দুর্নীতি এবং দুর্দশা থেকে চোখ ঘোরাতে সোমবার বিধানসভায় রাজ্যভাগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করানো হলে বটে, তবে তাতে তৃণমূল এবং বিজেপি’র ভণ্ডামি ঢাকা পড়ল না। মমতা ব্যানার্জি যাদের এক সময়ে রাজনৈতিক সঙ্গী করেছিলেন এদিন তাঁদেরই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি বলে সরকারপক্ষের উত্থাপিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখে রাজ্যভাগ চান না বলে দাবি করলেও বিধানসভায় বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেছেন, গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর জন্য মানুষ আমাকে সমর্থন করেছেন। পাহাড়ের মানুষ কী চাইছেন তা জানার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হোক। কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সাহায্য নিয়ে রাজ্য সরকার মানুষের মত জানার চেষ্টা করুক।
এদিনই মেদিনীপুরে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে সাংবাদিকরা এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, গ্রামসভায় চোর ধরো আওয়াজ উঠেছে দেখে তৃণমূল এখন বিধানসভায় রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে। আসলে বিজেপি আর তৃণমূল আবার একটা আবেগের ইস্যু খুঁজছে। গোর্খাল্যান্ডের নামেই হোক, কামতাপুরীর নামেই হোক রাজ্য ভাগের কথা যারা বলছে তৃণমূল এবং বিজেপি তাদের সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি করেছে। জঙ্গলমহল থেকে উত্তরবঙ্গে কোনো রাজনীতিতে তাদের বাদ দেয়নি। বিজেপি মহাচালাক, উত্তরবঙ্গের নেতাদের দিয়ে রাজ্য ভাগের কথা বলাচ্ছিল, নিজেরা প্রকাশ্যে বলছিল না। তৃণমূল তো বিভাজন ছাড়া কিছু জানেই না, কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল করেছে। আর বিজেপি গোটা দেশে মানুষের ঐক্য ভাঙছে। ব্রিটিশরা একবার বাংলা ভাগ করেছে, বাংলার মানুষ আর রাজ্য ভাগ চায় না।
এদিন বিধানসভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা হেমতাবাদের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মণকে দিয়ে রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সহ তৃণমূলের বক্তারা জানকবুল করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলা করে বাংলা ভাগ বন্ধ করবেন বলে ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু সেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই একসঙ্গে মঞ্চে তুলে মমতা ব্যানার্জি কেন মিটিং করেছিলেন, কেন তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক সঙ্গী করেছিল তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। রাজ্য ভাগের দাবি কেউ তোলেননি। অথচ সেই বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় আলোচনায় হচ্ছে।’ যদিও এদিন বিধানসভাতেই কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা সরাসরি রাজ্য ভাগ নিয়ে গণভোটের দাবি তুলেছেন। এর আগে উত্তরবঙ্গের একাধিক বিজেপি’র বিধায়ক সাংসদরাও একই দাবি করেছিলেন।
কোন পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে বিজেপি এবং তৃণমূলের এই চেষ্টা?
এদিন মেদিনীপুরে সাংবাদিকদের কাছে মহম্মদ সেলিম বলেচেন, ইডি সিবিআই’কে আদালত রোজ কড়কাচ্ছে, তারপরে ওরা একটু একটু নড়ছে। কিন্তু খুচরোদের ধরছে। দুর্নীতির তন্ত্রে রয়েছেন পিসি ভাইপো, মুকুল, শুভেন্দু। এই চারজনকে ধরলেই সব ফাঁস হয়ে যাবে। খুচরোয় নজর দিয়ে কী হবে? ইডি সিবিআই ওপরের দিকে নজর দিন। শিক্ষক নিয়োগ থেকে পরিবহণে নিয়োগ, চিটফান্ড থেকে লুটেরাদের সাম্রাজ্য খুলেছিলেন এরা। এদের ধরলেই বাকিদের হদিশ পাওয়া যাবে। শিক্ষক নিয়োগের নামে রাজ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ধংস করা হয়েছে। সিবিআই ইডি’কে বলবো চোর ধরো, তারাতারি ধরো। নইলে চোরেরা যেমন ধমকাচ্ছে, আমরাও তেমন দরকার হলে আবার সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে ধরনা দেব।
কর্মচারীদের ডিএ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, মমতা ব্যানার্জি ত্রিপুরায় গিয়ে বলে এলেন ওখানে নাকি দ্বিগুন ডিএ দিয়ে দেবেন। আর এরাজ্যে বছরের পর বছর ডিএ বকেয়া, ৩৯ শতাংশ ডিএ বাকি। শিক্ষক, কর্মচারী, আধা সরকারি কর্মচারী সবাই মিলে পথে নেমে আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকার আদালতে হলফনামা দিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার কত বড় মিথ্যুক ডিএ মামলায় তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
Md Salim attack tmc bjp on separate state issue
রাজ্য ভাগের কথা যারা বলেছে, তাদের সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি তৃণমূল-বিজেপি’র
×
Comments :0