যাদবপুরে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের ঘটনা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাব সামনে আসছে তা স্পষ্ট। এসএফআই দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করছিলো ক্যাম্পাসে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
এসএফআই যাদবপুর আঞ্চলিক কমিটির তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে একথাই বলা হয়েছে। এসএফআই বলেছে যে সংগঠন সিসিটিভি’র বিরোধী নয়। তবে একথাও বলেছে যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা যেন অনভিপ্রেত নজরদারিতে পরিণত না হয়।
এসএফআই বলেছে, যেখানে ঘটনা ঘটেছে তার আশেপাশে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ‘স্টেক হোল্ডার’-দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনে আরও সিসিটিভি বসানো যেতে পারে। সিসিটিভি মারফত অপরাধ চিহ্নিত করা যায়, অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়, কিন্তু কোন অপরাধমূলক ঘটনা বা দুর্ঘটনা রোখা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন ক্যাম্পাসে কী করা যায় আর কী করা যায় না সে সম্পর্কে যথাযথ নিয়মাবলী এবং যথোপযুক্ত সংখ্যায় স্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন।
যে পুকুরে ঘটনাটি ঘটেছে দীর্ঘদিন ধরে তার সংস্কার ও তার চারপাশে ফেন্সিং বসানোর দাবিও করেছিল এসএফআই। আরো একাধিক পরিকাঠামগত সমস্যার কথা জানালেও তার কোন সমাধান করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সরকারি অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অর্থাভাব রয়েছে। এসএফআই বলেছে, এটি একটি কারণ বলে আমরা মনে করি। অন্য কারণটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দুরাবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্যের পদটি ফাঁকা পড়ে আছে।
এসএফআই প্রশ্ন তুলেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ফাইনান্স অফিসার এবং তিন ফ্যাকাল্টির ডিন অফ স্টুডেন্টস্ পদে দায়িত্বপ্রাপ্তরা স্থায়ী নন কেন? ২০১১ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলে নেই কেন, সে প্রশ্নও তুলেছে। এই ধরনের ঘটনার পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পরিস্থিতিকেই দায়ী করছে এসএফআই।
এসএফআই দাবি জানিয়েছে যে অবিলম্বে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত সব অংশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তবে নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা যাতে নজরদারিতে পরিণত না হয় তাও মাথায় রাখা জরুরি। ক্যাম্পাসে যে কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাইডলাইন ঠিক করতে হবে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থায়ী নিরাপত্তা রক্ষী এবং মহিলা গার্ড নিয়োগ করতে হবে। স্ট্রিট লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। পুকুর সংস্কার, পুকুরের চারপাশে ফেন্সিং ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
এসএফআই'র বক্তব্য, ক্যাম্পাসের মধ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্বন্ধে নির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলে এ ধরনের অপ্রিয় ঘটনা এড়ানো যেত। এসএফআই যাদবপুর আঞ্চলিক কমিটি বলেছে, রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নয়, এই মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে ছাত্রীটির পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের পাশে দাঁড়ানো। স্বচ্ছ তদন্তের দাবিতে ও ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আন্দোলন গড়ে তোলা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মৃত ছাত্রীর দেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর নিজ বাসভবনে নিমতা মাঝেরহাট ললিত গুপ্তা রোডে। পরিবারের লোকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মন্তব্যসমূহ :0