MEDINIPUR SALINE PROTEST

স্যালাইনকাণ্ডে বিক্ষোভ: উত্তাল মেদিনীপুর, পুলিশের লাঠিতে হাসপাতালে ৩

রাজ্য জেলা

পুলিশের আক্রমণে আহত সহকর্মীর শুশ্রূষা।

চিন্ময় কর: মেদিনীপুর

কেউ দু’বোতল জল নিয়ে গেলে কোনও হাসপাতাল স্যালাইন বলে মেনে নেবে? কেউ কাগজের পুরিয়ায় পাউডার নিয়ে গেলে, কোনও হাসপাতালের কোনও ডাক্তারবাবু ওষুধ বলে লিখে দেবেন? কখনো তা হতে পারে? প্রশাসনের যোগ না থাকলে জাল ওষুধের কারবার হাসপাতালে চলতে পারে না। মেদিনীপুরেও জাল স্যালাইন কাণ্ডে বিক্ষোভে এই মর্মে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। 
বুধবার এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেতা ও কর্মীরা স্যালইনে প্রসূতিমৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক দেন মেদিনীপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের দপ্তর অভিমুখে যাওয়ার সময় তাঁদের আটকায় বিশাল পুলিশবাহিনী। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বাধা ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের লাঠিতে গুরুতর আহত হন ছাত্র-যুব-মহিলা কর্মীরা। অভিষেক চ্যাটার্জি এবং দুই ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে মেদিনুপুর মেডিক্যালে। সেখানে গিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
তিন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকরা- এসএফআই’র দেবাঞ্জন দে, ডিওয়াইএফআই’র মীনাক্ষী মুখার্জি এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কনীনিকা ঘোষ ছিলেন বিক্ষোভে। ছিলেন মহিলা সমিতির রাজ্য সভাপতি জাহানারা খানও। পুলিশ এদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের ওপরও। প্রায় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা ছিল জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে। ছিল আরও প্রায় পাঁচশো সিভিক পুলিশ। (দেখুন ভিডিও)
তিনি সংগঠন শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান। মেদিনীপুর শহরের রিঙ রোড কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সারা শহরে রেশ পড়েছে বিক্ষোভের। বিক্ষোভের জেরে জেলাশাসক স্মারকলিপি নিতে বাধ্য হন। প্রতিনিধিদলে ছাত্র-যুব-মহিলা নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ছিলেন চিকিৎসক এবং পিপলস রিলিফ কমিটির সম্পাদক ডা: ফুয়াদ হালিম।  মেদিনীপুরে জাল স্যালাইনকাণ্ডে প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনায় গোড়া থেকেই আন্দোলনে ছাত্র,যুব মহিলারা। তিন প্রসূতিকে এই ঘটনায় নিয়ে আসতে হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেও পরিবারের পাশে থেকেছেন নেতৃবৃন্দ।
জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে 
জাল স্যালাইন কারবারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করেছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের ঘোষণা করেছেন। দায়ের হয়েছে এফআইআর। সাসপেন্ড করা হয়েছে এমন চিকিৎসককেও অপারেশন থিয়েটারে যিনি ছিলেনই না। 
মীনাক্ষী বলেছেন, আরজি কর কাণ্ডে একমাত্র দোষী করা হয়েছে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে। আর স্বাস্ত্যব্যস্থায় সংগঠিত অপরাধচক্রের পাণ্ডাদের আড়াল করা হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে জাল স্যালাইনকাণ্ডেও দোষী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের ওপর।
তিনি মনে করিয়ে দেন, যে ড্রাগ কন্ট্রোল, যেখানে ওষুধের গুনমান পরীক্ষা হওয়ার কথা, সেখানেও রয়েছে শূন্যপদ। 
বিষাক্ত স্যালাইনে মৃত্যুর দায় স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ, জাল স্যালাইন কারবারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হয় জেলাশাসকের দপ্তর অভিযান। সেই দাবি জেলাশাসকের কাছেও জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। 
পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস সংস্থার এই রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের সরবরাহ ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ তুলছেন চিকিৎসকরা। এর আগে রাজ্যের অন্য হাসাপাতলেও এই সংস্থার স্যালাইন নিম্নমানের বলে অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে নভেম্বরে কর্নাটকে এই সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। প্রতিবাদের জেরে রাজ্য জানায় এই সংস্থার উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও জানিয়েছেন যে উৎপাদন বন্ধ হলেও তাঁদের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ পাঠানো হয়নি স্বাস্থ্যভবন থেকে। গোটা ঘটনায় জাল ওষুধ চক্রের কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষস্তরের যোগাযোগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল।
মীনাক্ষী বলেন, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় এই সংস্থার কারখানা। কারখানার বাইরে বোতল বোতল স্যালাইন পড়ে রয়েছে। ভাল স্যালাইন না খারাপ স্যালাইন কেউ জানে না। আর ড্রাগ কন্ট্রোলে লোক কম, চাকরি নেই। ওষুধ তৈরি করা শুরু থেকে ওষুধ ঠিক কিনা জানা, কারা সরবরাহ করবে- এই গোটা ব্যবস্থাকে দুর্নীতির ঘুঘুর বাসাতে পরিণত করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। 
ডা. ফুয়াদ হালিম বিক্ষোভসভায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের এই স্যালাইন ঘিরে গত মার্চ থেকে অভিযোগ জমা পড়ছে। অন্তত ২৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ১৬ বার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে এই সংস্থার রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন শরীরে দেওয়ার উপযুক্ত নয়। তবু এই স্যালাইন চলেছে অপরাধচক্রের দাপটে। তাদের বাঁচাতেই দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকদের ওপর।
ডা: হালিম বলেন, বিষয়টি কেবল একটি স্যালাইন বা একটি হাসপাতালের নয়। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বহু জায়গায় এমন নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ চলছে। পিছনে মদত রয়েছে। আন্দোলন জারি থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment