গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর থেকে এতদিন এটাই ধারণা করা হয়েছিল যে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার কোনও আগাম খবর গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে ছিল না। তাই একে চূড়ান্ত ও নিকৃষ্টতম গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই বিবেচনা করা হয়েছিল। গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতা সামাল দেওয়া সম্ভব হতো যদি ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী থাকত। কিন্তু সেটাও ছিল না। ফলে প্রাণ দিতে হলো ২৬জন নিরাপরাধ মানুষকে। ঘটনার পরই সরকারি সূত্রে জানা যায় সন্ত্রাসবাদীরা পাক সীমান্ত অতিক্রম করে বহু পথ নির্বিঘ্নে পাড়ি দিয়ে পহেলগামে পৌঁছায়। দু’-একদিন সেখানে থেকে হামলা চালিয়ে ২৬জনকে খুন করে যথারীতি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। দেশবাসীর কোটি কোটি করের টাকা খরচ করে তিন লক্ষ নিরাপত্তা জওয়ান কাশ্মীরে মোতায়েন করার পরও যদি পাক সন্ত্রাসবাদীরা অস্ত্র নিয়ে বুক ফুলিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় এবং পরিকল্পনা মতো হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষ খুন করে আবার নির্বিঘ্নে পাকিস্তানে ফিরে যায় তাহলে অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থাকার কোনও প্রয়োজন থাকে কি? মোদীর কাছে তার কোনও জবাব আছে কি?
ঘটনার পর থেকে দেখা যায় গোটা কাশ্মীর জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী ধরার জন্য। যদিও কোনও সন্ত্রাসবাদীর টিকিরও সন্ধান পায়নি। যদি সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানে চলেই গিয়ে থাকে তাহলে এমন তল্লাশি নাটকের কোনও যৌক্তিকতা আছে কি? পরবর্তীকালে শোনা যায় সন্ত্রাসবাদীরা নাকি কাশ্মীরেই গা ঢাকা দিয়ে আছে। অথচ নিরাপত্তাবাহিনী তাদের নাগাল পারছেন না। চারটে পাক সন্ত্রাসবাদী তিন লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীকে নাকাল করে ছাড়ছে। হালে জানা গেল সন্ত্রাসবাদীরা নাকি কাশ্মীর থেকে চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কায় পালাবার চেষ্টা করছে। তাই চেন্নাই থেকে বিমান কলম্বোয় নামার পর জোর তল্লাশি হয়। কিন্তু কোনও সন্ত্রাসবাদী পাওয়া যায়নি।
এখন শোনা যাচ্ছে পহেলগামের ঘটনার কয়েকদিন আগেই কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হানার গোয়েন্দা সতর্কতা ছিল। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল ১৯ এপ্রিল কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রস্তাবিত সফরের সময় ট্রেনে হামলা হতে পারে। এছাড়া শ্রীনগরের আশপাশে কয়েক জায়গারও নাম উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু পহেলগামের নাম তাতে ছিল না। এতদিন এই গোয়েন্দা সতর্কতার রিপোর্টটি দিব্যি গোপন রাখা হয়েছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো এই রিপোর্ট পাবার পর প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর সফর বাতিল হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় নিরাপত্তা জোরদারও করা হয়। কিন্তু পহেলগামের নাম যেহেতু ছিল না তাই সেখানে নিরাপত্তারও ব্যবস্থা হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে মোদী-শাহরা কাশ্মীরে কেমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। এমন ব্যবস্থায় কোনোদিন সন্ত্রাসবাদীদের ঠেকানো সম্ভব নয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা যান্ত্রিক ও অদক্ষ হলে গোয়েন্দা রিপোর্টে অনুল্লিখিত জায়গাকে নিরাপত্তার আওতা থেকে বাদ রাখা যায়। এই বুদ্ধি নিয়ে অমিত শাহ কাশ্মীরে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পহেলগাম কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে যান। তাছাড়া অমরনাথ যাত্রার অন্যতম পথ এই মহেলগাম দিয়ে। কোন বুদ্ধিতে মনে হলো সন্ত্রাসবাদীরা পহেলগামে হামলা করবে না তাই সেখানে নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। এটা কি নিছকই নির্বুদ্ধিতা নাকি এর পেছনেও কোনও গভীর ষড়যন্ত্র আছে। গোয়েন্দা সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও পহেলগামকে অরক্ষিত রেখে ২৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করার দায় অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদী নেবেন না কেন?
Editorial
অমিত শাহ নীরব কেন?

×
Comments :0