রবিবার বিসিসিআই’র নতুন সভাপতি মিঠুন মানহাস। রজার বিনির সময়কাল শেষ হওয়ায় তাঁর জায়গায় এলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ক্রিকেট প্রশাসক। ক্রিকেটমহলে জল্পনা চলছে কোন অঙ্কে রাতারাতি বিসিসিআইয়ের সভাপতি এলেন প্রখ্যাত ক্রিকেটার মানহাস। জানা গিয়েছে, শনিবার দিল্লির এক বেসরকারি সভায় নাম ওঠে মিঠুনের। ঘটনাচক্রে সেই বৈঠক হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আমিত শাহের বাড়িতে, তাঁর উপস্থিতিতেই। সেখানেই সভাপতি এবং বোর্ডের অন্য পদের দৌড়ে থাকা সকলকেই আসতে বলা হয়। বৈঠক শেষে মিঠুনের নামে শিলমোহর দেওয়া হয়। মিঠুনের মতো অনামী একজনকে সভাপতি পদে বসানোত নির্বাচনকে ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন! তবে কী মিঠুন কারোর ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে কাজ করবেন?
ওই বৈঠকে সভাপতি নির্বাচনের সঙ্গে সচিব, সহসভাপতি, যুগ্ম সচিব, অ্যাপেক্স কাউন্সিল, আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের মেম্বারদের নামও চূড়ান্ত করা হয়। পুরো কমিটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে অন্য কারও হাতে? ঠিক যেমন রজার বিনির থাকার সময় বোর্ডকে চালনা করতেন বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সচিব জয় শাহ! আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, বিসিসিআইয়ের কর্মসমিতিতেও তিনি নাক গলান বলেই খবর!
বোর্ডের নির্বাচনকে দীর্ঘ দিন কাছ থেকে দেখা এক প্রবীণ প্রশাসক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘বিজেপি নেতৃত্ব কী ভাবে দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদের বেছে নিয়েছে দেখুন। কেউ যদি দাবি করেন তিনি আগে থেকে জানতেন যে রেখা গুপ্ত, মোহন যাদব এবং ভজনলাল শর্মা শীর্ষপদে বসবেন, তা হলে তা অসত্য। কেউ জানতেও পারেননি।’ তাঁর সংযোজন,‘বোর্ডের ক্ষেত্রে, হাতে বিকল্প কম ছিল। মিঠুনের মতো ক্রিকেটার যুগ্ম সচিব হলে ঠিক ছিল। বিশেষ করে যেখানে টেস্ট খেলা একজন (রঘুরাম ভট্ট) কোষাধ্যক্ষের পদ পেয়েছে। যখন ইলেক্টোরাল রোলে তিন জন টেস্ট খেলা ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের মধ্যে দু’জন ১০০-রও বেশি টেস্ট খেলেছে (সৌরভ, হরভজন সিং), তখন মিঠুনের বোর্ড সভাপতি হওয়া বিস্ময়কর।’
ইতিমধ্যেই নতুন ক্রীড়া নীতি এনেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার পর সামনে এসেছে ভারতীয় ফুটবল দলের ক্রমতালিয়ায় উন্নতির বদলে অবনতি। এমনকি সদ্য শেষ হওয়া বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের মঞ্চেও ছ’বছর পর খালি হাতে ফিরছে ভারত। এবার সেই ছবি কি ক্রিকেটেও ফুটে উঠবে?
সৌরভ গাঙ্গুলি, রজার বিনির উত্তরসূরি হয়ে মিঠুনের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বসাটা নিঃসন্দেহে অবাক করার মতো ব্যাপার। ভারতীয় দলের দুই প্রাক্তনের গোটা ক্রিকেটবিশ্বে যে পরিচিতি রয়েছে, তার ধারের কাছে নেই ৪৫ বছর বয়সি প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটারের। প্রায় ২০ বছর ঘরোয়া ক্রিকেট বাদ দিলে ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, পুণে ওয়ারিয়র্স এবং চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলার ফলে যেটুকু পরিচিতি তাঁর। অন্যদিকে, জগমোহন ডালমিয়া, শারদ পাওয়ার, রাজ সিং দুঙ্গারপুরদের মতো দক্ষ প্রশাসক হিসাবেও পরিচিতি নেই। কারণ, জম্মুও কাশ্মীরের ক্রিকেট বোর্ড আপাতত বিসিসিআই নিয়ন্ত্রিত তিন সদস্যের দ্বারা চালিত। তাঁদের একজন মিঠুন। সেই কারণে বিসিসিআই’র বার্ষিক সাধারণ সভাতে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাহলে কোন অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনে ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি পদে মিঠুনকে বসানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
কে এই মিঠুন? মিঠুনের ক্রিকেট জীবনের বেশিরভাগটাই দিল্লিতে। মোট ১৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, তার অধিকাংশই দিল্লির হয়ে। খেলেছেন ১৩০টি লিস্ট ‘এ’ ও ৯১টি টি-২০। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার শূন্য।
রবিবার মুম্বাইয়ে বোর্ডের সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেন মিঠুন। তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজীব শুক্ল। ভারতীয় বোর্ডের সহসভাপতি শুক্ল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিসিসিআই’র নতুন কমিটি তৈরি হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে মিঠুন সভাপতি হবেন। আইপিএল গভর্নিং বডির সভাপতি হচ্ছেন অরুণ ধুমল।’ বোর্ডের সহ সভাপতি আরও জানান, দেবজিৎ সাইকিয়া সচিব, প্রভতেজ সিং ভাটিয়া ও তিনি সহসভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন রঘুরাম ভাট।
BCCI
হাতের পুতুল নতুন সভাপতি মিঠুন

×
Comments :0