দত্তপুকুরে নিহতদের বেশিরভাগই মুর্শিদাবাদ থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিক। মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত সামসুল আলি ওরফে খুদের। অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে দুপুর পর্যন্ত। বারাসত হাসপাতালে ভর্তি আরও ১২ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
একের পর এক বিস্ফোরণ হয়েই চলেছে রাজ্যে। খাতায় কলমে বাজি কারখানায় হচ্ছে বিস্ফোরণ। বাস্তবে প্রত্যেক জায়গায় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলছেন যে বাজির আড়ালে বানানো হতো বোমা। সর্বত্র অভিযোগ, তৃণমূলের মদতে চলছে এমন কারখানা। আর প্রায় সর্বত্র স্থানীয়রাই বলছেন, পুলিশকে জানিয়ে লাভ হয়নি কেবল তা নয়। উলটে অভিযোগ জানিয়ে পুলিশি হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে।
রবিবার দত্তপুরে হুবহু এক অভিজ্ঞতা। এ বছরেরই মে’তে ঠিক একই ঘটনাক্রম দেখা গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায়। ওই ঘটনায় সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। তাঁদের বেশিরভাগ মহিলা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে দত্তপুরকুরেও নিহতদের তালিকায় রয়েছে মহিলা, শিশুদের নাম।
সকাল দশটা নাগাদ বিস্ফোরণের প্রায় পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের তরফে নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এলাকার বাইরে থেকে শ্রমিকদের এনে কাজ করানো হত দত্তপুকুরের এই বোমা কারখানায়।
বীরভূমের দুবরাজপুরেও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে এ বছরই। হতাহতের কোনও তালিকা সরকারি স্তর থেকে প্রকাশ করাই হয়নি। তার আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে ঘন বসতি এলাকাতেই বিস্ফোরণে এক মহিলা, এক শিশু সহ ৩ জনের প্রাণ যায়। সেখানে অবৈধ বাজির কারখানা ছিল বলে জানা যায়। এগরায় বিস্ফোরণে কিছু আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনারই মহেশতলায় আরেক বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন। এই জেলার নোদাখালিতেই ২০২১-এ বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ৩ জন।
বোমা কারখানা বা মজুত করে রাখা বোমার গুদামে বিস্ফোরণের তালিকা লম্বা এ রাজ্যে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একের পর এক এমন বিস্ফোরণ হয়েছে। বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে মৃত অথবা আহত হয়েছে একের পর এক শিশু। জনাবর্তে তীব্র ক্ষোভের কারণে মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন বাজির কারখানাগুলিকে নিয়ে ক্লাস্টার হবে। এই প্রকল্প বহু পুরনো, তৃণমূল সরকারে আসার পর থেকে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু সে সব মুখেই। সংশ্লিষ্ট অংশের বক্তব্য, বাজি কারখানা বৈধ করার অভিযান তৃণমূল করবে না। কারণ এমন কারখানা সামানে রেকেই বোমা বানানো চলে মুড়ি মুড়কির মতো। এই আশঙ্কা কতটা সত্যি রবিবার তা প্রমাণ করল দত্তপুকুর।
বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তালিকা ঘাঁটালে উঠে আসছে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুর, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, হুগলীর মগরাহাটের নামও। নৈহাটিতে ২০২০’তে বিস্ফোরণে নিহত হন ৫ জন, ২০১৯-এ কেশপুরে নিহত হন ১ জন, ওই বছরই কাঁথিতে মারা যান ২ জন, হুগলীর মগরাহাটে মারা যান ৩ জন। ওই ঘটনায় আহতও হন আরও ৩ জন।
রবিবার দত্তপুকুরের যেখানে বিস্ফোরণ হয় তা ইছাপুর নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোছপুল এলাকা। কারখানা ছিল মোছপুল পশ্চিমপাড়ার ঘনবসতি এলাকায়। এদিন ক্ষোভে আশেপাশের কয়েকটি বাজি কারখানায় ভাঙচুর চালান স্থানীয়রা।
Comments :0