ক্রমশ বেপরোয়া ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছেন গোটা রাজ্যের মানুষ। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তার মধ্যে ২টি মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। ঠাকুরপুকুর থানার অন্তর্গত পশ্চিম বড়িশা’র বাছারপাড়ার বাসিন্দা পরশ সাউ (৬৩) সোমবার সন্ধায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে ভর্তি করা হয় নিউ আলিপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। জ্বর ও ডেঙ্গুর উপসর্গে ভুগছিলেন তিনি। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গুর উল্লেখ রয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে। সোমবারই যাদবপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন শিপ্রা ভাওয়াল( ৬২) নামে স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মী। তিনি বাঘাযতীন চিত্তরঞ্জন কলোনীর বাসিন্দা। তিনি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির মধ্য যাদবপুর আঞ্চলিক কমিটির অন্তর্গত চিত্তরঞ্জন ২ ইউনিটের সভানেত্রী ছিলেন। গোটা কলকাতাতেই ডেঙ্গু ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। কলকাতা পৌরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন বহু ওয়ার্ডেরই বাসিন্দারা।
সোমবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম সুদাম ঘোষ(৪৫), ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কান্দি মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসা চলকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের এমএসভিপি ডাঃ অনাদি রায়চৌধুরী জানিয়েছেন অত্যন্ত খারাপ অবস্থাতে আনা হয়েছিল তাঁকে, শেষ রক্ষা করা যায়নি। অন্যদিকে জানা গেছে সোমবার রাতে দক্ষিণ দমদমের বাঙ্গুর এলাকার বাসিন্দা শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৮) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। জ্বর ও ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর তাঁকে উল্টেডাঙ্গার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ডেঙ্গু রিপোর্ট পজিটিভ আসে বলে পরিবারের বক্তব্য। শুধু মাত্র দক্ষিণ দমদম এলাকাতেই ডেঙ্গুতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এলাকা সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে চলতি মরসুমে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা ৬০ বলে জানা যাচ্ছে। বেসরকারি মতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত ৪৫ হাজারের আশেপাশে। অথচ রাজ্য সরকারের তরফে নির্দিষ্ট করে কোনই তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, মৃত্যু সংখ্যাও সেই ৩-এ আটকে। এদিকে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ও গাফিলতিকে দায়ী করে কলকাতা হাইকোর্টে মঙ্গলবার দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে কেবলমাত্র উদ্বেগ প্রকাশ ও নির্দেশিকা জারি করেই ক্ষান্ত দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। প্রশাসনের লাগাতার উদাসীনতা ও গাফিলতির মাশুল গুনছেন রাজ্যের মানুষ। শহরে ও গ্রামে ডেঙ্গু মারাত্মকভাবে ক্রমবর্ধমান। চলছে মৃত্যু মিছিল। অবস্থা সামাল দিতে প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রতি পদে প্রমাণিত হচ্ছে। গোটা রাজ্য জুড়ে উঠেছে ত্রাহি ত্রাহি রব। এই প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে মঙ্গলবার দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা। সঞ্জীব কুমার মুখার্জি নামে পেশায় এক চিকিৎসক আদালতের জনস্বার্থে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে তা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
Comments :0