SSC SCAM BENGAL

যোগ্যদের চাকরি বাঁচানোর কোনও চেষ্টা করছে না রাজ্য বা এসএসসি

রাজ্য

  রাজ্য সরকার এবং এসএসসি যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি বাঁচানোর কোনও চেষ্টা করছে না এবং আগেও করেনি। চাকরি বাঁচানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে এমন কোনও রিভিউ পিটিশন তাঁরা দাখিল করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে রয়েছেন শিক্ষকরাও। কারণ, গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২৫৭৫২ জনের চাকরি বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের মধ্যে আরও অনেকগুলি অংশ ছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশ দেওয়ার পরই তা মেনে নিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। সেদিনই অর্থাৎ ৩ এপ্রিল রাজ্যের শিক্ষা সচিব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উল্লেখ করে এসএসসি-কে চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর স্থির করেছি, দ্রুততার সঙ্গে ফ্রেস সিলেকশন প্রসেস (নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া) শুরু করা হবে।’’ এই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, তার জন্য শিক্ষা সচিব এসএসসি-কে নির্দেশও দেন। আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে নেওয়ার পর ফের সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ পিটিশন) আবেদনের কোনও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। রাজ্য সরকার, এসএসসি বা অন্য যে কেউ রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে পারে। কিন্তু সেই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কারণ, নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে শিক্ষা দপ্তর অনেক আগেই ঠিক করে নিয়েছে। 
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষকদের বলেছেন, ‘‘সব কিছু ঠিক করে দেওয়া হবে।’’ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষকদের ডেকে সভা করে তিনি বলেছেন, ‘‘আপনাদের স্কুলে যেতে কেউ বারণ করেনি। আপনার ভলান্টিয়ারি সার্ভিস দিন। যে কেউ ভলান্টিয়ারি সার্ভিস দিতে পারেন।’’ সেদিন মুখ্যমন্ত্রী এই যোগ্য চাকরিহারাদের কীভাবে বেতন দেওয়া যাবে, সে কথা বলতে পারেননি। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী ‘একটু স্বস্তি’ পেয়েছেন বলেছেন। অন্তত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি চাকরিহারাদের আন্দোলন ঠেকানোর জন্য চিহ্নিত অযোগ্য নন, এমন শিক্ষকদের মাসিক বেতন দিতে পারবেন। শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘‘আমরা সাময়িক স্বস্তি পেয়েছি। আইনের পথ ধরেই এই সমস্যার মোকাবিলা করা হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী যখন একথা প্রকাশ্যে বলছেন, তখন এসএসসি নতুন করে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী জানেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩ এপ্রিলই এই বিষয়ে শিক্ষা দপ্তর এসএসসি-কে নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। চাকরিহারা শিক্ষকদের সহজভাবে কোনও কথা রাজ্য সরকার বলছে না। আইনজীবীদের একটি বড় অংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী ৩১ মে’র মধ্যে নতুন নিয়োগের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে, সেখানে কিছু ফাঁক এবং ত্রুটি রাখা হবে, যে বিজ্ঞপ্তি আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নতুন মামলা হতে পারে। কলকাতা হাইকোর্টে সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ হলে রাজ্য সরকার মামলার অজুহাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেরি হবে বলে আবেদন করার সুযোগ গ্রহণ করবে। এইভাবে বিষয়টিকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টেনে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। 
এদিকে, মধ্য শিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে তাদের আবেদন জানিয়েছিল। পর্ষদের দায়ের করা ১১ পাতার আবেদনেও কোথাও যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল না। পর্ষদ চেয়েছিল, রাজ্যের স্কুলগুলি চালু রাখতে চলতি শিক্ষাবর্ষে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ নন, এমন শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীর ভাষণের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার নিদারুণ দশা উল্লেখ করেই সুপ্রিম কোর্টে পর্ষদ এই আবেদন জানিয়েছিল। সেখানে চাকরি রক্ষার কোনও আরজিই ছিল না। পর্ষদের সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ১৭ এপ্রিল নির্দেশ দিয়েছে, ‘দাগি বা টেইন্টেড’ নন, এমন শিক্ষকরা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, তবে কোনও আইনি অধিকারের দাবি জানাতে পারবেন না। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে পর্ষদ এবং কমিশনকে। 
কিন্তু গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদের নিয়োগ বাতিলই থাকবে। কারণ, এখানেই সবথেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডোরের সভায় দাবি করলেও পর্ষদের যে আবেদনে সুপ্রিম কোর্ট সাড়া দিল, তাতে আদপেও এই দুর্নীতিতে ভরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারও চাকরি স্থায়ীভাবে রাখার আরজি ছিল না। আসলে রাজ্য সরকার এবং শিক্ষা দপ্তর অনেক আগেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ‘ফ্রেস সিলেকশন প্রসেস’ বা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment