editorial

মহাসঙ্কট

সম্পাদকীয় বিভাগ

পহেলগামে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সরকারের তরফ থেকে অত্যন্ত কঠোর জবাবের প্রতীক্ষায় টগবগ করে ফুটছে গোটা দেশ। এই প্রশ্নে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলও সরকারকে সমর্থন  সূচক সবুজ সংকেত দিয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীও রণহুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন হামলাকারীদের পৃথিবীর শেষ  কোণা থেকেও খুঁজে বের করে সাজা দেওয়া হবে। ছাড়া হবে না সন্ত্রাসবাদীদের মদতদাতাদেরও অর্থাৎ পাকিস্তানকে। ঘটনার পর পরই নিরাপত্তাবিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি, তিন বাহিনীর কর্তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। আকারে ইঙ্গিতে বোঝানো হচ্ছিল যে কোনও সময় ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাবে। প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারাই ঠিক করবে কখন, কীভাবে, কোথায় আঘাত হানা হবে। ইতিমধ্যে দশদিন কেটে গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ মোদী সরকার নিতে পারেনি। দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ৫৬ ইঞ্চির প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্বগুরু’ হয়েও অর্বাচীন পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিতে বিলম্ব হওয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী ও অতি উগ্র জাতীয়তাবাদীরা উসখুস করছেন। দেশের সাধারণ মানুষের একটা অংশও অধৈর্য হয়ে পড়ছেন।
ধর্মান্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদীরা এবং যুদ্ধ জিগিরের প্রভাবিত সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা বোঝা সহজ নয় দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরুর আগে হাজারটা বিষয় ভাবতে হয়। আর যদি দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর হয় তাহলে তো কথাই নেই। সামরিক সংঘর্ষ শুরু হলে সেটা আর দ্বিপাক্ষিক থাকে না, আন্তর্জাতিক হয়ে যায়। হামলার আগে বন্ধু দেশ, গুরুত্বপূর্ণ দেশ, এমন কি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলির মনোভাবও যাচাই করে নিতে হয়। হামলার পর যদি বে‍‌শিরভাগ দেশ পাশে না থাকে তাহলে বিশ্বে ভারত এক ঘরে হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সব সময় নিজেদের খুশিমত চলা যায় না। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে চীন, উত্তর কোরিয়া আছে। ইউক্রেনের পাশে আছে আমেরিকা, ইউরোপ। গাজায় ইজরায়েলের পেছনে সর্বশক্তি নিয়ে আছে আমেরিকা। তেমনি ভারতকে যাচাই করে নিতে হবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে শেষ পর্যন্ত পাশে কে থাকবে। দূরে সরে যাবে কারা।
মোদীর অতি ঘনিষ্ট বন্ধু ট্রাম্প। আমেরিকা এই প্রশ্নে ভারতের পক্ষে থাকবে এটা আন্দাজ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন পহেলগামে হামলার নিন্দা করলেও দু’দেশ যুদ্ধে নামুক চায় না। কূটনৈতিক পথে আলোচনায় সমাধান খুঁজতে বলেছে। আরব দুনিয়ায় ভারত বন্ধু দেশগুলিও যুদ্ধের পক্ষে সায় দেয়নি। সাধারণভাবে অন্যান্য সব দেশও আলোচনার পথে যেতেই পরামর্শ দিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সমর্থনের পাল্লা নেহাতই দুর্বল। তাছাড়া রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে মোদীই বড় গলা করে বলেছিলেন এখন যুদ্ধের সময় নয়। সেই মোদী নিজেই যুদ্ধে ঝাঁপালে প্রশ্ন তো উঠবেই।
গত এক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট ট্রাম্প পাক-ভারত যুদ্ধ চাইছেন না। ট্রাম্পকে উপেক্ষা করে মোদী বিশ্ব গুরুত্ব ফলাবেন কিনা বলা মুশকিল। এমনিতেই শুল্ক যুদ্ধের জেরে অন্যান্য দেশের মতো ভারতও চাপে। মোদীরা চাইছেন ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতা করে বাণিজ্য ক্ষতি কতটা কমানো যায়। তার জন্য দু’দেশের মধ্যে নতুন  বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে জোর কদমে। এই অবস্থায় মার্কিন পরামর্শ উপেক্ষা করলে অর্থনীতির দিক থেকে মহা সঙ্কটে পড়তে পারেন মোদীরা। এই অবস্থায় মুখ রক্ষার জন্য লোক দেখানো কিছু একটা তো করতেই হবে। না হলে মানুষকে যেভাবে তাতানো হয়েছে সেটা বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।

Comments :0

Login to leave a comment