প্রথমে হয়েছে সরকারি ভাঙচুর। পরের দিনই আর জি কর হাসপাতালে বেসরকারি ভাঙচুর হয়েছে। আর মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থীদের দায়ী করতে চাইছেন। মিথ্যা মামলায় জড়াতে চাইছেন। ধর্ষণ হত্যার দোষীদের আড়াল করা চলবে না। সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাট করা চলবে না। সেই দাবিতে শুক্রবার প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম)। শনিবার রাজ্যজুড়ে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে।
রবিবার কলকাতায় মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ইতিহাসে নজিরবিহীন আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা। প্রতিবাদে রাজ্য, দেশ, বিদেশের মানুষ পথে নেমেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষ্য সরানোর চেষ্টা করছেন। প্রতিবাদীদের সায়েস্তা করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবাদের ঢল নেমেছে মহিলাদের। মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ডাক দিয়েছে। অপরাধীদের শাস্তির ডাক দিয়েছে। এই দাবিতে আন্দোলন চলবে।’’
উল্লেখ্য আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার কক্ষের পাশেই সংস্কারের নামে দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, লিখিত ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়া চলছে কাজ। এখানেই মিলেছিল নিহত চিকিৎসকের দেহ। প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ করছেন চিকিৎসকরাই।
তিনি বলেন, ‘‘এক ধরনের মানুষ আক্রান্তকেই দোষী বানিয়ে দেন। পোশাক, ধর্ম, সম্মানের নামে মেয়েদের অগ্রগতি আটকাতে চান। রামমোহন, বিদ্যাসাগরের আলোকে উজ্জীবিত মহিলাদের নস্যাৎ করতে চান। কিন্তু বাংলা প্রগতিশীল। তাই মেয়েরা দমে না গিয়ে রাতের দখল নিয়েছেন।’’
সিভবিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে কেবল ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অথচ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরাই বলছেন এমন ভয়ঙ্কর আঘাত কোনও একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। সেলিম বলেন, একজনকে শিখন্ডী সাজিয়ে চোখের ওপগর সব লুকাতে চেয়েছিল। দোষীদের আড়াল করতে চেয়েছিল। পারেনি। বাথরুমে প্রমাণ নষ্ট করেছে, ভেঙেছে। হাসপাতালে দুষ্কৃতীরা ঢুকল কি করে? পুলিশ আড়াল দুষ্কৃতীদের আগলেছে। মমতা এখন এই ঘটনার জন্য সিপিআই(এম)-কে দায়ী করেছে। বেহালার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছে। এখন বামপন্থীদের মিথ্যা মামলায় জড়াতে চাইছে।’’
সেলিম দাবি করেছেন আর জি কর হাসপাতালে ঘটনার সময়ে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে জেরা করতে হবে সিবিআই-কে। উল্লেখ্য, এই দাবি বুধবার রাজ্যজুড়ে মহিলাদের ডাকে অসংখ্য জনজমায়েতের প্রায় সর্বত্র উঠেছে। সন্দীপ ঘোষকে হেপাজতে জেরা করার দাবিতে সরব বিক্ষোভরত চিকিৎসকরাও। তাঁদের ওপরও বুধবার রাতে আর জি কর হাসপাতালে হামলা হয়েছে। সেলিম বলেন,‘‘কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে। আগামীকাল রাজ্যে প্রতিবাফ হবে। পরশুদিন গণমিছিল, গণ জমায়েত। কাল মানুষের জমায়েত দেখে ভয় পেয়েছে। মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দিতে চায়। তাঁরা পিছু হটবেন না।’’
আর জি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের দায় যুবসংগঠন ডিওয়াইএফআই’র ওপর চাপাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেলিম বলেন, ‘‘যারা ঢুকেছিল তারা তৃণমূলের কোন গোষ্ঠীর? ব্যারিকেড ছিল পুলিশের। যুবরা তো রাস্তার উল্টোদিকে ছিল। তা’হলে ভাঙলো কি করে? যুবরা ছিল বলেই আগেরদিন ভাঙা যায়নি। তাই রাগ। পুলিশ কেন মিডিয়াকে ঢুকতে দিল না? হাসপাতালের ভিতরের ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট হবে। মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে থেকে চক্রান্ত করছেন। আন্দোলনকে দমাতে পারবে না। সন্দীপ ঘোষ ঘৃণার মুখে পড়ে রয়েছে, তাকে কেন বাচাচ্ছে? ড্রাগ র্যাককেট চালিয়ে দলের তহবিলে টাকা দেয় বলে?’’
মমতা বলেছেন, রাম আর বাম এক হয়ে আরজিকরে হামলা করেছে। সেলিম বলেন, ‘‘হাসপাতালে চোর জোচ্চোরের আড্ডা হয়েছে। বিজেপিকে রাজ্যে মাটি কে পাইয়ে দিয়েছে? এখন চাইছে বামপন্থীদের বদনাম করে বিজেপি-কে জায়গা করে দিচ্ছে। বিজেপির এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলার মুখ আছে? হাথরসের ঘটনা মনে নেই? এখন বামের সঙ্গে রামকে জুড়ে বিজেপি-কে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছেন মমতা।’’
সেলিম বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা তৃণমূলের হাতে মার খেয়েছে। তাদের বলতে হবে তাদের ডিওয়াইএফআই নয়, তৃণমূলের লোক মেরেছে। কাল যারা করেছে, তাদের সবার নাম, বাবার নামা আমরা বের করেছি। তাহলে মিডিয়া, পুলিশ পারছে না এদের কে পাঠিয়েছে খুঁজে বের করতে?’’
Salim on R G Kar
কাল প্রতিবাদ, চলবে বিচারের জন্য লড়াই, জানালেন সেলিম
×
Comments :0