অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত পদ তৈরির সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে তা নিয়ে ফের বড় ধাক্কাও খেল রাজ্যের তৃণমূল সরকার। অবৈধভাবে নিযুক্ত প্রার্থীদের পুনর্বহালের জন্য মামলা দায়ের এবং নতুন পদসৃষ্টির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বুধবার যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তা বহাল রাখল ডিভিসন বেঞ্চ। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিসন বেঞ্চ এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশই বহাল রেখেছে।
এদিকে, টেট এবং এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতিকে বৈধতা দিতে বিধানসভাকে ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার তিনি বিধানসভায় আদালতের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় অভিযোগ করে বলেছেন, ‘‘যখনই কোনও নিয়োগ করতে যাই, তখনই মামলায় আটকে যায়।‘‘ বিধানসভার মাধ্যমে আদালতের কাছে তিনি আবেদন করেছেন, মানুষের স্বার্থে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেছেন, আদালত এমন কিছু করুক, যাতে মানুষের সুবিধা হয়। হঠাৎ বিধানসভাকে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবহার করলেন কেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার এবং এসএসসি ডিভিসন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিল। এসএসসি’র বক্তব্য ছিল, অবৈধভাবে নিযুক্ত প্রার্থীদের পুনর্বহাল সংক্রান্ত মামলার উপর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বাতিল করতে হবে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, শিক্ষা সচিব মনীশ জৈনের মতো এক জন অফিসারকে আদালত তলব করবে কেন? মনীশ জৈনকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ বাতিল করতে হবে। ডিভিসন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বিস্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, অবৈধভাবে নিযুক্ত প্রার্থীদের পুনর্বহালের ক্ষেত্রে আদালত যদি মনে করে, এখানে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, তাহলে সিবিআই তদন্ত হতেই পারে। বিচারপতি আরও মন্তব্য করেন, শিক্ষা সচিব এক জন দায়িত্ববান অফিসার। আদালতকে সাহায্য করা তাঁর কর্তব্য। আদালত ডাকলে তাঁকে আসতে হবে।
এসএসসি’র মাধ্যমে গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে এবং নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকপদে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি করছেন, তাঁদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এই অবৈধ নিয়োগকে বৈধতা দিতে মামলার আবেদন কে করেছেন, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হাজির হতে বলেছিলেন শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মনীশ জৈনকে। আদালতের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার। একইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে সিবিআই-কে এই আবেদনকারীর হদিশ দিতে হবে। এদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, বৈধ প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে অবৈধদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আবেদন স্কুল সার্ভিস কমিশন করেছে? এই প্রশ্ন আদালত কমিশনের আইনজীবীকে করে। এই প্রশ্নের কোনও লিখিত প্রমাণ কমিশনের আইনজীবীও আদালতে দিতে পারেননি।
এদিকে, এদিন বিধানসভার অধিবেশনে রেশন-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কথায় কথায় আদালতে চলে যাচ্ছে। তাই নতুন করে নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, আদালতে মামলা লড়তে লড়তেই সরকারের সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব ও বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলাপন ব্যানার্জির পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার জন্য আইনজীবীদের ফি দিতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘যখনই আমরা নতুন কিছু করতে চাই, লোক নিতে চাই, কেউ না কেউ কোর্টে যাচ্ছে। স্টে নিয়ে চলে আসছে। আমি বিধানসভার মাধ্যমে কোর্টের কাছে আবেদন করছি, যাতে মানুষের সুবিধা হয়, সেদিকে নজর রাখুন। পাবলিক চায় ‘দুয়ারে রেশন’। কোর্ট ‘দুয়ারে রেশনে’ বাধা হলো।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি রেশন ডিলাররা ‘দুয়ারে রেশন’-এর বিরোধিতা করে মামলায় হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘আমি যত দূর যেতে হয় যাব। কারও গায়ের জোরে কাছে মাথা নত করব না। ‘দুয়ারে রেশন’ হবেই।’’ খাদ্য মন্ত্রী রথীন ঘোষ জানিয়েছেন ‘দুয়ারে রেশন’ সংক্রান্ত মামলা নিয়ে খাদ্য দপ্তর সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে।
Comments :0