কেটে গেল আরও একটা দিন। আজকের দিনটাও তাঁদের কাটবে খোলা আকাশের নিচে।
শুক্রবার ৬০০ দিনে পা দিতে চলেছে এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের অবস্থান। যাঁদের স্কুলে ক্লাস নেওয়ার কথা ছিল তাঁরা এক টানা ৫৯৯ দিন রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় সফল হয়েও চাকরির দাবিতে এই আন্দোলন।
খুব কি মসৃণ হয়েছে এই ৫৯৯ দিনের অবস্থান? না। পরিবার পরিজন সন্তানদের বাড়িতে রেখে চলছে অবস্থান। কী খাবেন? বৃষ্টি পড়লে কী করবেন? কোথায় যাবেন জানা নেই। শুধু জানেন হকের দাবিতে লড়তে।
এসএসসি পরীক্ষা পাশ করেও চাকরি হয়নি। কিন্তু শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি হয়েছে অযোগ্যদের। আর তৃণমূল করলে যে চাকরি পাওয়া যাবে তা নিজের মুখে বলেছেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আবার তিনি কয়েকদিন আগে বলেছেন যে আন্দোলন করলেই চাকরি পাওয়া যায় না।
চাকরি প্রার্থীদের এই আন্দোলনকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। কিন্তু তাও নিজেদের অবস্থান থেকে তারা সরে আসেননি।
এই ৫৯৯ দিনে অনেক সময় অনেক ভাবে চাপ এসেছে তাদের ওপর। ২০১৬ সালের হওয়া এসএসসি পরীক্ষার মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও এখনও চাকরি হয়নি সুবোধ হালদারের। সংসার চালাতে হাতে চক ডাস্টার তোলার বদলে কোদাল তুলতে বাধ্য হয়েছেন কৃষক পরিবারের এই সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির লোকেদের সামনে মুখ দেখাতে লজ্জা করে। টাকা খরচ করে লেখা পড়া করলাম কিন্তু চাকরি পেলাম না। বাবার বয়স হয়েছে আর কাজ করতে পারেন না। তাই সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে।’’
২০১৯ সালে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে তিনি এই নিয়োগের বিষয়টি দেখবেন। তখন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। আজ সে জেলে এই এসএসসি দূর্নীতি মামলায়। কিন্তু পার্থ জেলে গেলেও আজও মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। উল্টে নিজের ঘার থেকে এই বিষয়টি ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া তিনি।
শুধু সুবোধ হালদার নন। বহু চাকরি প্রার্থী লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা নয় টেট সহ বিভিন্ন বিষয়ের চাকরি প্রার্থীরা অবস্থান চালাচ্ছেন। কথা এই, ‘যতদিন না পর্যন্ত সুবিচার মিলছে লড়াই চলবে।’
রাজনৈতিক কারণে অনেকে মৃত্যু দেখেছে বাংলা। কিন্তু কোনও চাকরি প্রার্থীর মৃত্যু কি দেখেছে এই বাংলা? হ্যাঁ বাংলা দেখেছে এক চাকরি প্রার্থীর মৃত্যু। মিঠু মন্ডল। এসএসসি চাকরি প্রার্থী ছিলেন তিনি। চাকরির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করতে করতে শারিরীক অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। না তাঁর বাড়ি লোকেরা কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।
লড়াই চলবে। পাশে রয়েছেন বামপন্থীরা। দাবির পক্ষ নিয়ে পুলিশের লাঠির সামনে পড়েছেন ছাত্র-যুব শ্রমিকরা। অবস্থান নড়িয়ে দিয়েছে আদালতকে। প্রবল প্রতাপশালীরা জেলে। ঘরে ঘরে 'অপা' চর্চা। বাঙালির বিবেককে নাড়া দিয়েছে এ লড়াই।
Comments :0