ইজরায়েলের দখলদারির বিরোধিতা দেশে মোদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। নরেন্দ্র মোদীর শাসন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর শাসনের সদৃশ, নয়া ফ্যাসিবাদী। দুই সরকারই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নীতির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সিপিআই(এম) প্যালেস্তাইনের মুক্তির দাবিতে লড়াইয়ের পক্ষেই থাকবে।
মঙ্গলবার পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে এই মর্মে অবস্থান স্পষ্ট করেছে সিপিআই(এম)। এদিন কলকাতায় সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে হয়েছে সাধারণ সভা। সেখানেই এই অবস্থান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং পার্টির প্রবীণ নেতা বিমান বসু। সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেছেন বিমান বসু।
কারাত বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রীত্বে বিজেপি সরকার দেশে মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করতে চাইছে। গণতন্ত্র, রাজ্যের অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান বা সাংবিধানিক অধিকার- সব ধ্বংস করতে চাইছে। ঠিক এই কায়দায় প্যালেস্তাইনের জনগণ, তাঁদের অধিকার মুছে ফেলতে নেমেছে ইজরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি মদতে চলছে দখলদারি। মোদী ইজরায়েলকে সমর্থন করছেন সেই কারণেই। প্যালেস্তাইনের জনগণের মুক্তির দাবি মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।’’
কারাত তুলনা টেনে বলেছেন, ‘‘আবার মোদী যেমন বিচারবিভাগকে ধ্বংস করতে সক্রিয় তেমনই লক্ষ্যে আইন পাশ করেছে ইজরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার। সে দেশে সর্বত্র তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছে।’’
বাস্তবতা মনে করিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়ালে মোদী সরকার সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ তুলবে। ওদের নীতির বিরোধিতা করলেই সন্ত্রাসবাদী। কাশ্মীরের জনতা বা সাংবাদিক থেকে বিরোধী দলের নেতাদের এভাবেই দেগে দেয়। কিন্তু লড়াই জারি রাখবে সিপিআই(এম)।’’
কারাত মনে করিয়েছেন যে প্যালেস্তাইনের ‘হামাস’ ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের মাটিতে যে হামলা চালিয়েছে তা সিপিআই(এম) সমর্থন করে না। বহু নিরীহ মানুষ, শিশু, মহিলা নিহত হয়েছেন। তেমনই নিন্দা করে তার পর থেকে ইজরায়েলের লাগাতার আক্রমণকে। চারদিক থেকে ঘিরে গাজাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘দশকের পর দশক অবরুদ্ধ প্যালেস্তাইনের হামলা আর ইজরায়েলের দখলদারিকে এক করে দেখা চলে না। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন বলেন না কেবল এ বছরে এই সংঘাতের আগে প্যালেস্তাইনের প্রায় আড়াইশো মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে ইজরায়েলের সেনা।’’
তিনি মনে করিয়েছেন যে ১৯৪৮-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘের সূত্র মেনে দুই রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকেই সমর্থন করে সিপিআই(এম)। ব্যারিকেড আর কাঁটাতারে বন্দি, একগুচ্ছ উদ্বাস্তু শিবির হয়ে থাকা প্যালেস্তাইনের মুক্তির দাবি করে।
সেলিম বলেছেন, ‘‘এই লড়াই ইহুদি বনাম মুসলিম ধর্মের সংঘাত নয়। এখানে আরএসএস আর তাদের অনুগামীরা তেমনই প্রচার চালাচ্ছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ, তার মধ্যে এমনকি ইহুদিরাও রয়েছেন, ইজরায়েলের দখলদারির বিরোধিতায় সরব। প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা চাইছেন তাঁরাও। ইজরায়েলের লোকের থেকে বেশি সরব হিন্দুত্ববাদীরা। কারণ ওরাও চায় বহুত্ববাদ ধ্বংস করতে।’’
পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতাদের কঠিন লড়াইকে মনে করিয়েছেন বিমান বসু। তিনি বলেছেন, ‘‘জীবনকে তুচ্ছ করে কাজ করেছেন তাঁরা। সেই মানসিকতার, সেই দৃঢ়তার প্রয়োজন আবার দেখা দিয়েছে আজ।’’
Comments :0