চলমান এসআইআর প্রক্রিয়ার মধ্যেই একধিক রাজ্যের বিএলও আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। রাজস্থান ও কেরালা তামালনাড়ুর পর এবার পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে আত্মঘাতী বিএলও কর্মী। মাল ব্লকের নিউগ্লাঙ্গো চা বাগানে দেবল লাইনে মহিলা বুথ লেভেল অফিসারের রহস্য মৃত্যুকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা। মৃত বিএলও'র নাম শান্তি মুনি এক্কা( ৪৮)। তিনি পেশায় আইসিডিএস কর্মী ছিলেন এবং পাশাপাশি রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০/১০১ বুথের বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তারপর থেকেই তিনি ছিলেন বেশ অবসাদগ্রস্ত। এসআইআরের ফরম ফিলাপের চাপে বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। বুধবার ভোরে নিজের বাড়ির উঠানে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় দেহ।
পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে দেয়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই মনে করা হলেও, কেন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
আত্মহত্যার ঘটনা কেবল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়েই না এসআইআর কাজে নিযুক্ত কর্মীদের উপর চাপানো বিশাল মানসিক ও কাজের চাপকেও দায়ী করেছে মৃতের পরিবার। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, রাজ্য ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সম্পর্কিত কাজের কারণে তিনি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্য প্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান নিকোবরে এসআইআর ইতিমধ্যে ফরম বিলি শেষ করে ফর্ম তোলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এই কাজ নিয়ে বিএলওদের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। বিএলওরা একাধিক বার অভিযোগ তুলেছেন যে কাজের জন্য বাড়তি চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ফরম দেওয়া, তোলা ছাড়াও ডেটা এন্ট্রির কাজে জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
বিএলওরা বলেছেন যে মানুষ এসআইআর সম্পর্কে আতঙ্কে রয়েছেন। আধিকারিকরা চাপ প্রয়োগ করছেন, মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং নোটিশ জারি করার হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচন আধিকারিকরা কর্মীদের হয়রানি করছেন। মহিলা কর্মদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেও আশঙ্কা থেকে যায় যদি কোনও ভুল হয়ে যায় তবে চাকরি হারাতেও পারেন। একাধিক জায়গায় বিএলওরা প্রতিবাদে নেমেছেন।
মৃতার স্বামী সুখু এক্কার অভিযোগ, সমীক্ষার কাজের চাপ সামলাতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন স্ত্রী। সকাল দশটায় বাড়ি থেকে বের হয়ে রাত ৮ টায় বাড়ি ফিরতেন। বাড়িতে এসেও বিশ্রাম পেতেন না, ভিড় জমতো ফরম পূরণের জন্য। এসআইআর ফরম বাংলায় লেখা ছিল। কিন্তু এখানে বেশিরভাগ মানুষ বাংলা পড়তে পারেন না। বোঝাতে প্রচুর সময় লাগত। সম্প্রতি তিনি মাল ব্লকের জয়েন্ট বিডিওকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। লিখিতভাবে তিনি এই পথ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের দাবি সেই ইস্তফা পত্র গ্রহণ করেনি জয়েন্ট বিডিও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। এটি কি শুধুই অতিরিক্ত কাজের চাপ, নাকি অন্য কোনও কারণ—তা জানতে শুরু হয়েছে পুলিশি তদন্ত।
উল্লেখ্য, এর আগে এসআইআর–এর চাপ ও আতঙ্কে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকজনের আত্মহত্যার খবর উঠে এসেছে। এবার খোদ এক বিএলও'র মৃত্যুতে নতুন করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক চাপে মাঠে–ময়দানে কাজ করা কর্মীদের সুরক্ষা ও মানসিক চাপ এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যার্থতার প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খান্ডে বাহালে উমেশ গণপত জানিয়েছেন, আইসিডিএস কর্মী আত্মঘাতী হয়েছেন। তিনি বিএলও পদে কর্মরত ছিলেন। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। মালবাজার থানার পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করেছে।
Comments :0