করোনা পরিস্থিতিতে ‘আত্মনির্ভর’ ভারত নিয়ে বহুবার ভাষণ দিতে শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi)। লকডাউনের জেরে যখন শহর ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের দল পায়ে হেঁটে নিজেদের গ্রামে ফিরে গিয়েছিল তখন গ্রামেই উপার্জনের ব্যবস্থা হিসেবে রেগার কাজে জোর দিতে হবে, বলেছিল আদালত। সেই একশো দিনের কাজেই কাজেই বিভিন্ন রাজ্যে ও কেন্দ্রশসিত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া রেখেছে প্রায় ৮,৩০৫ কোটি টাকা। রেগা মজুরিও বকেয়া রেখেছে মোদী সরকার। এই তথ্য সরকারি সমীক্ষাতেই প্রকাশিত হয়েছে।
ধুঁকতে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে রোজগারের প্রধান সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন (MGNREGA), চালু কথায় ‘রেগা’। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য সারা দেশে প্রায় ৬৪৯.৬৯ কোটি টাকা বকেয়া আছে মজুরি বাবদ। আরও ৭ হাজার ৩০৬. ৫৩ কোটি টাকা বকেয়া সামগ্রী বাবদ। প্রশাসনিক খরচ খাতে বকেয়া আছে প্রায় ৩৪৯.১২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী,পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ৬৬৪.৩১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া অঙ্কের বিচারে উত্তর প্রদেশ এবং অন্ধ্র প্রদেশের পরেই এ রাজ্য। কিন্তু তার মধ্যে সরঞ্জাম ব্যবহারের খরচ বাবদ বকেয়াই বেশি, ৬২৯.৭৬ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে প্রশাসনিক খরচ, ৩১.২৫ কোটি টাকা। অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি বাবদ পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। https://mnregaweb4.nic.in/netnrega/Citizen_html/financialstatement.aspx?lflag=eng&fin_year=2022-2023&source=national&labels=labels&Digest=kODLAkQv8M9FT6WbXb7zhA
রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন মজুরি না পাওয়ার কারণেই সঙ্কট তীব্র। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী মজুরি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য সাড়ে ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। তা’হলে মজুরি না পাওয়ার হাহাকার এত গভীর কেন। রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বারবার কেন্দ্রের বকেয়াকেই মজুরি না দেওয়ার কারণ দেখিয়েছে।
রাজ্যের বকেয়া মেটানোর দাবিতে সরব রাজ্যের বামপন্থীরাও। কেন্দ্রের বক্তব্যের সঙ্গে রাজ্যের দাবি যদিও মিলছে না। দু’পক্ষকেই শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবি তুলেছে সিপিআই(এম)। পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই দাবিতে বলেছিলেন যে টাকা দেওয়া হয়েছে কত, আর খরচই বা হলো কত রাজ্যের মানুষকে দেখাতে হবে। একশো দিনের কাজ সংক্রান্ত কেন্দ্রের এই নথিতে স্পষ্ট, কেন দু’পক্ষেরই স্পষ্ট করে হিসেব দেওয়া উচিত জনতাকে। যদিও কোনও সরকারই মানুষের সামনে তা প্রকাশ করার সাহস দেখায়নি।
গ্রামের মানুষের অভিযোগ, কেন্দ্র যেমন রেগার কাজের টাকা দিচ্ছে না, তেমনি রেগার কাজের বিস্তর টাকা লুঠ করেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত। গ্রামের দিকে সে অর্থে রেগার কাজ ও হয় না বলে দাবি গ্রামের মানুষের। কোন সরকার টাকা দেয়নি এই তর্কে না গিয়ে তাঁরা চাইছেন কাজ এবং মজুরি। গ্রামে একশো দিনের কাজ বন্ধ।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র (Amiya Patra)’র ক্ষোভ, ‘‘কেন্দ্র যে ভাবে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে তা ঠিক নয়। কেন্দ্র চাইলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যকে বাধ্য করতে পারত। বলা যেত দোষীদের নামে সরাসরি এফআইআর করতে হবে।’’ সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন (AIAWU)’র রাজ্য সম্পাদকের আরও বক্তব্য, ‘‘কিন্তু কেন্দ্র সে পথে না হেঁটে রেগার কাজে টাকা দেওয়াই বন্ধ করে দিল।’’
পাত্র (Amiya Patra) বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকার রেগার কাজের টাকা দিলেও পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রেখেছে। টাকা বন্ধ রাখার মূল কারণ তৃণমূলের দেদার দূর্নীতি। কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের দুর্নীতির ফল ভোগ করছেন খেটে খাওয়া মানুষে। জব কার্ডধারী কর্মীরা শ্রম দিয়েছেন অথচ দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের জন্য সে টাকা পাননি, এখন কাজও পাচ্ছেন না। জব কার্ড বন্টন নিয়েও দুর্নীতি করেছে তৃণমূল।’’
রাজ্যগুলির মধ্যে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশেই (Uttar Pradesh)সর্বাধিক বকেয়া রয়েছে। প্রায় ১,৭১১.৫৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে যোগী রাজ্যে। অথচ ‘ডবল-ইঞ্জিনের’ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী সর্বক্ষণ চর্চা করে যাচ্ছেন। তারপর রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের স্থান। সেখানে মোট ১,০০৫.৩১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, সেখানে ৬৬৪.৩১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
লিব টেক (LibTech) নামে দিল্লির একটি সংস্থা তাদের সমীক্ষায় প্রকাশ করেছে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে কর্মীদের প্রায় ২,০৪৪ কোটি টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। তাদেরই সমীক্ষায় উঠে এসেছে চলতি অর্থবর্ষে রেগার কাজ বন্ধ থাকায় রেগা কর্মীরা ৩,৮৯১ কোটি থেকে ৬,০৪৬ কোটি টাকা হারিয়েছেন। এই সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ওয়েবপত্রিকা ‘স্ক্রল’।
Comments :0