সোমবার সিআইটিইউ, বস্তি উন্নয়ন সমিতি বর্ধমান শহর ১ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে ২০ এপ্রিল শ্রমজীবীদের ডাকে জনতার ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে মানববন্ধন করে শপথ নিলেন শ্রমজীবী জনতা। বাদামতলা মোড় থেকে এই মানব বন্ধন প্রায় পার্কাস রোড মোড় পর্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ায়। এই কর্মসূচিতে ছিলেন সিআইটিইউ পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম, অতনু হুই, শুক্লা সরকার প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন দেবদুলাল ঠাকুর, বস্তি সংগঠনের পক্ষ্যে প্রশান্ত দাস চৌধুরী। তাঁরা বলেন বিজেপি দেশ বিক্রি করতে ব্যস্ত। ধর্মের নামে দেশ বিভাজন করতে উদ্যোগ নিয়েছে। ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করছে। অন্যদিকে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এই দুই সরকারের বিরুদ্ধে সব অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।
ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে এদিন ডিওয়াইএফআই, এসএফআই, সিআইটিইউ ও পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি বর্ধমান শহর ২ এরিয়া কমিটির উদ্যোগে বড়বাজার মসজিদের পাশে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পথসভায় বক্তব্য রাখেন যুব নেতা সুদেব ঘোষ, ছাত্র ফেডারেশনের পূর্ব বর্ধমান বর্ধমান জেলা সম্পাদক উষশী রায় চৌধুরী, সিআইটিইউ নেতৃত্ব অঞ্জন বিশ্বাস, পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক অরিন্দম মৌলিক। সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য।
ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে কালনায় বাইক মিছিল।
ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে কালনার নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতে বাইক মিছিল হয় সোমবার। সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন এবং সিআইটিইউ’র উদ্যোগে এদিন খড়িনান গ্রামে জমায়েতের পর বাইক মিছিল শুরু হয়। নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম পরিক্রমার পর নাগরগাছি গ্রামে পথসভার মধ্য দিয়ে প্রচার অভিযান শেষ হয়। শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুরের অধিকার আদায়ের দাবিতে ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
ব্রিগেড সমাবেশকে ঐতিহাসিক সমাবেশে পরিণত করার আহ্বান জানিয়ে এদিন জগদ্দল জে জে আই জুট মিল শাখার উদ্যোগে চটকল শ্রমিকদের মিছিল শ্রমিক মহল্লা পরিক্রমা করে। এই মিছিল জগদ্দল জে জে আই জুট মিল গেটের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেলাবাগান লাইন, ৪ নং মিডল মিল লাইন, অ্যাংলো ইন্ডিয়া জুট মিল লাইন পরিক্রমা করে। মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন বিসিএমইউ নেতা রঞ্জিত মন্ডল সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সিপিআই(এম) কাচড়াপাড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে দ্বারভাঙা কলোনির সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে মনসাতলা,কুলিয়া রোড হয়ে প্রগতীপল্লীতে গিয়ে শেষ হয়।
সিপিআই(এম) বীজপুর -পানপুর গ্রাম এলাকার জেঠিয়া অঞ্চলে ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে সাইকেল মিছিল হয়।
বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার পাশাপাশি জনগণের রুটি রুজির লড়াই জোরদার করা, কালা ওয়াকফ আইন বাতিল, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচানোর দাবিকে সামনে রেখে এবং আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে সোমবার শীতলকুচি হাটে মিছিল ও যৌথ কনভেনশনে শামিল হলেন শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর ও বস্তিবাসীরা। সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষক সভা, সারা ভারত খেতমজুর সংগঠন ও পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির ডাকা এই মিছিল ও কনভেনশনে শ্রমিক, কৃষক মেহেনতি মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
সোমাবার ব্রিগেডের সমর্থনে পদযাত্রা হয় বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল শিল্পাঞ্চল এলাকায়। অধিক মুনাফার জন্য মলিকপক্ষ জুলুমবাজি করছে। এতোটাই যে কাজের চাপ দিচ্ছে ৮ঘন্টা কাজ করতে পারছিনা। কাজের ভয়ে মিলে যেতে পারছিনা। কাজে গিয়ে কাজ করতে না পারলে মালিকপক্ষ মেমো ধরাচ্ছে। এক প্রকার মালিক পক্ষের কাছে আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। বললেন, চেঙ্গাইল প্রেমচাঁদ মিলের শ্রমিক তাপস মন্ডল। তাঁর পাশে থাকা সিজবেড়িয়ার বাসিন্দা লাডলো মিলের অস্থায়ী শ্রমিক অশোক বেরা বলেন, আগে বেশীরভাগ দিনই কাজ পেতাম। এখন কাজ পাচ্ছিনা। ২৭বছর ধরে এই মিলে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করছি। কোনদিনই এরকম অবস্থা হয়নি। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা! দু’জনেই হাঁটছিলেন শ্রমজীবী মানুষের ব্রিগেডের সমর্থনে পদযাত্রায়। তাঁরা বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে ব্রিগেড ভরাতেই হবে। এদিনের পদযাত্রা বাউড়িয়া স্টেশন থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম বুড়িখালী, কাজিচড়া, রামেশ্বরবাটি, পশ্চিম বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল, জামবেড়িয়া হয়ে কোটালঘাটাব শেষ হয়। পদযাত্রায় বহু শ্রমিক পা মেলায়। পদযাত্রায় শ্রমিকরা বলেন, সারা দেশব্যাপী এক অস্থির অবস্থা চলছে। দেশে বাড়ছে বেকারি, চাকরি নেই, জিনিসপত্রের দাম খেটে খাওয়ার মানুষের নাগালে বাইরে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে পেট্রোল ডিজেলের দাম। রান্নার গ্যাসের দাম ৮৩৯ টাকা থেকে একলাফে ৮৭৯ টাকা বাড়িয়ে দিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ওষুধের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। এইসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে উঠলেই তার মধ্যে জাত পাত ধর্ম বর্ণ এসব দিয়ে শ্রমিকদের ভাগ করা হচ্ছে। কোটি কোটি শ্রমিকের রক্ত ঘামে গড়ে ওঠা দেশের সম্পদ রেল, ব্যাংক, বীমা, কয়লা, ইস্পাত, বিদ্যুৎ এমনকি জমি, জল, জঙ্গল সস্তায় বেঁচে দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। নতুন শ্রমকোড চালু করে শ্রমিকদের অর্জিত অধিকার সব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চাইছে। পদযাত্রা থেকে দাবি ওঠে শ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাতিল করো। শ্রমজীবিদের দাবি নিয়ে ব্রিগেড চলো।
Comments :0