Brigade Asansol

ব্রিগেডের প্রস্তুতি: আসানসোলে শ্রমজীবীর বিশাল মিছিল, ডেপুটেশন

জেলা ব্রিগেড

মঙ্গলবার শ্রমিক কৃষক খেতমজুর ও বস্তিবাসীদের ডাকে আসানসোলে জেলা শাসক দপ্তর অভিযান। ছবি: মলয়কান্তি মণ্ডল।

শিল্পসমৃদ্ধ পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মেহনতি মানুষের হকের দাবিতে সোচ্চার হয়ে মঙ্গলবার আসানসোল রবীন্দ্র ভবন থেকে মিছিল করে জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দিল সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন ও পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি। কয়লাখনি, রেল, ইস্পাত শিল্প বেসরকারিকরণের চক্রান্তের প্রতিবাদে, একশো দিনের কাজ, ফসলের ন্যায্য মূল্যের গ্যারান্টি, কয়লা-বালি-জমি লুট থেকে শিক্ষকদের চাকরি চুরি, দুর্নীতি, পানীয় জলের সঙ্কট রুখতে  মেহনতি মানুষের লড়াই তীব্র করার শপথ নিয়ে দুপুরের তীব্র রোদকে উপেক্ষা করেই হাজারো মানুষের মিছিল রবীন্দ্রভবন থেকে জেলাশাসক দপ্তরের মোড় অবধি পৌঁছায়। 
মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিআইটটিইউ নেতা আভাস রায় চৌধুরী, যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি, শ্রমিকনেতা গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, পার্থ মুখার্জি, মহিলা নেত্রী জাহানার খান,  শ্রমিক নেতা বংশগোপাল চৌধুরী, কৃষক নেতা প্রিয়ব্রত সরকার, খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা বীরেশ মণ্ডল, বস্তি উন্নয়ন সমিতির নেতা সঞ্জয় প্রামাণিক। 
এদিন হকের দাবিতে লালঝাণ্ডা নিয়ে মেহনতি জনতার মিছিল দখল নেয় আসানসোলের রাজপথ। মিছিলে শামিল হন কয়লা খনি শ্রমিকরা। এমডিও নামে কয়লাখনি ঠিকাকরণের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তোলেন। জেলা শাসকের দপ্তর অভিযানে যোগ দিয়ে জেলার স্পঞ্জ আয়রন কারখানার শ্রমিকরা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচার চালাচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে দিচ্ছে। লালঝাণ্ডাই শ্রমিকদের স্বার্থে লড়াই করছে। নয়া শ্রমকোডের বিপদ বুঝছেন শ্রমিকরা।
এদিন জেলা শাসক দপ্তরের মোড়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আভাস রায় চৌধুরী বলেন, নয়া উদারনীতির কারণে আক্রান্ত জেলার শিল্পাঞ্চল। বামফ্রন্ট সরকার প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নতুন শিল্প স্থাপন করেছিল। রাজ্যে সরকার বদলের পর দুর্নীতি, তোলাবাজির সরকার চলছে। পুলিশ প্রশাসন তোলাবাজদেরই সাহায্য করছে। আরএসএস তৃণমূলের সেটিং রাজনীতির ফলে বিজেপি দেশ লুট করেছে আর তৃণমূল রাজ্য লুট করেছে। ন্যাশনাল মনিটাইজিং পাইপলাইনের নামে দেশের সম্পত্তি, কারখানা বিক্রি করছে বিজেপি। বেকারি বাড়ছে। মজুরি নেই। প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, চালের দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, জীবনদায়ী ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে। কৃষিপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ নেই। কৃষিক্ষেত্রকে আম্বানি আদানিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। 


তিনি বলেন, তৃণমূল আগেই  এরাজ্যে কৃষি ব্যবস্থাকে কর্পোরেটদের কাছে তুলে দেওয়ার আইন তৈরি করেছে। বস্তিবাসীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সুনিশ্চিত কর‍তে হবে। তাই সর্বত্রই লড়াই চলছে। এ লড়াই রুটিরুজি বেঁচে থাকার লড়াই। ২০ মে শ্রমিক ধর্মঘট সফল করতে শ্রমজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। 
মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন সারা জেলাজুড়ে লুটের কারবার চলছে। বালি, কয়লা, জমি লুট করেছে প্রশাসনের মদতে। রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক বাতিল হল তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। জেলার যুবকেরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিনরাজ্যে কাজে যাচ্ছে। মাইকোফিনান্সের দাপটে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এসব কি জেলা শাসক জানেন না?  ভবিষ্যত সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়াদের লড়াই চলবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বংশগোপাল চৌধুরী,  গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, পার্থ মুখার্জি প্রমুখ। পার্থ মুখার্জির নেতৃত্বে সিআইটিইউ , সারা ভারত কৃষক সভা,  সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন ও বস্তি উন্নয়ন সমিতির প্রতিনিধিদল ১৭ দফা দাবি নিয়ে জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দেয়।
এদিন নেতৃবৃন্দ বলেন, হকের দাবি নিয়ে দেশ বাঁচাতে, রাজ্যে বদল আনার লড়াই জোরদার করতে ২০ তারিখ মেহনতির ব্রিগেড মিশবে ঐতিহাসিক সমাবেশে। তারই প্রস্তুতি চলছে জেলার শিল্প কারখানার গেটে থেকে খেত খামার, বস্তিতে, মহল্লায়।

Comments :0

Login to leave a comment