অনিন্দ্য হাজরা
অনেক দেরি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রায় দেড় মাস আগেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি সরকারের তরফে।
অ্যাডিনো রোধে মঙ্গলবার একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য। সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করতে ছাড়ছে না চিকিৎসক মহলের একাংশ। তাঁদের দাবি, রাজ্য প্রথম থেকেই এই বিষয়ে ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে চলছিল। একই সুর বিরোধীদেরও।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রায় দেড়মাস আগে প্রথম অ্যাডিনো সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয় রাজ্যে। আর গত দেড় সপ্তাহ ধরে মহকুমা থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতাল- প্রতিটি হাসপাতালের শিশু বিভাগেই ভিড় উপচে পড়ছিল আক্রান্ত শিশুদের। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের তরফে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সমস্যা মোকাবিলার কাজ শুরু করা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘‘দেড় মাস ধরেই শিশুদের মধ্যে জ্বরের খবর আসছিল। কিন্তু সেই সংক্রমণ অ্যাডিনো ভাইরাসের জন্যই কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনও উপায় নেই। কারণ এ রাজ্যের হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে আরটিপিসিআর টেস্টের মাধ্যমে অ্যাডিনো ভাইরাসের হদিস পাওয়া যায়। টেস্টের পরিকাঠামোর বৃদ্ধি না ঘটায় এই সংক্রমণ অ্যাডিনো কিনা সেটা বোঝা সম্ভব হয়নি।’’
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোভিডের মতোই অ্যাডিনো ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। মূলত উপসর্গের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আরটিপিসিআর টেস্ট করে লাভ কী?
এর উত্তরে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ভাইরাস অ্যাডিনো কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া গেলে ভাইরাস রোধী সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব। তাঁদের অভিযোগ, সেই কর্মসূচির অভাবেই এই বাড়বাড়ন্ত।
সুবর্ণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি বলেই এই সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। আর সম্ভব হয়নি বলেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়ে গিয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে অ্যাডিনো আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ শিশু। এই প্রসঙ্গে সুবর্ণ গোস্বামীর ক্ষোভ, ’’জ্বর হলেই শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর কিংবা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। জ্বর-সর্দি নিয়েও শিশুরা ১৫ দিন স্কুলে গিয়েছে। মেলামেশা করেছে। সেই সুযোগে ভাইরাসও অবাধে ছড়িয়েছে। এই সময়ে সরকারের স্কুলে নির্দেশিকা পাঠিয়ে শিক্ষকদের বলা প্রয়োজন ছিল, কোনও শিশুর জ্বর কিংবা সর্দি হয়েছে বুঝলেই তাকে বাড়ি পাঠান। কিন্তু নির্দেশিকার অভাবে সেটা করা সম্ভব হয়নি। আর তাই হাসপাতালগুলির শিশু বিভাগ উপচে পড়ছে।
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, অ্যাডিনো ভাইরাস কোভিডের মতো স্পর্শ থেকে ছড়ায়। সুইমিং পুল কিংবা পুকুর থেকেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু এখনও কলকাতার সুইমিং পুলগুলি খোলা রয়েছে। সেখানে সরকারের তরফে নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলা হয়নি, অসুস্থ শিশু দেখলেই তাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। ২-৩ সপ্তাহ ধরে বাড়াবাড়ি চলেছে। স্রোতের মতো শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে। এবং সেই প্রবণতায় রাশ না টানা গেলে অ্যাডিনো সংক্রমণ মহামারির আকার নিতে পারে।
কিন্তু সরকারের তরফে নির্দেশিকা দিতে এত দেরি হল কেন? এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)'র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘অ্যাডিনো সংক্রমণ ঘিরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটা জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে। বেড মিলছে না। আইসিসিইউ না মেলার অভিযোগও সামনে আসছে। কিন্তু তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী, যিনি কিনা এই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তাঁর কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি এখন সিভিক ভলান্টিয়ারদের সামনে কনস্টেবল হওয়ার টোপ ঝোলাতে, এবং মেঘালয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে ব্যাস্ত। এ রাজ্যের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ নেই। শিশুমৃত্যুও রোধ করা যাচ্ছে না।’’
Comments :0