গঙ্গায় আবার জলস্ফীতি হচ্ছে। সারা বছর কোনও কাজ না করে এই বন্যার মধ্যে বাঁধের উপর বালির বস্তা দিয়ে লোক দেখানো বন্যা রোধের কাজ করার চেষ্টা করছে রাজ্যের সেচ দপ্তর। যা কোনও স্থায়ী কাজ নয়। বন্যা বিধ্বস্ত ভুতনী এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের বক্তব্য এই ভাবে লোক দেখালো কাজ করে ভাঙ্গন রোধের নামে কোটি কোটি টাকা লুট করা হচ্ছে। আর তাই এলাকার কিছু মানুষ এই কাজে আপত্তি জানাতে যে জায়গায় কাজ করছিল সেখানে দল বেঁধে ছুটে যান। গ্রামের মানুষদের আসতে দেখে সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদাররা লঞ্চে করে পালিয়ে যায়। ফলে যারা এখানে গিয়েছিল তাঁরা আধিকারিকদের যে অস্থায়ী দপ্তর ছিল সেখানে ভুতনী বাঁচাও সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা শাসকের উদ্দেশ্যে একটি দাবি পত্র ওই অস্থায়ী দপ্তরে লাগিয়ে দিয়ে আসেন।
ভুতনীর উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হিরানন্দপুর এলাকার ২ লক্ষাধিক মানুষে পক্ষ থেকে জেলা শাসকের উদ্দেশ্যে দেওয়া দাবি পত্রে বলা হয়, ২০২০ সালে গঙ্গার তীরে কালুটোনটোলায় বাঁধ নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ায় ভুতনীর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপরে বাঁধ পুনরায় না করার ফলে এবার দু দফায় ভুতনীতে জল ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ধান, ভুট্টা, কলাই ও সবজীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, থানা, বিদ্যুৎ খুঁটি সহ প্রায় সব বাড়িঘর, রাস্তা মাস দেড়েক ধরে জলের তলায়। তাই গঙ্গা নদীর ভাঙ্গন রোধে ও বন্যা রোধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যাতে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয় তার জন্য এলাকাবাসীর স্বার্থে ৪ দফা দাবি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
যে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে তারমধ্যে জাতীয় নদী গঙ্গার সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে ঘোষণা করা, কংক্রিটের বাঁধ নতুন করে নির্মাণ করে ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা, নিয়মিত ড্রেজিং, ভাঙ্গনে যারা বাড়িঘর হারিয়েছেন তাদের সরকার থেকে জমি দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া, দক্ষিণ চণ্ডীপুরে স্থায়ী লকগেট নির্মাণ করে অতিরিক্ত জল বের করার ব্যবস্থা করা, পুলিনটোলাঘাট নিয়মিত সংস্কার, বালির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন রোধের কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সেচ মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ভাঙ্গন রোধে যে ৪৭ কোটি টাকা খরচ ও বন্যার জন্য যে খরচ হয়েছে তার সব হিসাব শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবি জানান হয়েছে।
এই বিষয়টি জানাজানি হতেই মানিকচকের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এই বিষয়টির জন্য সিপিআই(এম)’কে সরাসরি আক্রমণ করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন,‘‘সিপিআই(এম) বিক্ষোভ দেখানো ছাড়া কিছু করতে পারে না। ওরা চাদর পেতে টাকা তুলে তা মানুষকে না দিয়ে বাড়িতে নিয়ে চলে যায়। একই ভাবে তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, মানিকচকের মানুষের ভোট নিয়ে কংগ্রেস লোকসভায় জিতলেও ওদের দেখা যাচ্ছে না।’’
এ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, ‘‘বিধায়িকা ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে সিপিআই(এম)কে। সিপিআই(এম) অর্থ ও সামগ্রী সংগ্রহ করে মানুষের কাছ থেকে। পরে তা বিলি করে মানুষকে। আমরা চুরি করে অর্থ সংগ্রহ করি না। নারদা, সারদা, নির্বাচনী বন্ড, চাকরি বিক্রি, রেশন চুরি, বালি, গরু চুরি যাতে তৃণমূলীদের নাম প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে তা আমরা করি না। এমনকি মানিকচকের মানুষ যখন এবারও বন্যায় ডুবে আছে তখনো বন্যা রোধের নামে অর্থ লুট করা হচ্ছে। সাহস থাকলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মানুষের সামনে তুলে ধরুক।"
এদিন সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে মানিকচকের বানভাসি মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হয়। ভুতনীর হিরানন্দপুরের গদাধরের দুটি বুথে সিপিআই(এম) ইংরেজবাজার শহর এরিয়া কমিটি ও রেড ভলান্টিয়ার সংগৃহীত ত্রাণ সামগ্রী, মশারি ও কাপড় তুলে দেওয়া হয়।
TMC ATTACK ON CPI(M)
তৃণমূল বিধায়কের আক্রমণের পাল্টা জবাব সিপিআই(এম)’র
×
Comments :0