নিশীথ চৌধুরি
SAIL, CIL, BHEL, NTPC, IOC, GAIL ইত্যাদির মতো অত নামী দামি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নয় ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড। কোম্পানির নিজস্ব তেমন কোনও জমি জায়গাও নেই। কিন্তু লাগাতার ভাবে লাভজনক হওয়ায় সংস্থাটি একটি স্বীকৃত ‘মিনি রত্ন কোম্পানি’। উদারীকরণের পথে চলা ভারতবর্ষে সেই ১৯৯৯ সাল থেকেই FSNL কে বিলগ্নিকরনের তালিকায় রাখা হয়। ২০০৩ সালের ১ আগস্ট D.O.No-137-C.M. মারফত রাজ্যের তদানিন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই প্রচেষ্টা বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারকে চিঠি দেন। সে সময় প্রক্রিয়া কিছুদিনের জন্য স্থগিত থাকলেও আবার ২০১৬ সাল থেকে সরাসরি ১০০% বিলগ্নিকরণের তালিকায় রাখা হয়েছিল সংস্থাটিকে। সে বছর অক্টোবর মাসে নিতিগতভাবে এই সিদ্ধান্তে মন্ত্রীসভা সিলমোহর দিলেও পরের বছরই সরকার এই নিতিকে বাতিল ঘোষণা করে। সে বছর জুলাই মাসে পিটিআই-কে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তদানিন্তন ইস্পাত সচিব অরুণা শর্মা জানান, “আমরা বিলগ্নিকরণের তালিকা থেকে FSNL কে সরিয়ে দিচ্ছি কারণ এই সংস্থার নিজের কিছু নেই, কোনও জমি নেই, আছে কিছু যন্ত্রপাতি মাত্র … রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হবার কারণে FSNL কে SAIL স্ক্র্যাপ বিক্রির বরাত দিয়েছে।”
তবু এই যুক্তিপূর্ণ পূর্ব সিদ্ধান্তকে কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে নাম মাত্র মূল্যে সংস্থাটিকে জাপানি এক কোম্পানি ‘কোনোইকে ট্রান্সপোর্ট’এর হাতে তুলে দেবার জন্য মোদী সরকার খড়্গহস্ত। সরকারি নির্দেশে ‘শেয়ার পার্চেজ এগ্রিমেন্ট’স্বাক্ষরিত হয়েছে জাপানি ঐ সংস্থা ও মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেড কর্পোরেশন (MSTC)-এর মধ্যে গত ২৪ অক্টোবর ২০২৪। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধের কোনও গুরুত্ব দেয়নি এই রাজ্যের সরকার। তারা যথারীতি মৌন থেকেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড হল স্ক্র্যাপ এবং স্ল্যাগ রিকভারি, প্রসেসিং এবং হ্যান্ডলিং-এর কাজে নিযুক্ত একটি বিশেষ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। বর্তমানে, এই সংস্থা দেশের প্রায় সমস্ত ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্টগুলিতে পরিষেবা প্রদান করছে যেমন, SAIL (ভিলাই, রৌরকেলা, বোকারো, দুর্গাপুর, আইএসপি বার্নপুর এবং সালেম স্টিল প্ল্যান্টগুলিতে), আরআইএনএল বিশাখাপত্তনম, টিএসএলপি’র নীলাচল ইস্পাত নিগম লিমিটেড দুবুরি, আর্সেলর মিত্তাল নিপ্পন স্টিল প্ল্যান্ট, মিহরা সুরত ধাতু নিগম হায়দ্রাবাদ, এনএমডিসি ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্ট, নারারনার। FSNL সাম্প্রতিক অতীতে BHEL হরিদ্বার এবং এয়ার ইন্ডিয়া, মুম্বাই, VISP ভদ্রাবতী প্ল্যান্টের জন্যও কাজ করছিল। বাৎসরিক রিপোর্ট অনুসারে FSNL প্রতি বছরই মুনাফা অর্জন করে আসছে, গত কয়েক বছরের হিসাব নিম্নরুপ:
বৎসর মোট রেভেনিউ (কোটি টাকা) ট্যাক্স পরবর্তী মুনাফা (কোটি টাকা)
২০২০ ৪০৯.৯০ ৩০.৫৮
২০২১ ৩৬৪.৯৭ ২২.৭৫
২০২২ ৪১৫.৩৮ ৪০.৩৬
২০২৩ ৪১৪.১৬ ৩৮.৩৭
২০২৪ ৪৬৭.৭২ ৬৪.৯২
এ ছাড়াও প্রতি বছর শেয়ার হোল্ডারদের উচ্চহারে ডিভিডেন্ড দিয়ে আসছে এই সংস্থা। এই মুহুর্তে FSNL এর হাতে রিজার্ভ ফান্ড আছে ১২৪ কোটি টাকা, যন্ত্রপাতি আছে ৮১ কোটি টাকা মূল্যের, বাজারে পড়ে আছে ২০২ কোটি টাকা, পরবর্তী দু’বছরের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’আছে ১০০০ কোটি টাকার অর্থাৎ এই সমস্ত সম্পদ থেকেই সংস্থার ট্যাক্স পূর্ববর্তী মুনাফার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবার কথা ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। এ হেন এক সংস্থার মূল্যায়ন করা হয়েছে মাত্র ২৬২ কোটি টাকা।
FSNL, রাষ্ট্রায়ত্ত এমএসটিসি’র একটি সাবসিডিয়ারি সংস্থা। এমএসটিসি’র ৩৫ শতাংশ শেয়ার আবার ইতিমধ্যেই বিলগ্নিকরণ হয়ে গিয়েছে। এমএসটিসি’র বাৎসরিক মুনাফার ৩০ শতাংশই আসে FSNL থেকে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের মুনাফার অঙ্ক তো কমে যাবে। এমএসটিসি’র শেয়ার হোল্ডারদের FSNL বেচে দেবার বিরুদ্ধে মতামত, ‘ভারত সরকার এবং বিশেষ করে ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যা ন্ড পাবলিক অ্যাসেট মেনেজমেন্ট-এর সিদ্ধান্ত’এই অজুহাতে ধোপে টেকেনি।
‘কোনোইকে ট্রান্সপোর্ট’কোম্পানিটি ভারতবর্ষে নতুন না, ২০০৮ সাল থেকে কোনোইকে এশিয়া (ইন্ডিয়া) বর্তমানে কোনোইকে ইন্ডিয়া নামে এই সংস্থাটি ২০২৪ সালে বিভিন্ন মেশিনারি ইনস্টলেশন, লজিস্টিক ও প্যাকেজিং ব্যবসার কাজে মোট ১৪.৮২ কোটি টাকার ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করে মাত্র ৩৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও হেলথ কেয়ার মার্কেটে এবং দিল্লি থেকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বন্দরগুলিতে কনটেইনার ট্রান্সপোর্টের কাজে তাদের আরও তিনটি ছোট কোম্পানি কাজ করছে ভারতবর্ষে। এ হেন সংস্থাটির গুণগান করেই অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক থেকে তাদের হাতে FSNL তুলে দেবার অনুমোদনের সাফাই দিতে গিয়ে বলেছে— কোনোইকের ইস্পাত বিভাগটি কোম্পানির একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত অংশ, যার ১৪০ বছরেরও বেশি স্টিলওয়ার্ক অপারেশনে অভিজ্ঞতা রয়েছে।
FSNL এর মূল্যায়নের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল দিল্লি বেসড ‘এএএ ভ্যালুয়েশন প্রফেসনালস এলএলপি’নামে একটি কোম্পানিকে। লেনদেন-এর উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছিল মুম্বাইয়ের একটি সংস্থা ‘বিডিও ইন্ডিয়া এলএলএপি’। নানাবিধ কারণে এই মূল্যায়ন আসলে যেন তেন প্রকারেণ বেসরকারি হাতে তুলে দেবার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। কেন এই সংস্থাকে ২০১৬ সালেই বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছিল, FSNL – এর কর্ম দক্ষতাকে আরও কি কি কাজে ডাইভারসিফাই করা যায়; সে সব বিবেচনায় না এনে বিরাষ্ট্রীয়করণের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।
বড় মাঝারি ছোট সব ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থারই ইস্পাত উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজনিয়তা হল আকরিক লৌহ। কয়লা ব্যবহারকারী স্টিল প্ল্যান্টগুলি কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর বাধ্যবাধকতার কারণে ইস্পাত সংস্থাগুলি এক দিকে যেমন হাইড্রোজেন, কোল গ্যাসিফিকেশন বা ইলেকট্রিসিটি-র মতো কম দূষণকারী উৎস ব্যবহার করার দিকে নজর দিচ্ছে, অন্য দিকে স্ক্র্যাপ প্রসেসিং এর মাধ্যমে বাতিল লোহাকে পুনরুদ্ধার করে ইস্পাত বানানোর কাজে লাগানো, এটা সব সংস্থারই বিবেচনাধীন এবং এই উদ্দেশ্যেই FSNL গঠিত হয়েছিল। সুতরাং FSNL কে যদি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বাইরে থেকে স্ক্র্যাপ সংগ্রহ ও তা প্রসেসিং করে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বিক্রয় করার অনুমতি দেওয়া হতো, তা হলে বরং এই সংস্থার কর্মকুশলতাকে প্রকৃত ব্যবহার করা যেতো। স্ক্র্যাপ বিক্রি করার কোন অনুমতি FSNL কে কোনোদিনই দেয়নি SAIL অথবা MSTC। আসলে রাষ্ট্রই তো বাধা সৃষ্টিকারী যন্ত্র এবং একটা অতি দক্ষ ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে কাদের স্বার্থ সিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার?
নিতিন গডকরির নেতৃত্বাধীন দেশের ‘রোড ট্রান্সপোর্ট ও হাইওয়েজ মন্ত্রক’ ইতিমধ্যেই একটি ‘ভেহিক্যাল স্ক্র্যাপেজ পলিসি’নির্ধারণ করেছে এবং তার মাধ্যমে দেশে ব্যবহারকারী ১৫ বছরের পুরানো সমস্ত গাড়ি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবার সাথে সাথে দেশের স্ক্র্যাপ আমদানির পরিমাণ কমে যাবে এবং ইস্পাত কারখানাগুলির জন্য কাঁচামাল হিসাবে এই স্ক্র্যাপ থেকে পুনরুদ্ধার করা লৌহ ব্যাপক হারে ব্যবহার করা যাবে। ২০২১ সালে ভারতবর্ষে স্ক্র্যাপের বাজার ছিল ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫১,৬০০ কোটি টাকার। গাড়ি বাতিলের এই সিদ্ধান্তের ফলে স্ক্র্যাপের ব্যবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটবে এবং আগামী ২৫ বছরে ইস্পাত স্ক্র্যাপের ব্যবসার পরিমান দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার। FSNL এর স্ক্র্যাপ প্রসেসিং-এর দক্ষতা এই কোম্পানিকে আগামী দিনে কোন উচ্চ পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সে কাজের দায়িত্ব সরকার দিতে চায় দেশি-বিদেশি বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে এবং FSNL এর বিরাষ্ট্রীয়করণও সেই কারণেই।
নিতিন গডকরির আর একটি সিদ্ধান্ত দেশের হাইওয়ে পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে বাতিল স্টিল স্ল্যাগকে ব্যবহার করা। তার মন্ত্রক এমন কি ইস্পাত মন্ত্রককে এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ অস্ট্রেলিয়ান কোনও এক সংস্থার মালিক ড. বিজয় জোশী’র তত্ত্বাবধানে একটি পাইলট প্রজেক্ট নির্মানের অনুরোধ করেন। এই অনুরোধের এক মাসের মধ্যেই ইস্পাত মন্ত্রক থেকে FSNL কর্তৃপক্ষকে ডেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এই ব্যাপারে পদ্ধতি উদ্ভাবনের কাজ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে ঠিক তার পরের দিনই FSNL বিক্রয়ের কথা ঘোষণা করে সরকার। দ্বিচারিতা এই সরকারের ধর্ম এ কথা আমরা জানি, নাকি ঐ জাপানি সংস্থার হাতে আরও কিছু কাজ তুলে দেবার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এ কাজ করা হলো?
স্থায়ী কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করা যাবে না এই ধরনের সরকারি নির্দেশ আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ তারিখের বিজ্ঞপ্তি নং 241-LW/4L-13(C)/78’তে বলা হয়েছে অন্যান্য কিছু কাজের সাথে দুর্গাপুর ইস্পাতে স্ক্র্যাপ হ্যান্ডলিং-এর কাজ স্থায়ী ধরনের কাজ হওয়ায় সেখানে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ওডিশা সরকারও গেজেট নোটিফিকেশন নং ১৭৩৭ মারফত রাউরকেলা কারখানায় স্ক্র্যাপ প্রসেসিং-এর কাজে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল জয়েন্ট কমিটি ফর দি স্টিল ইন্ডাস্ট্রিস (NJCS) এর ১ জুলাই ২০১৪ তারিখের চুক্তিপত্রের ৩.৬.১.২ ধারায় লেখা আছে, “ইস্পাত শিল্পে স্থায়ী কাজে কোনও ঠিকাদার বা ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না”। এই কারণেই এই কাজে পারদর্শী রাষ্ট্রায়ত্ত FSNL’কে SAIL-এর বিভিন্ন কারখানায় স্ক্র্যাপ প্রসেসিং-এর কাজে নিয়োগ করা হয়েছিল। এখন FSNL চলে যাচ্ছে জাপানি ‘কোনোইকে ট্রান্সপোর্টের হাতে। তাহলে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পের ঐ কাজ এবার কে করবে? তারও বিধান দিয়ে দেওয়া হয়েছে ঐ ‘’শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট’-এ। বলা হয়েছে হস্তান্তরের অন্ততঃ পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পে এই কাজ করে যাবে ক্রেতা কোম্পানি ‘কোনোইকে ট্রান্সপোর্ট’। এটাও তো নমিনেশন বেসিস, কিন্তু এই পদ্ধতিতো কলকাতা উচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছে সম্প্রতি। তা হলে? কত দামে সে কাজ হবে এবং পরবর্তী সময়ে এই কাজ কারা করবে সে তো পরের কথা, কিন্তু উপরে উল্লেখিত সরকারি বিজ্ঞপ্তি ও মেমোরান্ডাম অব সেটেলমেন্টগুলো? না রাজ্য সরকার, না সেটেলমেন্টে স্বাক্ষরকারী ট্রেড ইউনিয়নগুলির সাথে আলোচনা – কিছুই তো করা হলো না। কতটা বেপরোয়া আজ দেশের সরকার? আর এ সম্বন্ধে নালিশ করলেও কেন্দ্রীয় শ্রম দপ্তর তো কার্যত কোনও পদক্ষেপই নিচ্ছে না। কলকাতা উচ্চ আদালত তো FSNL কে নমিনেশন পদ্ধতিতে স্ক্র্যাপ হ্যান্ডলিং-এর কাজ দেবার সুদীর্ঘ ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছে সম্প্রতি। তার বিরুদ্ধে SAIL বা ভারত সরকারের অ্যাপিল পিটিশনের প্রত্যুত্তরে উচ্চ আদালত বলেছে ঐ ‘’শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট’এর প্রেক্ষিতে এখন “… appeal becomes infructuous or academic”। এতদসত্ত্বেও সরকার ঐ বিদেশি কোম্পানিকে SAIL অভ্যন্তরে পরবর্তী তিন বছর কাজ দেবার চুক্তি করেছে। এটা কী FSNL কর্মীদের যাবতীয় কর্মকুশলতা ঐ কোম্পানি যেন নিজেরাই সহজে শিখে নিতে পারে তার সুযোগ করে দিতে?
শ্রমিক কর্মচারীদের চাকরির স্থায়িত্ব সম্বন্ধে ‘’শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট’-এর ১১(এ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘… হস্তান্তর পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত কোম্পানি কোন এমপ্লয়িকে বরখাস্ত করবে না’। অর্থাৎ তৎপরবর্তী সময়ে এই অধিকার নতুন কোম্পানির থাকছে, সে ক্ষেত্রে অবশ্য ভিআরএস ইত্যাদির মাধ্যমে কিছু ক্ষতিপূরণের কথা লেখা আছে। কিন্তু এহেন শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী এগ্রিমেন্ট করার আগে ইউনিয়নগুলির সাথে কোনও আলোচনা হবে না? আর তা ছাড়া এই ধরনের চুক্তি তো এমন কি সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ফিলিপস ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর ১৯৯৮ সালের পিআইএল মামলার রায়ের পরিপন্থী। সে রায়ে বলা হয়েছিল শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থ বিরোধী কোন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা না থাকলে বেসরকারিকরণের পদক্ষেপে ট্রেড ইউনিয়ন কোনও বাধা দিতে পারে না। তা হলে কিভাবে হয় ঐ ধরনের শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট এবং কিভাবেই বা দেশের সরকার এই ধরনের আইন বিরোধী এগ্রিমেন্টে সিলমোহর দিতে পারে?
ইতিমধ্যেই কয়লা ক্ষেত্রে MDO-র মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনিগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া শুরু হয়েছে এবং একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত শিল্পের নিজস্ব মাইনগুলিকেও বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার, হয়তো বা সেখানেও শ্রমিক-কর্মচারীদের সম্বন্ধে একই ধরনের ধারা সংযুক্ত আছে। এখন আবার ইস্পাত কারখানাগুলির অভ্যন্তরে স্ক্র্যাপ হ্যান্ডলিং-এর একটা পুরো বিভাগই বেসরকারি হাতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এই শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে। বেসরকারিকরণের ভিন্ন একটা পন্থায় এবার কি শুরু হতে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানাগুলির এক একটা বিভাগ ধরে ধরে বেসরকারিকরণের নতুন কোনও প্রক্রিয়া? সিআইটিইউ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বহু চিঠিপত্র গেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও, অন্যান্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেয়নি যৌথ কোন কর্মসূচি বা এমনকি বিবৃতি দেয়নি কেন? প্রয়োজন এই লুটের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াই।
Comments :0