Brigade 20 April

শেষ প্রচারে ঝড় রাজ্য জুড়ে; রবিবার ঐতিহাসিক সমাবেশের জন্য প্রস্তুত ব্রিগেড

রাজ্য ব্রিগেড

 মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির গড়তে চলেছে রবিবারের ব্রিগেড। ওই দিন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ছাপিয়ে কলকাতার রাজপথ যে প্লাবিত হবে, তার আভাস ইতিমধ্যেই মিলেছে সমাবেশকে ঘিরে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিগুলিতে। বাকি আর মাত্র ১ দিন। সভা, মিটিং, মিছিল, গণ কনভেনশন, দেওয়াল লিখন, বাড়ি বাড়ি প্রচার থেকে নানা কর্মসূচি এখন তুঙ্গে। কলকাতা সহ উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্র সিআইটিইউ, কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন, বস্তি উন্নয়ন সমিতি’র ডাকে  সাধারণ মানুষ ক্রমশ বেশি সংখ্যায় অংশ নিচ্ছেন, ব্রিগেডমুখী মানুষ আরও বেশি করে শামিল করছেন সমাজের সব অংশের মানুষদেরই।
তৃণমূল আর বিজেপি জাত ধর্মের জিগির তুলে, ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতিকে ব্যবহার করে মেহনতি মানুষের জীবন যন্ত্রণাকে ধামাচাপা দিচ্ছে। একদিকে লাগামহীন শোষণ, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশে এর বিরুদ্ধেই সোচ্চার হবেন লাখো লাখো শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর থেকে বস্তিবাসী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ ও তাঁদের পরিবার। একথাই উঠে আসছে শ্রমিক কৃষক খেতমজুর ও বস্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্মীদের বক্তব্যে। ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে ব্যানার ফেস্টুনে শহর সেজে উঠেছে।
উত্তরবঙ্গের চা বাগানের অসংখ্য শ্রমিক ব্যাগ বোঁচকা নিয়ে এখন ট্রেনে চেপে বসার অপেক্ষায়। বানারহাট চা শ্রমিকরা রওনা দিয়েছেন ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে। একইভাবে সুন্দরবনের অত্যন্ত প্রান্তিক এলাকার মৎস্যজীবী, মধুমৌলিরাও কোমর বেঁধেছেন। তিনটি নদী পেরিয়ে তারপর সড়কপথ, রেলপথ হয়ে কলকাতায় ময়দানে পৌঁছাবেন তাঁরা। একইভাবে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রামের আদিবাসী মানুষ, পাথর খাদান এলাকার মানুষ, জঙ্গল মহলের বাসিন্দারাও তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে স্লোগানে সোচ্চার হয়ে কেউ সড়কপথে, কেউ রেলপথে ব্রিগেড সমাবেশে সমবেত হবেন। কৃষকের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন খেতমজুররা। শ্রমিকের সঙ্গে পা মিলিয়ে একই লক্ষ্যে পরিবার নিয়ে সামিল হবেন বস্তিবাসীরা। 
গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে ব্রিগেডকে সফল করার লক্ষ্যে উত্তরের পাহাড় থেকে সমতল, তরাই থেকে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ কৃষি ও চা বলয় জুড়ে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। শুক্রবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জাত পাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে ব্রিগেডের প্রচার এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ব্রিগেডের প্রচারের প্রায় শেষ পর্বে শহর শিলিগুড়িতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রচার তুঙ্গে উঠেছে আলিপুরদুয়ার জেলার গ্রাম থেকে শহরে। চলছে মিছিল, সভা, অর্থসংগ্রহের কাজ। আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকে পারোকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে পদযাত্রা ও সভা হয় এদিন। রায়গঞ্জ শিলিগুড়ি মোড়ে মানুষের ঢল নামে। এদিন এক বিশাল স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হয়েছে সেখানে। 
প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রাঢ় বঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এদিন আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে নিবিড় প্রচার  হয়। অন্যদিকে রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চলের বিভিন্ন খনিতে শ্রমিকরা প্রচার চালিয়েছেন। এছাড়া বারাকপুর থেকে বনগাঁ, বারাসাত থেকে কাঁচরাপাড়া, ডানলপ থেকে দমদম সর্বত্র মিছিল ও প্রচার সভা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শেষ প্রান্তের মানুষ যেমন সংঘবদ্ধ হয়েছেন, তেমনই হাওড়া- হুগলী-হলদিয়া-বজবজ শিল্পাঞ্চল এলাকার মানুষ জোট বেঁধেছেন। সাইকেল মিছিল হয়েছে নদীয়া জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ডাক দিয়ে এককাট্টা হয়ে ব্রিগেডমুখী হয়েছে মুর্শিদাবাদ-মালদহ অঞ্চলের শ্রমজীবীরাও। নির্মাণ শ্রমিক থেকে হস্তশিল্পী, মুটিয়া মজদুর থেকে ছোট দোকানি, পরিবহণ শ্রমিক সহ সমস্ত মানুষ সোচ্চার হয়েছেন নিজেদের দাবি দাওয়া আদায়ে।
শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর ও বস্তি সংগঠনের ডাকে রবিবার বিকাল ৩ টায় ব্রিগেড সমাবেশ। নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, পুঁজিপতিদের ট্যাক্স কমিয়ে কেন্দ্রের সরকার জনগণের উপরে বিপুল ট্যাক্সের বোঝা বৃদ্ধি করেছে। গত ১০ বছর ধরে  কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি দপ্তরে, ব্যাঙ্ক-বিমার সমস্ত দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কলকারখানায় স্থায়ী কর্মী নিয়োগ বন্ধ আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কলকারখানা বেসরকারিকরণ করা হয়েছে, ফলে এই সময়ে বিপুলভাবে দেশে বেকার এবং কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে ওষুধ সহ চাল ডাল চিনি তেল কেরোসিন সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।  
শুধু তাই নয়, সংগঠিত ক্ষেত্রের পঁচাত্তর শতাংশ শ্রমিককে শ্রম আইনের বাইরে ঠেলে দিয়ে লাগামহীন শোষণ ব্যবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার, ন্যূনতম মজুরি, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, আন্দোলন করার অধিকার, ধর্মঘট করার অধিকারকে অস্বীকার করে জেল, জরিমানা, চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা নতুন আইনে আনা হয়েছে। ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন আজও তৈরি করা হয়নি। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। খেতমজুরেরা বাধ্য হচ্ছেন অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে চলে যেতে। প্রতিবাদ করলেই শাসকের রোষ বাড়ছে। 
নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আজ প্রশ্নের মুখে। স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী বিপদ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজ্যে গত ১৪ বছর ধরে সন্ত্রাস, গুন্ডামি, দুর্নীতি, লুট, চাকরি বিক্রির মতো অপকর্ম শ্রমিক বিরোধী তৃণমূল দল এবং মমতা ব্যানার্জির সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। আর জি কর হাসপাতাল কাণ্ডে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বা সম্প্রতি ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রোমোটার চক্রের রমরমা বাড়াতে বুলডোজার নীতি প্রয়োগ করে বস্তি উচ্ছেদের চক্রান্ত চালাচ্ছে দুই সরকারই। আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের সংবিধান। এসবের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়তেই ব্রিগেড সমাবেশ।

 

Comments :0

Login to leave a comment