প্রবন্ধ
চিকিৎসক দিবস
তপন কুমার বৈরাগ্য
মুক্তধারা
ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রূপকার।
তিনি পয়লা জুলাই ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে পাটনার বাঁকিপুরে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন।১লা জুলাই ১৯৬২খ্রিস্টাব্দে তিনি
কলকাতায় পরলোকগমন করেন।তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু
দিনকে ডক্টর'স ডে হিসাবে পালন করা হয়। দুর্গাপুর,
বিধাননগর,কল্যাণী,অশোকনগর তার নিজের হাতের
সৃষ্ট নগর।তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি ১৯৬১খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ভারত রত্ন পান।
১৯০৬খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
থেকে ডাক্তারী পাশ করার পর লন্ডনে আসেন ডাক্তারী
বিদ্যায় উচ্চ ডিগ্রি লাভের জন্য। এসে দেখেন ভর্তির দিন
পেড়িয়ে গেছে।তিনি খুব ভেঙে পড়লেন।এতো কষ্ট করে
এসেও হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হবে।না তিনি ভেঙে
পড়ার পাত্র নয়।শেষ চেষ্টা করে দেখতেই হবে।
ব্রিটিশরা তখন ভারতবাসীদের ঘৃণার চোখে দেখতেন।
মেডিক্যাল কলেজের কতৃপক্ষদের যাদের কাছেই যান
তারাই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেন।তবুও দমবার পাত্র নয়
বিধানচন্দ্র।তিনি নিরুপায় হয়ে মেডিক্যাল কলেজের
সুপারের কাছে এলেন। সুপার তাঁকে গ্রাহ্যই করলেন
না ।তিনি সেখানেই বারান্দায় রাত কাটালেন। পরেরদিন
সুপার এসে তাঁকে দেখে খুব অবাক হয়ে গেলেন।
বিধানচন্দ্র আবার তাঁকে অনুরোধ করলেন তাঁকে ভর্তি
করার জন্য।এই সময় সুপারের কাছে একজন রোগি
এলেন। সুপার ভাবলেন এই সুযোগ। তাঁকে একটু পরীক্ষা
করা যাক।উত্তর সে নিশ্চয় দিতে পারবে না।আর
উত্তর না দিতে পারলে সে লজ্জায় এই স্থান
পরিত্যাগ করে চলে যাবে।রোগির কাছে বিধানচন্দ্রকে
ডেকে সুপার জিজ্ঞেস করলেন--বলতো ইয়ং ম্যান এই লোকটার
কি রোগ হয়েছে?
বিধানচন্দ্র এক নিমেষে উত্তর দিলেন--উনার বসন্ত হয়েছে।
সুপার বিধানচন্দ্রকে বললেন--ইয়ংম্যান তোমাকে
একদিন অপেক্ষা করতে হবে।তোমার কথা যদি সত্যি
হয় ,তোমাকে অবশ্যই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করবো;
নচেৎ তুমি তোমার দেশে ফিরে যাবে।সুপার ভেবেছিলেন
বিধানচন্দ্রের কথা মিথ্যা হবে।
পরেরদিন দেখা গেল লোকটার গায়ে বসন্তের গুটি বের
হয়েছে।
সুপার বিধানচন্দ্রকে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন--
তুমি কি করে বুঝলে ওর গুটিবসন্ত হয়েছে? সেরকম লক্ষণতো
ওর কোথাও ছিলো না
বিধানচন্দ্র হেসে উত্তর দিলেন--উনার গায়ের গন্ধ শুঁকে।
সুপার তাঁর মেডিক্যাল কলেজে বিধানচন্দ্রকে ভর্তি করে
নিলেন।
বিধানচন্দ্রের ইচ্ছা ছিলো দেশের আপামর জনসাধারণ
চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না।আসুন আমরা
সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নকে সার্থক করে তুলি।তবেই চিকিৎসক
দিবসের সার্থকতা।
Comments :0