বাংলার বুকে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার পথে হাঁটা এবং গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণ চালানো তৃণমূলকে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের শরিক বলে মনে করে না সিপিআই(এম)। বুধবার সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জ্যোতি বসু নগরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন একথা। তিনি বলেছেন, বাংলায় নির্বাচনী লড়াইতে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একসঙ্গে লড়াই করবে। এখানকার শাসকদল নিজেই গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা করছে, এরাজ্যে তাদের সঙ্গে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এদিন জ্যোতি বসু সমাজ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়েই ইয়েচুরি বলেন, ভারতকে বাঁচাতে বিজেপি’কে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই হবে। এই লক্ষ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু যে সব আঞ্চলিক দল নিজেদের স্বার্থে গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণ করছে, সাম্প্রদায়িকতাকে সহযোগিতা ও আপস করছে, সেই সব দলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই হয় না। তাদেরকেও বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
সভার পরেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তৃণমূলকেও এই পঙ্ক্তিভুক্ত করা হচ্ছে কি না। জবাবে ইয়েচুরি বলেন, বাংলার মানুষের সেটা বুঝতে কি কোনও অসুবিধা আছে? তৃণমূলের আচরণকে বুঝতে হবে। তারা নিজেরাই গণতন্ত্রকে আক্রমণ করছে, হিংসা সন্ত্রাস করছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র রক্ষায় শামিল হবে কী করে?
তিনি একথাও বলেন, ‘ইন্ডিয়া’তে তৃণমূলের কী ভূমিকা হবে সেটা তাদেরই ঠিক করতে হবে। আমরা কেবল একথা বলতে পারি জ্যোতি বসু সুরজিৎদের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার পথে হয় না, ধর্মনিরপেক্ষতার পথেই হয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কী কর্মসূচি নিচ্ছেন সেটা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।
মোদী সরকার সারা দেশে কীভাবে ইডি সিবিআই’র অপপ্রয়োগ করছে সভায় তাও বলেন ইয়েচুরি। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি সিবিআই’র ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ইয়েচুরি বলেছেন, এখানে তো আদালতের আদেশে ইডি সিবিআই তদন্ত করছে। অন্য অবিজেপি রাজ্যগুলিতে মোদী শাহ’র আদেশে ইডি সিবিআই বিরোধীদের হেনস্তা করছে।
তৃণমূল নেতা শাজাহানকে ধরতে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠনের যে নির্দেশ আদালত দিয়েছে সেই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই (এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আদালতের নির্দেশ থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। রাজ্যের পুলিশের ওপরে কোনও ভরসা নেই বলেই আদালত সিট গঠন করতে বলেছে, পুলিশ আর তৃণমূলের আশ্রয়েই গুন্ডারা রয়েছে। আদালতের নির্দেশ সোজাসুজি পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ওপরে অনাস্থার নিদর্শন। আমরা চাইছি, এই সিট যেন আগের চিট ফান্ড তদন্ত বা আনিস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের মতো অশ্বডিম্ব প্রসব না করে।
আইএসএফ-কে ধর্মতলায় সভা করতে দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ সম্পর্কেও সেলিম বলেছেন, এটাও রাজ্য সরকারকে সপাটে চড়। বিরোধীরা সভা করতে গেলেই বাধা পায়। ধর্মতলায় সভা করায় আমাদের নামে পুলিশ কেস দিয়েছে। আইএসএফ সঠিকভাবেই সভা করার দাবি জানিয়েছিল। আদালতের নির্দেশের পরে এবার রাজ্য সরকার বুঝুক যে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেটা কেবল কোনও এক রানির সভা করার জায়গা হতে পারে না।
Sitaram Yechury Press Meet
তৃণমূলকে সঙ্গে নেওয়ার প্রশ্নই নেই সাংবাদিকদের বললেন নেতৃবৃন্দ
×
Comments :0