Editorial

বিজেপি’র আসাম মডেল

সম্পাদকীয় বিভাগ

আরএসএস-বিজেপি’র শাসনে একদা মডেল রাজ্য হিসাবে বিবেচিত হতো নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট। সেই মডেল গুজরাট গোটা দুনিয়ার সামনে কুখ্যাত হয়েছিল ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সবচেয়ে পৈশাচিক, সবচেয়ে অমানবিক গুজরাট দাঙ্গার কল্যাণে। অনেক বছর পর সেই মডেল রাজ্যের মুকুট কেড়ে নিয়ে উত্তর প্রদেশের মাথায় বসাতে প্রতিযোগিতায় নামে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। একদিকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ অন্যদিকে দলিত-আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছাচারের মাধ্যমে সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে উত্তর প্রদেশ। লাভ জিহাদ, পরিবারের সম্মান রক্ষা ইত্যাদি নানা ঠুনকো অজুহাত তুলে সংখ্যালঘু ও দলিত বিদ্বেষী আরএসএস-বিজেপি সরকার ধারাবাহিকভাবে বিভাজন ও মেরুকরণের কুৎসিত ও কদর্য রাজনীতিকে পুষ্ট করেছে। যোগী রাজ্যই বুলডোজার নীতি চালু করেছে মুসলিম-দলিতদের বাসস্থান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক মোড়কে পরিবেশন করা হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। এই উত্তর প্রদেশই এনকাউন্টারের নামে বিচারের আগে অভিযুক্তকে খুন করায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিচার ব্যবস্থাকে ঠুঁটো করে সরকারের নির্দেশে পুলিশই সাজা দিচ্ছে অভিযুক্তকে। এই উত্তর প্রদেশ থেকেই উন্নাও-হাথরাসের ঘটনা একটা নিকৃষ্ট সরকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে সারা বিশ্বে।
এবার যোগীর উত্তর প্রদেশকে টেক্কা দিয়ে এক নম্বর মডেল হতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আর একটি বিজেপি শাসিত রাজ্য আসাম। হিমন্ত বিশ্বকর্মার নেতৃত্বে আসাম সরকার মোদী রাজ্য ও যোগী রাজ্যকে ফিকে করে দিয়ে হিংস্রতায়, বর্বরতায়, অমানবিকতায়, নিষ্ঠুরতায় শিরোনামে উঠে আসতে চাইছে। হিমন্ত বুঝে গেছেন স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আসামে ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। ক্ষমতায় থাকতে হলে ভোটে জিততে হলে সংবিধানকে শিকেয় তুলে, গণতন্ত্রকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে, ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে পদদলিত করে উচ্চ গ্রামে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে হবে। রাজ্যের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (মুসলিম) এবং ভাষিক সংখ্যালঘু (বাংলাভাষী)-দের বিরুদ্ধে যত আক্রমণ করা যাবে, যত ঘৃণা ছড়ানো যাবে ততই বিভাজনকে স্পষ্ট ও তীক্ষ্ণ করা যাবে। হিন্দুদের ও অসমীয়া ভাষীদের যত বেশি মুসলিম ও বাংলাভাষীদের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া যাবে, যত বেশি প্রাদেশিকতাকে সামনে আনা যাবে তত বেশি বিভাজন ও মেরুকরণ সম্ভব হবে। আর তাতেই এই দুর্নীতিগ্রস্ত, অপদার্থ সরকার ক্ষমতায় থাকা সহজ হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের পরিবার অবৈধ পথে বিপুল সম্পদ লুট করেছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে। সমস্ত ধরনের অপরাধ প্রবণতা যেমন বেড়েছে তেমনি অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ধর্ষণ, খুন, নির্যাতন হু হু করে বাড়ছে। রাজ্য সরকারের পদে পদে টার্গেট ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। এতদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে যত্রতত্র মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতেন। এখন তিনি সব সীমা লঙ্ঘন করে বিধানসভার মধ্যে বুক বাজিয়ে নিম্ন আসামের মুসলিমদের উজান আসামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করছেন। সাধারণ ধর্ষণ খুনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করছেন। অভিযুক্ত সংখ্যালঘু হলে এনকাউন্টারে খুন করা হচ্ছে। বুলডোজার চালিয়ে মুসলিমদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সংবিধানকে অবমাননা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর পদের সাংবিধানিক মর্যাদা কলুষিত করা হচ্ছে। এহেন সরকার এবং তার মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার থাকতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এহেন ব্যক্তিকে বরখাস্ত করাই যথেষ্ট নয়, তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত।
 

Comments :0

Login to leave a comment