BOOK TOPIC — SOURAV DUTTA | SOVIET BOOK — NATUNPATA | 24 APRIL 2024

বইকথা — মানুষ কি করে বড়ো হল | সৌরভ দত্ত | নতুনপাতা — ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

BOOK TOPIC  SOURAV DUTTA  SOVIET BOOK  NATUNPATA  24 APRIL 2024

বইকথা

মানুষ কি করে বড়ো হল'
সৌরভ দত্ত

নতুনপাতা

মানবেতর সভ্যতার অজানাকে জানার ইতিহাস : 'শিশুকিশোরদের সামনে একসময় এক অন্যভুবন খুলে দিয়ে দিয়েছিল সোভিয়েত সাহিত্য।'রাদুগা'  প্রকাশন মস্কো থেকে প্রকাশিত বইগুলি হয়ে  উঠেছিল সে সময়ে কিশোরদের অন্তর্লোকের আলোর দিশারী।কিছু বছর আগে পর্যন্ত সোভিয়েত সাহিত্যে মুগ্ধ হয়ে থাকত খুদেরা।আর যে সব মনের খিদে মেটাত তা সম্পর্কে তো আর কথাই নেই।সেরকই একটি সোভিয়েত থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞাননির্ভর সাহিত্যগ্রন্থ– 'মানুষ কি করে বড়ো হল'।বইটির লেখক ছিলেন সোভিয়েত  বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের সুলেখক মিখাইল ইলিন এবং তাঁর সহধর্মিনী ইয়েলেনা সেগাল।মানবসভ্যতার বিবর্তনের সূক্ষ্ম ধারাপাত বলা যায় বইটিকে।বইটির সহজ,সরল 
অনুবাদ করেছেন গিরীন চক্রবর্তী ও অরুণ সোম।বইয়ের ভিতরের অলংকরণ লেওনিদ শকানভ।বইয়টি দ্বাদশ অধ্যায়ে বিন্যস্ত বইটিতে ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানব ইতিহাসের বিভিন্ন যুগগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে এসেছে মানব জাতির আবির্ভাবকালে সুপ্রাচীন লোমশ ম্যামথের কথা।প্রায় দশ লক্ষ বছর আগে এক বিশেষ জাতের বানর থেকে ক্রমশ দুপায়ে ভর দিয়ে মানুষ হয়ে ওঠা বা মানুষের পূর্বপুরুষ পিথেকানথ্রোপাসের উদ্ভব হয়।এরপর পিথেকানথ্রোপাস থেকে আসে আদিম মানুষ নিয়ানডারথ্যাল।আর আধুনিক মানুষের উদ্ভব প্রায় এক লক্ষ বছর আগে।প্রকাশকের কথা অংশে বলা হয়েছে–"...সুবিশাল নীহারিকাপুঞ্জের গভীরে কোথায় যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে সূর্য।এই রকম সূর্য থেকে আলাদা হয়ে বেরিয়ে পড়ল কতগুলো গ্রহ।এই রকম ছোট  একটা গ্রহে পদার্থে সঞ্চারিত হল প্রাণ, পদার্থ তার নিজের সত্তাকে উপলব্ধি করতে শুরু করল।আবির্ভাব ঘটল মানুষের।"এভাবেই সূচিত হয়েছে পৃথিবীতে মানুষের আগমন।মানুষ-দৈত্য অধ্যায়ে লেখক বলেছেন–"এই পৃথিবীতে একজন দৈত্য আছে।তার হাতে এত জোর যে অনায়াসে সে একখানি রেলগাড়ি মাথার ওপর তুলতে পারে।…মানুষই হচ্ছে এই দৈত্য।মানুষ কেমন করে এত বড় হল?কেমন করে সে হল দুনিয়ার প্রভু?"প্রাচীন সভ্যতার ছবিও এ গ্রন্থে চিত্রিত হয়েছে–"জঙ্গলের চেহারা আস্তে আস্তে বদলাচ্ছে।ফার গাছের বনের পরই হয়ত দেখতে পেলে পাইন বন।পাইন গাছও আবার কোথাও উঁচু,কোথাও নিচু।কোথাও পায়ের নিচে সবুজ শেওলার মখমলী স্পর্শ লাগছে,কোথাও লম্বা ঘাস গজিয়েছে,কোথাও সাদা সাদা শেওলা।"মাছ কী করে তীরে এল সে কাহিনিও বিধৃত হয়েছে গ্রন্থে–"জলের যে স্তরে সূর্যের আলো পড়ছে সেখানে ধূসর-বাদামি ও সবুজ শেওলার মাঝখানে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে রঙবেরঙের মাছ,দোল খাচ্ছে স্বচ্ছ জেলিমাছ,ধীরে ধীরে তলা দিয়ে গুটি গুটি চলেছে তারামাছের ঝাঁক।লেখকের বর্ণনায় প্রকৃতি জগত যেন বিনির্মিত এক সেলুলয়েড হয়ে ওঠে।প্রাচীন জীবজন্তুদের হাড়গোড়কে বলা হয়েছে সভ্যণতার বিবর্তনের মৌন সাক্ষী।ডারউইনের পরবর্তী দুই রুশ বিজ্ঞানী কভালেভস্কি ও তিমিরিয়াজেভ এর পরিশ্রমলব্ধ কাজের উঠে আসে। প্রতিকূল পরিবেশ,পরিস্থিতিতে আশংকার কথাও লেখক উল্লেখ করেছেন–"মেরুদেশের শ্বেতভালুককে উষ্ণমণ্ডলের জঙ্গলে এনে ছেড়ে দিয়েই দেখ না।টর্কিশ স্নানের খপ্পরে পড়ে সে তক্ষনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।কারণ,তার গায়ে মেরুদেশের শীতের উপযোগী যে পুরু কম্বল আছে তা খুলে রাখার সাধ্য তার নেই।"প্রাগৈতিহাসিক সময়পর্বে জঙ্গল ও গাছপালাও ছিল ভিন্নরকম–"সেই সব জঙ্গলে মার্টেল,লরেল আর ম্যাগনোলিয়া গাছের পাশেই জন্মাত বার্চ,লিন্ডেন আর অ্যাশ গাছ।"আমাদের পূর্বপুরুষরা বাস করত সব সময় জঙ্গলের উপরে।গাছে গাছে ঘুরত।–"গাছপালাগুলো ছিল তাদের গ্যালারি।জঙ্গল ছিল তাদের ঘরবাড়ি।"ফলমূল আর বাদাম ছিল তাদের প্রিয় খাবার।বাদামের শক্ত মোটা খোসা ভাঙার জন্য ও জঙ্গলে ডালপালা আঁকড়ে ধরার জন্য উপযোগী ছিল হাতের আঙুল ও শক্ত দাঁত।মানুষের জীবনবৃত্তান্ত ও ফেলে আসা ইতিহাসের পদচ্ছাপ ধরে রাখা আছে গ্রন্থে।কিভাবে ম্যামথ হারিয়ে গেল,মানুষ কিভাবে তুষার যুগ বা প্রকৃতির পট পরিবর্তনে বদলে গেল।তাদের শিকার কৌশল,গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের গল্প বলেছেন লেখক।পাথরের কুড়োলের জন্য কিভাবে তারা কাঠের হাতল তৈরি করল।জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে আত্মরক্ষার কি কি চমকপ্রদ কৌশল নিয়েছিল সমস্তই পাঠককে অনুসন্ধানী করে।ঘোড়াকে পোষ মানানো,কুকুরকে দিয়ে স্লেজগাড়ি টানানোর প্রমাণ পাওয়া যায়  সাইবেরিয়ার একটি অঞ্চলে।মিশরের নীলনদের বন্যা দেখে মানুষের অনুমিত হয় এক বন্যা থেকে আর এক বন্যা এক বছর।তারা নদীকে দেবতা মনে করত।ব্রোঞ্জ দিয়ে মানুষ তৈরি করতে শিখেছিল তৈজসপত্র।উঁচু পর্বতের চূড়ায় বাস করত সমাজের ধনী পরিবারের মানুষজন।গ্রীস,মাইসিনি এবং তিরিনের গ্রামের বিভিন্ন ধবংসাবশেষ মানুষের পৃথক পৃথক বসতিকে চিহ্নিত করে।গ্রন্থের শেষ পর্বে আছে মানুষের দেবদেবী ও বীরের গানের প্রসঙ্গ।ডিওনিসাসের সম্মানে পশুর মুখোশ পরে ভাঁড় বা ক্লাউন সেজে কৃষকদের নৃত্যের কথা।সর্বোপরি গ্রীক গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশ কয়েক শতাব্দী আগে গায়েন বা ক্লাউনদের কোরাসের গানের মধ্য দিয়ে ঘটে। লেখক বলেছেন–"আদিম মানুষ সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য বুঝত না।"মানুষের আবির্ভাবের বহু পূর্বে কিভাবে চেতন জগতের পরিবর্তন ঘটে তা শুনিয়েছিলেন ডারউইন এবং তাঁর  দুই উত্তর সাধক।শ্রম কিভাবে বানরকে মানুষে পরিণত করে তা ব্যাখ্যা করেছেন ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস।আর ইভান প্যাভলভ বলেছেন মানুষ কিভাবে ভাবতে ও কথা বলতে শিখল।মানবজাতির সুবিস্তৃত ইতিহাসের বর্ণনার মাধ্যমে আধুনিক বুদ্ধি সম্পন্ন মানব বা হোমো সাপিয়েন্সের আগমনকেও সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক।

বইয়ের নাম:মানুষ কি করে বড়ো হল
লেখক :এম ইলিন ও ইয়ে.সেগাল
বাংলা তরজমা:গিরীন চক্রবর্তী ও অরুণ সোম
অঙ্গসজ্জা:লেওনিদ শকানভ
প্রকাশ কাল:১৯৮৭
মুদ্রণ:রাদুগা প্রকাশন মস্কো সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মুদ্রিত

Comments :0

Login to leave a comment