউটিআই কিংবা ডিএসএফ নেতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তার বদলে সিপিআই(এম) এবং এসএফআই’কে আক্রমণ করা হচ্ছে। তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি এবং মিডিয়ার একটা অংশও সেই প্রচারে সামিল হয়েছে। 

এর পাশাপাশি এসএফআই’র প্রশ্ন, নবাগত প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য নিউ বয়েজ হস্টেল প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তারপরেও তাঁদের মেন হস্টেলে পাঠানো হল। আসলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবে এই পড়ুয়াদের বহিরাগতদের হাতে তুলে দিয়েছে। 

বাংলায় র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে এসএফআই’র। সেই বিষয়টি তুলে ধরে ছাত্রনেতারা বলছেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল গঠনের দাবিতে আন্দোলন করে এসএফআই। তৎকালীন রাজ্য সরকার সেই দাবি মেনে নিয়ে রনির্যাতন বিরোধী সেল গঠনও করে। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যের সমস্ত ক্যাম্পাসে অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল গড়ে ওঠে। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে সবটাই ঠান্ডাঘরে। সেই গাফিলতির বলি হয়েছে স্বপ্নদীপ। সেটা আড়াল করতেই মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী।

 

Comments :0

Login to leave a comment