জয়ন্ত সাহা-কোচবিহার
মণিপুরের দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়েছে। দলবেঁধে এই অপরাধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আমাদের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। গত ৩ মে থেকে মণিপুরে হিংসার আগুন জ্বলছে।
গত ৪ মে নক্কারজনক ঘটনা ঘটলো। ১৮ মে থানায় অভিযোগ দায়ের হল। অথচ, বহু পরে, ২১ জুন বিজেপি সরকারের পুলিশ এফআইআর করল। তারপর সব চুপ। স্যোশাল মিডিয়ায় সেই লজ্জাজনক ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সেখানকার পুলিশ মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করলো! কেন এত দিনেও কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক থেকে ডিজি সাসপেন্ড হল না? কেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ডাবল ইঞ্জিনের সরকার হলে নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়বে। তবে প্রধানমন্ত্রী দায় এড়ান কী করে?
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে মণিপুরের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেন।
মহম্মদ সেলিম বলেন, মণিপুরে তো ডাবল ইঞ্জিন সরকার চলছে। শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয়, প্রধানমন্ত্রীও দায় এড়াতে পারেন না। ন্যক্কারজনক ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়েছে প্রশাসন। মিডিয়াও চুপ করে থাকল। যখন ভিডিও ভাইরাল হলো সোশাল মিডিয়ার, মোদী সরকার তখন বিধিনিষেধ আরোপ করল।’’
সেলিম প্রশ্ন তোলেন, সরকারের কাজ কি সেন্সরশিপ করা? সরকার দাঙ্গাকে রুখবে না, ধর্ষণকে রুখবে না, দুটো মেয়েকে বিবস্ত্র করে প্যারেড করালো সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো না। অথচ দ্রুততার সাথে খবরকে চাপা দিল।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মণিপুরের ঘটনায় কড়া সমালোচনা করেছেন। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকারের জবাবদিহি চেয়েছে শীর্ষ আদালত। এই নির্দেশকে প্রয়োজনীয় আখ্যা দিয়েছেন সেলিম।
এ রাজ্যে বিজেপি’র সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের একাধিক প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘ বিধানসভা ভোটের আগে চালানো ‘নো ভোট টু বিজেপি’ প্রচারের অন্যতম মুখ সামিরুল ইসলাম তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্য হলেন। বিজেপি কিন্তু বিরোধিতা করল না। বিজেপির মোট ৭৭ জন বিধায়ক। একজন প্রার্থীকে জেতানোর জন্য দরকার ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন। অনন্ত মহারাজকে জেতানোর পরেও বিজেপির কাছে ছিল অতিরিক্ত ৩৫ জন বিধায়ক। তার পরেও রাজ্যসভার আসন তৃণমূলকে ছেড়ে দিল বিজেপি।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি আরো মারাত্মক। নিজেদের জোরে রাজ্যসভায় একজন সাংসদ পাঠানোর সুযোগ এবারই পেয়েছে বিজেপি। তবু নিজের দলের কাউকেই প্রার্থী না করে এমন একজনকে (অনন্ত মহরাজকে) বিজেপি রাজ্যসভার টিকিট দিল যিনি তৃনমূলের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। যিনি বাংলাকে ভাগ করার কথা বলেন।’’
সেলিম বলেন, তৃণমূলের এবং বিজেপির সাংসদ বিধায়করা পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত খুন জখম নিয়ে একটাও কথা বলছেন না। এমনকি বিজেপির দার্জিলিংয়ের সাংসদ তার লোকসভা এলাকার চোপড়ায় পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল খুন করলো, ভোটকে প্রহসনে পরিণত করলো, অথচ বিজেপি’র সাংসদকে খুঁজে পাওয়াই গেল না!
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, আমরাও তো চাইনি পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আদালতে এত মামলা হোক। কিন্তু তৃণমূল ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক কাজ করেছে যা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে ভোট গনণা, রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন শাসকের হয়ে কাজ করলো। আইএস, আইপিএসরা তো দিল্লীর নিয়ন্ত্রনে তারাও তো ভোটে অনেক অন্যায়ের সাথে জড়িত। আদালত তাদেরও ডাকছে। কেন্দ্রীয় সরকার তো কারুর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় নি। আসলে আড়ালে ওরা সবাই এক সুতোয় বাঁধা।
সেলিম বলেন, দিল্লীতে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একসাথে বৈঠক করতেই বিজেপির জ্বালা ধরেছে, মোদীজীর জ্বালা ধরেছে। যারা আগে বলতো এনডিএর সরকার, তারাই কিছুদিন আগেও বলতো মোদী সরকার। এখন ৯ বছর পরে ফের এনডিএকে গর্ত থেকে টেনে বের করেছে। এটা এনডিএ নয়, এটা আসলে এগেইন এনডিএ। সংক্ষেপে আন্ডা। দেশ এখন ইন্ডিয়াকে খুঁজছে। স্বাধীনতার ২০০ বছরে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য খুঁজে নিয়েছিল দেশবাসী। বিজেপি সরকারের আমলে সেটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। দেশকে বাঁচাতে হবে। মানুষকে এককাট্টা হতে হবে। জরুরী অবস্থার সময়েও দেশকে বাঁচাতে সবাইকে এক হতে হয়েছিল। ফের সবাই এক হয়ে মিটিং করতেই মোদীজীর গদি কেঁপে উঠেছে।
Comments :0