CPI(M) CEO

নিরপেক্ষ নয় সিইও দপ্তর, চলছে তৃণমূলের কথায়, সরব সিপিআই(এম)

রাজ্য

বৃহস্পতিবার সিইও দপ্তরে রবীন দেব, শমীক লাহিড়ী, সুখেন্দু পানিগ্রাহী।

সপ্তম দফায় যে ৯ আসনে নির্বাচন গতবার সেগুলিতে জিতেছিল তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্দেশ রয়েছে, তৃণমূলকে বিরক্ত করা যাবে না। তাই বিধিভঙ্গের অভিযোগ জানালেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের সিইও দপ্তরের এই ভূমিকা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের সিইও’র দপ্তরে এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলেছে সিপিআই(এম)। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেছেন, ‘‘আমরা অপেক্ষা করে বসে ছিলাম। জানালাম তা’হলে চলে যাচ্ছি। তখন সিইও বৈঠকে ডাকলেন। তারপর বৈঠকের মাঝে উঠে চলে গেলেন। আমাদের কোনও অভিযোগের জবাব দিতে পারেননি তিনি। ফোন করলে ফোন ধরছেন না, মেসেজ করলে উত্তর দিচ্ছেন না।’’
লাহিড়ী বলেন, ‘‘তৃণমূলের ইশারায় চলছে কমিশন। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের শর্ত মানা হচ্ছে না। গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পঞ্চায়েতে গণনাকেন্দ্রে পর্যন্ত লুট করেছিল তৃণমূল। এবার সাধারণ নির্বাচনে কমিশন তৃণমূলকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে।’’
অস্থায়ী কোনও কর্মীকে ভোটের কাজে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কমিশনই। কিন্তু যাদবপুর কেন্দ্রের টালিগঞ্জ বিধানসভায় গণনার কাজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার প্রমাণ সিইও’র হাতে তুলে দিয়েছে সিপিআই(এম) প্রতিনিধিদল। কালীঘাট, পাটুলি থানার ওসি-দের সরানোর দাবি জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, বলেছেন লাহিড়ী।
বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধিদলে চিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, রাজ্য কমিটির সদস্য সুখেন্দু পানিগ্রাহী। প্রতিনিধিদলের বক্তব্য, সিপিআই(এম) অভিযোগ জানালে তা আগে যাচ্ছে তৃণমূল ভবনে। সেখান থেকে নির্দেশ আসছে। সেভাবেই চলছে সিইও দপ্তর। এই সিইও দপ্তর দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
লাহিড়ী বলেন, ‘‘প্রথম পাঁচ দফায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ষষ্ঠ দফা থেকে নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করছে না। সপ্তম দফা নির্বাচনেও সেই ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে কমিশনকে। একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে, নথি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’ 
রবীন দেব বলেন, ‘‘কালীঘাটে আমাদের মিছিল করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনামা এনে আমরা মিছিল করতে যাই। তারপরও বাধা দেয় কালীঘাট থানার পুলিশ। নির্বাচনে সকলের সমান সুযোগ পাওয়ার কথা। এখানে পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’
রবীন দেব জানিয়েছেন যে রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে নির্বাচনে বিধি ভাঙা হয়েছিল। নির্দিষ্ট ধারা দেখিয়ে অভিযোগ জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভোটের প্রচারে নগদ হস্তান্তর নিয়ে কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় না। অথচ এমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের বিজ্ঞাপন বন্ধও হয় অভিযোগ জানানোর পর। কিন্তু আবার সেই বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমতি দেওয়া হলো। কমিশনের যে আধিকারিক অনুমতি দিলেন ব্যবস্থা নিতে হবে তাঁর বিরুদ্ধে। 
সিপিআই(এম)’র অভিযোগ, লোকসভার গণনাকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে যে কোনও শিক্ষককে কাউন্টিং এজেন্ট করা যাবে না। কোনও নির্দেশে একথা বলা নেই। তৃণমূল পঞ্চায়েতে গণনাকেন্দ্রে জনতার রায় লুট করেছে। এবার লোকসভায় তা করতে চাইছে। আর নির্বাচন কমিশনের সিইও দপ্তর সহায়তা করছে। গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার এর থেকে বড় কোনও উদাহরণ থাকতে পারে না। 
প্রশ্ন ছিল, তা’হলে কী বিক্ষোভের মতো কোনও কর্মসূচি হবে? সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সপ্তম দফা নির্বাচনের আগে হাতে মাত্র একদিন সময় রয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক। সিইও’র সদিচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আজকের দিন দেখা হবে। দরকারে জনতাই ভোট এবং গণনা লুট ঠেকাতে ব্যবস্থা নেবে। 
অন্য এক প্রশ্নে লাহিড়ী বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মিশন বা ভারত সেবাশ্রমের সমালোচনা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। একটা কথাও তো আরএসএস নিয়ে বলছেন না।’’ তিনি বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাইপোর কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারে প্রচারে যাননি। সেটিং খোলামেলা বোঝা যাচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘চব্বিশে ভাঙবে মোদীর সরকার। ছাব্বিশে ভাঙবে তৃণমূলের সরকার।’’ 
আরেকটি প্রশ্নে লাহিড়ী বলেন, ‘‘ভারতে সিএএ-এনআরসি চলবে না। যাঁরা ভোট দিয়েছেন তাঁরা তো দেশের নাগরিক। তাঁদের আবার আবেদন করতে হবে কেন নাগরিকত্বের জন্য? দিল্লির সরকার থেকে বিজেপি সরবে। সিএএ-এনআরসি বাতিল হয়ে যাবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment