কুড়ি বছর পর ভারতের পরমাণু চুক্তি মনে পড়ল আমেরিকার। তা-ও আবার সেই প্রশাসনের, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই!
জানুয়ারি ৫ ও ৬ তারিখ দিল্লিতে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির কথা বললেও নির্দিষ্ট ঘোষণা করেননি তিনি।
সুলিভান বলেছেন, ‘‘ভারতের শীর্ষ পরমাণু সংস্থাগুলির সঙ্গে মার্কিন সংস্থাগুলির সহযোগিতা দীর্ঘদিন ধরেই আটকে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধ হটাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত স্তরে রয়েছে।’’
ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট অব দিল্লিতে সেমিনারে এই কথা শুনিয়েছেন সুলিভান। কিন্তু জো বাইডেন প্রশাসনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে ২০ জানুয়ারি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁর দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হেরেছে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেবেন। মাঝের সময়ে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া বাইডেনের পক্ষে সম্ভবও নয়। এই চুক্তি হয়েছিল ২০০৮ সালে। তারপর আদৌ এগোয়নি সমঝোতা।
প্রশ্ন উঠছে, তা’হলে হঠাৎ অসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে মুখ খুললেন কেন সুলিভান।
ভারত-মার্কিন সমঝোতা সই হওয়ার পর পরমাণু শক্তি বিভাগ গুজরাটের ছায়া মিথি ভিরদি এবং অন্ধ্র প্রদেশের কোভাদায় দু’টি জায়গা দেখেছিল প্রকল্প তৈরির জন্য। পরমাণু শক্তি কর্পোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তা নিয়ে বিরোধও ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরে একবিন্দু এগোয়নি কাজ।
পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়েছেন যে সুলিভান কার্যত চীনের বিপক্ষে বাণিজ্যিক এবং স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান নেওয়ার কথা শুনিয়ে গিয়েছেন সফরে। তিনি বলেছেন, ‘‘চীনের একতরফা বাণিজ্য এবং শিল্প নীতির কারণে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা ভারতে উৎপাদন করতে আগ্রহী। ‘অ্যাপল’ আগামী দু’বছরে মোট আইফোন উৎপাদনের চারভাগের এক ভাগ করবে ভারত থেকে।’’
চীনের সঙ্গে আমেরিকার দ্বন্দ্ব থেকে ফায়দা তোলার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ভারতও। সরকারি স্ত্র থেকে ‘সুযোগ সদ্বব্যবহারের’ লক্ষ্যও জানানো হয়। তবে ভারতে উৎপাদন শিল্পে মার্কিন বিনিয়োগের ঢল নামেনি।
সুলিভান ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও।
দিল্লি আইআইটি-তে আলোচনাসভায় সুলিভান বলেছেন, ‘‘ভারত মার্কিন প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রধান শর্ত।’’ তিনি বলেন যে ভারত-মধ্য প্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের চেয়ে বেশি লাভজনক।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের বিরোধিতা করার লক্ষ্যেই আমেরিকার নেতৃত্বে চার দেশের জোটে শামিল রয়েছে ভারত। আমেরিকায় চীনের প্রশ্নে ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে বাইডেনের নীতির ফারাক নেই।
Indo-US Nuke Deal
লক্ষ্য চীন, শেষ বেলায় ভারতকে পরমাণু সহযোগিতার টোপ বাইডেনের
×
Comments :0