Eastbengal Club

ফের আলোয় ফিরতে চায় ইস্টবেঙ্গল

খেলা

Eastbengal Club

 

অর্পণ সেনগুপ্ত

সালটা ১৯২০। তৎকালীন জোড়াবাগান ক্লাব কোচবিহার কাপের একটি ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। সেই জোড়াবাগান দলে জায়গা হয়নি ডিফেন্ডার শৈলেশ বসুর। তখন ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তাঁকে বলা হয়েছিল যে বাঙাল অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের অধিবাসী হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত। তারপরেই সেই ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে এসে রাজা মন্মথনাথ চৌধুরী , রমেশ চন্দ্র সেন এবং অরবিন্দ ঘোষকে নিয়ে তৈরি করেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। তারপর থেকেই আই এফএ শিল্ড , ডুরান্ড কাপ, কোচবিহার কাপের মত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকে ইস্টবেঙ্গল দল। জিততে থাকে একের পর এক ট্রফি। সেই সময় পূর্ববঙ্গের মানুষ যেন সত্যিই নাড়ির টান অনুভব করতে শুরু করেছিলেন এই ক্লাবটির প্রতি। 
১৯২১ সালের ৮ আগস্ট প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের, কোচবিহার কাপে। তারপর থেকেই চলে আসছে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ৭০-৮০ দশকে ভারতের হেন কোনো ট্রফি ছিল না, যা ইস্টবেঙ্গল জেতেনি। সবধরনের জাতীয় স্তরের ট্রফিই জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। শুধু ভারত নয়। ইস্টবেঙ্গলের নাম ছড়িয়ে গেছিল সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও। 
১৯৮৫ সালে কোকাকোলা কাপ , ২০০৩ সালে আশিয়ান কাপ ১৯৯৩ সালে ওয়াই ওয়াই কাপ এবং ১৯৯৪ সালে সান মিগুয়েল আন্তর্জাতিক কাপও যেতে ইস্টবেঙ্গল। বিদেশের মাটিতে ভারতের হয়ে জয়ডঙ্কা বাজাতে দেখা যেত একমাত্র এই ক্লাবটিকেই। 
তবে এখন অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ যেন এক অচেনা ইস্টবেঙ্গল। বর্তমান ইস্টবেঙ্গল দলের খেলা দেখে সমর্থকরা প্রায়শই বলে থাকেন যে এই ইস্টবেঙ্গলকে তারা চেনেন না। ২০০৪ সালে শেষবার জাতীয় লিগ ( এখন আইলিগ ) জয়ের পর জাতীয় স্তরে আর কোনো লিগ প্রতিযোগিতা জেতা হয়নি দলটার। গত বছর ২০২৪ সালে প্রায় ১২ বছর পর জাতীয় ট্রফি সুপার কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল লাল হলুদ জনতা। কিন্তু তাল কাটল এই মরশুমেই। আইএসএলে শুরু থেকেই প্রথম ৬টি ম্যাচ পর পর হারের পর ' গো ব্যাক ধ্বনিতে '  বিদায় জানানো হয়েছিল কোচকে। নতুন কোচ অস্কার এসেছিলেন একেবারে ডার্বি ম্যাচের দিনই। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে হয়েছিল মোহনবাগানের কাছে তার দলের অসহায় আত্মসমর্পণ। এরপরে কিছুটা দল গুছাতে পারলেও ধারাবাহিকতার অভাবই ভুগিয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগেও নক আউটে পৌঁছে সদ্য তারা ম্যাচ হেরেছে আর্কাদাগের কাছে। ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচ মরশুমের এই আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের সবথেকে ভালো পারফরম্যান্স হয়েছিল সেই ২০২০ - ২১ মরশুমে। সেবার নবম স্থানে শেষ করেছিল ইস্টবেঙ্গল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে দল। এই পরিস্থিতির দায় নিতে হবে ক্লাব কর্মকর্তা ও ম্যানেজমেন্টকেও। বছরের পর বছর ভালো পরিকল্পনামাফিক দল গড়তে ব্যর্থ। বিনিয়োগকারী সংস্থার সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যাকফুটে এই বড় ক্লাবের কর্মকর্তারা। তবে এবার হয়তো সময় এসেছে ভাববার। এখনও পর্যন্ত কর্তাদের টনব না নড়লে ভবিষ্যতে শঙ্কার মুখে পড়তে পারে ইস্টবেঙ্গল দলের ভবিষ্যত। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ইস্টবেঙ্গল অচেনা হয়ে ওঠার আগেই এ পরিস্থিতির মোকাবিলা না করতে হবে, সমর্থকদের প্রত্যাশা তেমনি। তার না হলে গৌরবের ইতিহাসকে বয়ে নেওয়া যাবে কিভাবে!

Comments :0

Login to leave a comment