বুধবার ইসিএল’র আউটসোর্সিং প্যাচ (খোলামুখ খনি) নারাণকুড়িতে বেআইনি কয়লা খনন ও উত্তোলন করতে গিয়ে অনেকে ধসে চাপা পড়েছেন ও মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছে। যাঁরা চাপা পড়েছেন, তাঁরা সবাই এলাকার গরিব মানুষ। ঘটনাটি ঘটেছে এদিন বেলা ৩টা নাগাদ রানিগঞ্জ থানা ও এগারা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নারাণকুড়ি এলাকায়। ঘটনার কথা জানা সত্ত্বেও প্রায় দুই ঘণ্টা ইসিএল’র কোনও আধিকারিক ঘটনাস্থলে যাননি। সিআইটিইউ জেলা সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরি জেলা শাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উদ্বেগ জানানোর পর জেলা প্রশাসনের চাপে শেষমেষ ইসিএল আধিকারিকরা এবং সিআইএসএফ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তারা কোনো উদ্ধার কাজ চালায়নি। এলাকার মানুষ ধস সরিয়ে চাপা পড়াদের উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েছেন। ধসের গভীর থেকে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আরও দুইজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা গেছে। বংশগোপাল চৌধুরি বলেন, জেলাশাসক পুন্নাবলাম এস ইসিএলকে চাপ দিয়েছেন ঘটনাস্থলে যাবার জন্য। জেলা শাসক জানিয়েছেন, একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। চারজন নিখোঁজ রয়েছে।
মাত্র দুইদিন আগে, অর্থাৎ ৯ তারিখে ইসিএল’র সিএমডি-কে চিঠি পাঠিয়ে নারাণকুড়ি প্যাচ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন বংশগোপাল চৌধুরি। তিনি চিঠিতে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন, বিপজ্জনকভাবে নারাণকুড়িতে ব্যাপক কয়লা খনন ও পাচার হচ্ছে। খনিতে শিল্প নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (সিআইএসএফ) নেই। খনির চারপাশে খনি সুরক্ষা বিধি মেনে ফেন্সিং দিয়ে ঘেরা নেই। নেই পর্যাপ্ত আলো। যে ঠিকাদার কয়লা উত্তোলন করছে, সেই সংস্থাই কয়লা পরিবহণও করছে।
এই অঞ্চলে ইসিএল’র আউটসোর্সিংয়ের এই খনিটিকে কেন্দ্র করে শাসকদলের মদতে লুটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বলে অভিযোগ। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হবার পর আউটসোর্সিংয়ের এই প্যাচটি চালু করে ইসিএল। ২০১২ সালে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। একদিকে আউটসোর্সিংয়ের বরাত পাওয়া সংস্থা খনিতে উৎপাদন করছে, একইসঙ্গে তার পাশে চলছে বেআইনি কয়লা খনন, উত্তোলন ও পাচার। কোনোটাই গোপনে নয়, সবই চলে আসছে প্রকাশ্যে। অসংখ্য সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে খনির কয়লার গাত্রে। এরআগে প্রায় দুই বছর আগে এমন এক দুর্ঘটনায় এই প্যাচে কয়েকজন গরিব মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। শাসকদল এখানে এতটাই প্রভাবশালী যে খনির বৃত্তে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই এদিন অন্ধকার নামতেই ইসিএল’র কর্তাব্যক্তিরা, সিআইএসএফ এলাকা ছেড়ে গেছে। পুলিশও চলে গেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে জেলা শাসক একজনের মৃত্যুর কথা বলেছেন। স্থানীয় মানুষ অন্ধকারের মধ্যেই উদ্ধার কাজ জারি রেখেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যারা কয়লা খনন করতে গিয়েছিল তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। নারাণকুড়ির বাসিন্দা খড়ু বাউরি নামে ১৬ বছরের এক কিশোরও নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে আরো জানান গেল দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। একজনের নাম উজ্জ্বল গরাই (২২)। বাড়ি নতুন এগারা গ্রামে। অপরজনের নাম সুরজিৎ সেন (২০) বাড়ি নারাণকুড়ি গ্রামে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ধসের গভীরে আরও মৃতদেহ রয়েছে।
Comments :0